২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

৩০ বছর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করা ছানা উল্লাহ ‘অবৈধ বাংলাদেশী’ হিসেবে গ্রফতার

অভিযোগ
প্রকাশিত মে ৩১, ২০১৯
৩০ বছর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করা ছানা উল্লাহ ‘অবৈধ বাংলাদেশী’ হিসেবে গ্রফতার

অভিযোগ ডেস্কঃ ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধে (ভারত-পাকিস্তান) ভারতীয় সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন মোহাম্মদ ছানা উল্লাহ। জীবনবাজি রেখে লড়েছিলেন ভারতের জন্য। ১৯৮৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর চাকরি করেছেন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে। অবসর নিয়েছেন একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে।অবসরের পর আসাম পুলিশের সীমান্ত শাখায় এএসআই হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। সেই সাবেক সেনাকর্মকর্তা ছানা উল্লাহকে একজন অবৈধ বাংলাদেশী হিসেবে চিহিৃত করে গ্রেফতার করেছে ভারতের আসাম রাজ্য পুলিশ। গত মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করা হয়ে বলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর।

দ্য হিন্দু অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫২ বছর বয়সী ছানা উল্লাহ আসাম পুলিশের সীমান্ত শাখায় এএসআই হিসেবে সন্দেহভাজন নাগরিক ও অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত, আটক, বিতাড়নের মতো কাজ করতেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আজ তাকেই ‘বিদেশি নাগরিক’হিসেবে চিহ্নিত করে জেলে পাঠানো হলো।

ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঙ্গলবার ছানা উল্লাহকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করেন। এই রায়ের পরই আসাম বর্ডার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। তাকে বিদেশি বা অবৈধ অভিবাসীদের বন্দিশিবিরে রাখা হয়।

রায়ের বিরুদ্ধে বুধবার ছানা উল্লাহর পরিবার গুয়াহাটির হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। সানা উল্লাহর আত্মীয় মোহাম্মদ আজমল হক বলেন, এত বছর দেশের সেবার পর এই প্রতিদান পেলে তার চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কিছুই হতে পারে না। কারগিল যুদ্ধে অংশ নেয়াসহ ৩০ বছর সেনাবাহিনীতে থেকে দেশ রক্ষার জন্য এই পুরস্কার।

আজমল জানান, ছানা উল্লাহর জন্ম আসামে, ১৯৬৭ সালে। ২০ বছর বয়সে ১৯৮৭ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ৩০ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। ২০১৭ সালে অবসরে যান। অবসরের পর যোগ দেন বর্ডার পুলিশে।

রাজ্যের বকো ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল গত বছর সানাউল্লাহকে নোটিশ দেন। তিনি পাঁচটি শুনানিতে অংশ নেন। ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে একবার ছানা উল্লাহ ভুল করে বলেছিলেন, তিনি ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। এই ভুলের ওপর ভিত্তি করেই তাকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করেন ট্রাইব্যুনাল। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন সানাউল্লাহ।

আজমল বলেন, সেনাবাহিনীতে সানাউল্লাহ সব প্রমাণপত্র আছে। মুখ ফসকে বলা ভুলকে প্রমাণ হিসেবে ধরা যায় না।

সানাউল্লাহ ‘বিদেশি’চিহ্নিত হওয়ার তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলের নাম জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে পরিবারটির সদস্যদের আশা, তারা উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন।

আসামের নিউজ লাইভ টিভিতে বুধবার ছানা উল্লাহকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করা হয়। এই প্রতিবেদনে ছানা উল্লাহর স্কুল, কলেজ তথা শিক্ষা জীবনের সার্টিফিকেট এবং তার চাকরি জীবনের নানা কৃতত্ব তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ছানা উল্লাহ ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর চাকরি করেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। ২০১৭ সালে ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন তিনি। মঙ্গলবার অবৈধ বাংলাদেশী হিসেবে গ্রেফতারের পর বুধবার তাকে ডিটেনশন সেন্টারে নেয়া হয়। এ সময় ছানা উল্লাহ নিজেকে একজন ভারতীয় হিসেবেই বার বার নিজেকে তুলে ধরেন। বলেন ‘আমি একজন ইন্ডিয়ান, ইন্ডিয়ান হয়েই থাকব।’

নিউজ লাইভের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২৫০-৩০ বছর বয়সি একজন মেয়ে (সম্ভবত ছানা উল্লাহর কন্যা)বলছেন,..অভিযোগ হলো এনআরসিতে তার নাম নাই। বিদেশি হিসেবে চিহিৃত হয়েছে। ইন্ডিয়ান সরকার তাকে (ছানা উল্লাহ) কৃতিত্বের জন্য প্রাইজ দিয়েছে। অথচ বিদেশি হিসেবে গ্রেফতার..বহু দু:খের কথা। কী বলবো…? কেঁদে ফেলেন তিনি।

ছানা উল্লাহর গ্রেফতারের খবরের প্রতিক্রিয়ায় কেঁদে দেন এক বৃদ্ধ আত্মীয়। তিনি বলেন, সে (ছানা উল্লাহ) ৩০ বছর ভারতের সেনাবাহিনীতে দিল্লী, কাশ্মিরসহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেছে। এখন বলা হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশী। বলেই কাঁদতে থাকেন তিনি। নিউজ লাইভ টিভির প্রতিবেদনে ছানা উল্লাহর আসামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া করার সার্টিফিকেট, ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ভারতীয় সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশন অফিসার হিসেবে পদোন্নতিসহ নানা প্রমাণপত্র তুলে ধরা হয়। গ্রামবাসীর একজন প্রতিক্রিয়ায় জানান, ৩০ বছর ধরে দেশমাতৃকার জন্য (ভারত) কাজ করেছেন ছানা উল্লাহ। পাকিস্তান বর্ডারে দীর্ঘদিন নিজের জীবনবাজি রেখে দেশের সেবা করেছেন। সেই তাকে একজন বিদেশি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরচেয়ে দু:খের বিষয় আর নেই। আরেকজন গ্রামবাসী বলেন, ছানা উল্লাহর গ্রেফতারে প্রত্যেকের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে।এখন বর্ডার পুলিশে কাজ করছে, আগে আর্মিতে কাজ করেছে এতোগুলো বছর। সেই কেমনে বিদেশি হয়?

দীর্ঘ ৩০ বছর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করা ছানা উল্লাহকে অবৈধ বাংলাদেশী হিসেবে গ্রেফতার করায় বহু প্রশ্নের জম্ম দিয়েছে বলেও নিউজ লাইভের খবরে বলা হয়। যদি তিনি অবৈধ বাংলাদেশী হয়ে থাকেন তাহলে কিসের ভিত্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি হলো? দীর্ঘ ৩০ বছর চাকরি করলেন কীভাবে দেশ মাতৃকার জন্য? এসব প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয় নিউজ লাইভের প্রতিবেদনে।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031