অভিযোগ ডেস্ক : আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং সেচ্ছাসেবক লীগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে বিতর্কিত এবং অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে তথ্য নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, এ তালিকা প্রণয়নের কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। আর এই তালিকা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। প্রাথমিকভাবে তালিকায় থাকা ওই অনুপ্রবেশকারীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
ডিএমপির একাধিক উপ-পুলিশ কমিশনার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা পৃথকভাবে বলেন, আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে অনুপ্রবেশ করা নেতা-কর্মীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ডিএমপির এক দল চৌকষ গোয়েন্দা দল।
২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত দলে অনুপ্রবেশকারী নেতা-কর্মীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) নাজমুল আলম বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী বুঝি না, আওয়ামী লীগে জুয়া, ক্যাসিনো, মাদক, টেন্ডারবাজ যারা আছে তাদের তালিকা করছি আমরা। তবে তারা অন্যদল থেকে অনুপ্রবেশকারী কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে গত ২২ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশকে দলে অনুপ্রবেশকারীর তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়। এর পর থেকে এই তালিকা প্রণয়নের জন্য প্রত্যেক থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই মতে, শুধু আওয়ামী লীগ নয়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে অনুপ্রবেশকারীদেরও তালিকা করা হচ্ছে।
২২ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ডিএমপির পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো এক চিঠিতে জানান হয়, ২০০৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট ও তাদের অঙ্গ সংগঠন থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে তাদের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
তালিকা তৈরির সময় যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে- সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম এবং পদ-পরিচয়। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কিংবা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের নাম-ঠিকানা ও দলীয় পরিচয় চিহ্নিত করা। আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া এসব সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজের আগের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি- না। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা থাকলে তার বিবরণ। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের আগের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতার নাম, পদ-পদবি ও পরিচয়। তাদের বর্তমান আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতার নাম-ঠিকানা এবং তাদের বর্তমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিবরণ।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন এমপি এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশে শুদ্ধি অভিযান চলছে। সেই শুদ্ধি অভিযানে দলের ভেতর ঘাঁপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। কেননা যারা বিএনপির সময় বিএনপির সুবিধা নিয়ে এখন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে ভিড়েছে তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করা দরকার।
আফসারুল আমিন বলেন, ফ্রীডম পার্টি করে আসা লোক হয়তো কোনও কারণে নিজের স্বার্থে আওয়ামী লীগে ভিড়তে পারে কিন্তু সে কোনও দিনই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী হতে পারে না। সুন্দর অট্টালিকায় যদি দুর্গন্ধ থাকে তাতে কেউ প্রবেশ করতে আগ্রহী হয় না। তেমনি দলের ভেতর আগাছা থাকলেও দলে অস্বস্তি বিরাজ করে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির সদস্য ও সাবেক এক ছাত্রনেতা বলেন, উদ্যোগটি অবশ্যই ইতিবাচক, যারা দলের দুঃসময়ের কর্মী তাদের জন্য। কেননা দলের সুসময়ে অন্যদল থেকে আসা লোকজনের কারণেই নানা সময়ে দল বিতর্ক হচ্ছে। এখন সময় এসেছে তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া।