২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস

অভিযোগ
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৫, ২০২৩
হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস

স্টাফ রিপোর্টার: শীতের আগমনী বার্তা আসার সাথে সাথেই এক সময়ে গ্রাম-বাঙ্গলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ঘরে খেজুরের রস দিয়ে ফিরনি, পায়েস, রসের গুড় দিয়ে ভাঁপা পিঠা এবং গাড় রস তৈরি করে মুড়ি, চিড়া, খই, চিতই পিঠা,দুধ চিতল,তেলের পিঠা,ভিজাইল পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলির মহাউৎসব চলত।

কালের বিবর্তনে এখন আর কিন্তু আগের মতো গ্রাম্য রাস্তার দুপাশে সারি সারি খেজুর গাছ আর দেখা যায় না । গ্রামের রাস্তাগুলো সংস্কার ও নতুন করে খেজুর গাছ রোপণে মানুষের আগ্রহের অভাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও খেজুরের রস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও রাস্তার আশেপাশে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অল্প কিছু খেজুর গাছ।

আর রস আহরণে এখনো গ্রাম্য রীতিতেই ঝুঁকি নিয়েই কোমরে রশি বেঁধে শীতের বিকালে ছোট-বড় মাটির হাঁড়ি গাছে বেঁধে তা থেকে রস সংগ্রহ করতে দেখা যায় না গাছিদের। আগে তারা এই কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটবাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। আবার কেউ কেউ সকালে রস জ্বাল দিয়ে গুড়-মিঠাই তৈরি করতো।

প্রতিবছর এই মৌসুমে খেজুর গাছের রস ও গুড় বিক্রি করে বাড়তি আয় করতো গাছিরা।
কালের স্বাক্ষী হয়ে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের বড়নগর,চৌড়া,বেতুয়া,কোহিনুর মার্কেট,জামালপুর, বাহাদুর শাদী, গোল্লার টেক,দোলাশাধুখা,বান্দাখোলা,কামার বাড়ি, ,নাগরী,বাগদী,ধনূন,উধুর, পারাবর্তা,জাঙ্গালিয়া, ভাটিরা,মাঝুখান,কলাপাটুয়া,রয়েন,আওড়াখালী,আজমত পুর মানিক পুরের রাস্তার পাশ দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে খেজুর গাছ রাস্তার দুই প্বার্শে হাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলা ঐতিহ্য খেজুরের রশ।
গাছি বলেন, রাস্তাগুলো সংস্কার হওয়ার কারণে খেজুর গাছ কেটে ফেলা হলেও নতুন করে আর কেউ গাছ লাগাচ্ছে না।

কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হাতেগোনা কয়েকটি খেজুর গাছ রয়েছে। উপজেলার বিভন্নএলাকার দেলোয়ার জানান একসময় শীত এলেই আমি গাছি হিসেবে কাজ করতেন।

গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিক্রি করতেন খেজুরের রস। এখনো তিনি ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন। তিনি জানালেন, ব্রিজের কাছের গাছে তিনি কলস লাগিয়েছেন, বিকেলের দিকে গাছে কলস লাগালে সারারাতেই তা ভরে উঠে।

জাকারিয়ার কাছ থেকে খেজুরের রস কিনতে এসেছেন রাব্বি, হৃদয়, ফরহাদ,বাবুল,কামরুল, সেলিম হোসেন কামরুল জানান, অনেকদিন পর খেজুরের রসের সন্ধান পেয়েছি। এ রস দিয়ে পায়েস খুব পছন্দ, তাই বাসার জন্য এক জগ কিনে নিয়েছি। রসওয়ালা দাদুকে খুশি হয়ে সব খেজুরের রশ,৫০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করছি, আর আজ থেকে ১০ বছর পূর্বে ও কেজি প্রতি,দুই টাকা করে ক্রয় বিক্রিয় করতো।
আমাদের প্রতিনিধিকে বাহাদুর শাদীর গাছী কালাম জানায়,আগের মতন খেজুর গাছ নেই, আমার বাবা অনেক গাছে কলসি দিয়ে এই শীতের মৌসুমে খেজুরের রস সংগ্রহ করতেন,এখন লোকজন খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে তাই পূর্বের মতন খেজুর গাছ নেই। দক্ষিণ ভার্দাতীর সিয়াম বলেন বার্ষিক পরীক্ষার পর নানু বাড়িতে গেলে কাচাঁ খেজুর এর রস খেতাম,রস দিয়ে ক্ষির রান্না করতেন নানু, কালীগঞ্জের জিনিয়া বলেন আজ থেকে বিশ বছর পূর্ব শীতের সময় খেজুরের রস এলাকায় ডেকে বিক্রি করতেন খেজুর এর রস, এখন ১৫ দিন পূর্বে বলে ও খেজুরের রস পাওয়া যায় না,জিনিয়া আমাদের প্রতিনিধিকে আরো বলেন,বাজারে জ্বাল দেওয়া খেজুরের রস এখন আর পূর্বের মতন স্বাদ পাওয়া যায় না, খেজুর এর চাপ্টি গুর ও এখন ভেজাল,ক্যামিকেল দিয়ে খেজুরের গুর তৈরী করে বাজার জাত করে,যা খেলে সাধারণ মানুষ ও শিশুরা বিভিন্ন রোগ আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
অপরদিকে খেজুর গাছ বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ফরিদপুর ও পূর্বের মতন প্রচুর খেজুর গাছ নেই, তাই খেজুর এর রস, এবং গুরের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন একসময় হয়তোবা খেজুর গাছ বিলিন হয়ে যাবে তখন খেজুরের রস পাওয়া দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাবে।এভাবেই হয়তো কোন একদিন হারিয়ে যাবে বাংলাদেশ ঐতিহ্য খেজুরের রস।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30