২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

খুলনা-মোংলা থেকে ট্রেন যাবে ভারত-নেপাল – ভুটান,খুলনা হবে বৃহত্তর অর্থনৈতিক জোন

অভিযোগ
প্রকাশিত আগস্ট ১২, ২০২০
খুলনা-মোংলা থেকে ট্রেন যাবে ভারত-নেপাল – ভুটান,খুলনা হবে বৃহত্তর অর্থনৈতিক জোন

 

মোঃ জাহান জেব কুদরতী,বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি:

খুলনা-মোংলা নির্মাণাধীন রেললাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর সমুদ্র বন্দর মোংলার সঙ্গে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপন সম্ভব হবে।এতে সার্ক মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট স্থাপনের মাধ্যমে ভারত,নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে মালামাল আমদানি- রপ্তানী বাণিজ্য করা যাবে।

 

এছাড়া সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার,দেশের শিল্প ও বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্যতা হ্রাস, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটক যাতায়াত সহজ,নিরাপদ ও আরামদায়ক হবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে এবং খুলবে খুলনা অঞ্চলের অর্থনীতির দরজা, বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

আই,এম,ইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। পরে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়।

 

অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত দ্বিতীয়বার মেয়াদ বাড়ানো হয়। তৃতীয়বার আরো দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। বর্তমানে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।

 

অন্যদিকে, ভারতীয় ঋণের (এল.ও.সি)এর আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল এক হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

 

এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫১৯ কোটি ৮ লাখ টাকা, ভারতীয় ঋণ থেকে এক হাজার ২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা। প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

 

এক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৪৩০ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণের দুই হাজার ৩৭১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পটির মোট ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১২০.৮৫ শতাংশ।

 

আই.এম.ইডি বলেছে-উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডি.পি.পি) অনুযায়ী ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল ৮৭ শতাংশ।

 

কিন্তু বর্তমানে গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬৩.০১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৫.৫৪ শতাংশ। করোনার কারণে প্রকল্পের কাজ থমকে আছে।

 

জানা গেছে-মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের জমি সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি ও প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির সভায় আলোচনা হয়।

 

বাংলাদেশ রেলওয়ে বা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভবিষ্যতে ডিপিপি সংশোধনকালে মোংলা বন্দরের ৯০ দশমিক ১২ একর ভূমি মূল্য কিংবা রেল মজুতকরণের ভাড়া বাবদপ্রাপ্ত অর্থের সংস্থান রাখার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে বলে বিভিন্ন সময়ে পিইসি সভার আলোচনায় উঠে এসেছে।

 

যদিও প্রকল্প অফিস পরবর্তী সময়ে জমির মূল্য পরিশোধের অর্থ সংস্থান রাখবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু রেল মজুতকরণের ভাড়া বাবদ অর্থ পরিশোধ করবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান “ইরকন”।

 

খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের ফলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের রেল সংযোগ তৈরি হবে।এ প্রকল্পের রূপসা রেল সেতুটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু।

 

২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান।

 

২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেল সেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃতোফাজ্জেল হোসেন।

 

খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ রেল সেতু, রেল লাইন এবং টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যাল এই তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে।খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত আটটি স্টেশন হচ্ছে।

 

স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলতলা,আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মোংলা।

 

খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরমধ্যে রেললাইনের জন্য এক হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং সেতুর জন্য এক হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড ট্রাব রূপসা নদীর ওপর মূল রেল সেতুর কাজ সম্পন্ন করছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) জনাব মোঃগিয়াস উদ্দিন বলেন-চলমান খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

 

প্রকল্প পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন-করোনার কারণে এখন কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে প্রকল্পটির বেসিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

 

আশা করছি বাস্তবায়নের আর বেশি ঝামেলা হবে না। এ প্রকল্প সমাপ্ত হলে খুলনা তথা বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।।

Please Share This Post in Your Social Media
May 2024
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031