২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কাতারে বালাদনার বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ২৮, ২০১৯
কাতারে বালাদনার বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা

Sharing is caring!

মারুফ রানা দোহা কাতার থেকেঃ ২০১৭ সালের ৫ জুন। কোনো পূর্বঘোষণা ও যৌক্তিক কারণ এবং সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়া কাতারের সঙ্গে সব ধরণের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় প্রতিবেশী দেশ সৌদিআরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসর। ক্ষণিকের জন্য স্তম্ভিত হয়ে পড়ে আঞ্চলিক সম্পর্ক।

কাতারের স্থানীয় বাজারে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা খাদ্যপণ্যের আমদানি ও বিক্রি। কিন্তু মুহূর্তে পরিস্থিতি সামলে নেয় কাতার। দ্রুততম সময়ে ভিন্ন বাজার খুজে নিয়ে সেখান থেকে আমদানি অব্যাহত রাখে কাতার।

এমন দুঃসময়ে সামনে চলে আসে কাতারের স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনের বিষয়টি। পরনির্ভরতা ছেড়ে স্বনির্ভর হওয়ার পথে সাহসী সিদ্ধান্ত নেয় কাতার কর্তৃপক্ষ। যাত্রা শুরু করে কাতারের স্থানীয় খাদ্য উৎপাদক কিছু প্রতিষ্ঠান। এই ধারাবাহিকতায় পুরোদমে উৎপাদন ও বাজারজাত কার্যক্রম শুরু করে কাতারের প্রতিষ্ঠান বালাদনা।

বালাদনা অর্থ আমাদের দেশ। অর্থবহ এই নামের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সর্বশক্তি ব্যয় করতে মাঠে নামে বালাদনা সংশ্লিষ্টরা। আজ দু বছরের বেশি সময় ধরে এর সুফল দেখতে পাচ্ছেন কাতারের নাগরিক ও বিদেশিরা। বালাদনার সাফল্যে আজ প্রতিবেশী দেশগুলোর খাদ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ভুলতে বসেছেন কাতারের ক্রেতারা।

বরং বালাদনা এখন কাতারের সীমানা পেরিয়ে অন্য প্রতিবেশী দেশে পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে সগৌরবে। বালাদনার তৈরি পণ্য এখন রপ্তানি হচ্ছে ওমান, আফগানিস্তান এবং ইয়েমেনে। খুব শিগগিরই লিবিয়াসহ আরও কিছু দেশ যোগ হবে এই তালিকায়। এসবের পাশাপাশি বালাদনা মুরগি, ডিম ও মুরগির মাংস বাজারজাত করার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য তৈরির মাধ্যমে প্রথমে বাজারে আসে বালাদনার উৎপাদিত খাদ্যপণ্য ও পানীয়। এরপর ফলের রস এবং আরও অন্যান্য খাবারের সামগ্রীও যুক্ত হয় এই তালিকায়। কাতারের রাজধানী দোহা থেকে উত্তর দিকে ২৪ লাখ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নির্মিত হয়েছে বালাদনা প্রতিষ্ঠানটি।

দুধ উৎপাদনের জন্য বিদেশ থেকে আনা গরুর দেখভাল ও সেগুলো লালন পালনের জন্য রয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার ও একদল দক্ষ কর্মী। বর্তমানে বালাদনার খামারে রয়েছে ২৪ হাজার গাভী। এসব গাভীর সুষ্ঠু পরিচর্যার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত জায়গা ও বিচরণ ক্ষেত্র।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিদিন এসব গাভী থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ দুধ এবং এই দুধ সরাসরি বিক্রি হচ্ছে কাতারজুড়ে শ শ সুপারমার্কেটে। পাশাপাশি দুধ থেকে তৈরি হচ্ছে পনিরসহ নানা ধরণের মিষ্টান্ন।

বালাদনা প্রতিষ্ঠানটির গ্রুপ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুতাজ আলখাইয়াত। ভাইস চেয়ারম্যান এবং গ্রুপ সিইও হিসেবে আছেন রামিজ আলখাইয়াত। এক্সিকিউটিভ টিমে আছেন গ্রুপ চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কামেল আব্দুল্লাহ এবং সিইও হিসেবে ম্যালকম জর্ডান।

প্রতিদিন বালাদনায় গাভী থেকে দুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায়। চক্রাকারে প্রতি আট মিনিটে ১০০ গাভীর দুধ সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে এ কারণে। এসব পশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় আছে সব ধরণের সুব্যবস্থা। বর্তমানে বালাদনায় উৎপাদিত হচ্ছে ফ্রেশ মিল্ক, লাবান এবং আইরান (আরবীয় দুগ্ধজাত পানীয়), দই, পনির, লাবনাহ, ক্রিম, মিষ্টান্ন এবং ইউএইচটি।

দুধ ও দুধের তৈরি পানীয় এবং খাবারসামগ্রীর পাশাপাশি ফলের রস উৎপাদন করছে বালাদনা। শতভাগ খাঁটি এবং কোনো ধরণের চিনি, রং ও প্রিজারভেটিভ মেশানো ছাড়া তরতাজা ফলের রস গ্রাহকদের হাতে পৌছে দিচ্ছে বালাদনা। বর্তমানে বালাদনার উৎপাদিত ছয় ধরণের ফলের রস বিভিন্ন আকারের বোতলে পাওয়া যাচ্ছে কাতারজুড়ে।

এসবের মধ্যে রয়েছে আপেল, কমলা, আনারস, ডালিম, ট্রপিকাল মিক্স, এবং ফ্রুট মিক্স।
কাতারের স্থানীয় খাদ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী করাই বালাদনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কাতারবাসীর পুষ্টিচাহিদা পূরণ করার এই প্রচেষ্টায় সবার কাছে সর্বোচ্চ মানের খাদ্যপণ্য পৌঁছে দিতে চায় বালাদনা।

বর্তমানে বালাদনা প্রতিষ্ঠানটির এলাকায় নির্মিত হয়েছে বালাদনা রেস্তোঁরা, পার্ক এবং অন্যান্য মনোরম স্থাপনা। যে কেউ চাইলে ঘুরেও আসতে পারেন বালাদনা খামার এবং এসব স্থাপনা থেকে।