Sharing is caring!
কলকাতা ব্যুরো : ভারতের সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হুঙ্কার দিয়েছিলেন, গোটা দেশেই হবে এনআরসি। বলাই বাহুল্য সেই হুঙ্কারের পর ভারতের নানা প্রান্তে বিশেষ করে বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গে আতঙ্ক আবার নতুন করে তীব্র আকার ধারণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলন। বিরাট আকারে আন্দোলনে নেমেছে নাগরিকপঞ্জী বিরোধী যুক্তমঞ্চ। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা পাহাড় থেকে সাগর নাগরিকপঞ্জী বিরোধী পদযাত্রা শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো বোমা ফাটিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। তার একটি মন্তব্য সম্প্রতি ভাইরাল হয়ে গেছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বাবা, আমার আত্মীয়রা সকলে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। ত্রিপুরায় যদি এনআরসি হয়, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে আমার। আমার মুখ্যমন্ত্রীর পদই চলে যাবে। আমি কি বোকা যে মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারিয়ে ত্রিপুরায় এনআরসি চালু করব?’
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের এই ভিডিও সামনে এসেছে। এই ঘটনায় তার নিজের দল বিজেপির মুখ যে ভালমতোই পুড়েছে, তাতে কোনো সন্দেহই নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি পশ্চিমবঙ্গের নেতারা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর কেউ কেউ তাকে নাগরিকত্ব বিলের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। যে বিলের সমর্থনে অমিত শাহ-সহ বিজেপির নেতারা বলে চলেছেন, হিন্দু শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। আবার অনেকে তার এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপির কড়া সমালোচনা করছেন। জানা গেছে, চলতি সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গের তিনটি আসনে উপ-নির্বাচনে প্রচার করতে কালিয়াগঞ্জে এসেছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি এই মন্তব্য করেন। এই বিপ্লব দেবই অবশ্য লাগামহীনভাবে অবান্তর কথা বলে যাওয়ার জন্য এরইমধ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বেশ কয়েকবার ধমক খেয়েছেন।
বিপ্লব দেবের মিডিয়া অ্যাডভাইজার অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলেছেন। তার দাবি, কোনো কারণ ছাড়াই বিপ্লব দেবের মুখে এই ধরনের অসম্পূর্ণ বক্তব্য এভাবে মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আসলে বলতে চেয়েছিলেন, নাগরিকত্ব বিল এবং এনআরসি আসলে ভারতীয়দের রক্ষার্থেই ব্যবহার করা হবে। তবে বিপ্লব দেবের এই বক্তব্য যে যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ, সেকথা মানছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকেই।
এদিকে আগামী ৮ ডিসেম্বর কলকাতায় এসে পৌঁছচ্ছে পাহাড় থেকে সাগর এনআরসি-বিরোধী যাত্রা। আগামী ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় হবে নাগরিক পঞ্জী বিরোধী যুক্তমঞ্চের মহাসমাবেশ। মঞ্চের তরফে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) জানানো হয়েছে, যাত্রাপথের যেখানেই সমাবেশ হয়েছে, সেখানেই এনআরসির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে একগুচ্ছ দাবি।
দাবিগুলো হল, আসামের এনআরসি-ছুট ১৯ লাখ মানুষের জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা নির্বিশেষে ভারতের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে। ডিটেনশন ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। ভারতে এনপিআর এবং এনআরসি চালু করার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ২০০৩ সালের উদ্বাস্তুবিরোধী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিল করতে হবে এবং ভারতে বসবাসকারী সকলের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করতে হবে।
মঞ্চের অন্যতম নেতা রতন বসু মজুমদার জানিয়েছেন, পাহাড় থেকে যতই সমতলে আসছে যাত্রা, ততই এ কলেবর স্ফীত হচ্ছে। এনআরসি সম্পর্কে বিজেপি সরকার যে আতঙ্ক মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে, তার জেরেই এখন এককাট্টা হচ্ছে মানুষ। তিনি আরও বলেন, সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে চলেছে কলকাতার সমাবেশে।