২২শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ৩০শে শাবান, ১৪৪৪ হিজরি

আমার বাড়িতে আমি থাকতে চাই, ঘর চাই নইলে মৃত্যু চাই- মানববন্ধন করে হাজারীবাগের ১০ নং বাড়ির বাসিন্দারা

অভিযোগ
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
আমার বাড়িতে আমি থাকতে চাই, ঘর চাই নইলে মৃত্যু চাই- মানববন্ধন করে হাজারীবাগের ১০ নং বাড়ির বাসিন্দারা

আমার বাড়িতে আমি থাকতে চাই, ঘর চাই নইলে মৃত্যু চাই- মানববন্ধন করে হাজারীবাগের ১০ নং বাড়ির বাসিন্দারা

নিউজ ডেস্ক, ঢাকা: রাজধানীর হাজারীবাগের মনেশ্বর ১ম লেনের ১০নং বাড়িটি নিয়ে আলোচনা যেন শেষই হচ্ছে না। আজ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১০নং বাড়িটির ৪টি পরিবারের প্রায় ৩০/৩৫ জন সদস্য মিলে মানববন্ধন করেন। তারা বলেন, আমার বাড়িতে আমি থাকতে চাই, ঘর চাই নইলে মৃত্যু চাই। এই বাড়িতে জন্ম নেয়া মেয়ে রুবিনা বলেন, এটি আমার বাবার বাড়ি অন্য কারো নয়। আমার বাড়িতে আমি থাকতে চাই, কোনো ভূমি দস্যুর জায়গা এখানে হবে না- এই স্লোগানে মুখরিত রাখেন তারা। এর আগেও কয়েকটি মিডিয়াতে শিরোনাম হয়েছিল মনেশ্বর ১ম লেনের এই বাড়িটি নিয়ে। আজ মানববন্ধনে কথা বলতে এসে ইয়ার মোহাম্মদ, পান্না, ইসমাইল, রুবিনাসহ বয়স্ক মুরুব্বিরা আবেগে কান্নায় জর্জরিত হয়ে পড়েন এবং সবার কাছে এর সুষ্ঠু তদন্ত চান। মানববন্ধন শেষে হাইকোর্ট অভিমুখে তারা এক মিছিল বের করেন।
রাজধানীর হাজারীবাগের মনেশ্বর ১ম লেনের ১০ নং বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক বাড়ি বা স্থাপনা। দেশ বিভাগেরও অনেক আগে এই গোপিচরণ নট্র – এর বাড়ি ছিল। তৎকালীন সময়ে এই বাড়ির স্থাপনা এবং স্কুল ছিল। মনেস্বর ১ম লেন এবং এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো: ইয়াকুব মিয়া (মৃত) এবং তার মাতা (মৃত) কে এখানে দেখাশোনা এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেন গোপিকারণ নট্র ও তার ওয়ারিশগণ। স্বাধীনতারও অনেক আগে থেকেই তারা বসবাস করে আসছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর গোপিচরণ নট্র মো: ইয়াকুব মিয়া (মৃত) এবং তার মাতা (মৃত) কে এই জায়গা সম্পত্তি বুঝিয়ে দিয়ে ভারত চলে যান। তারপর তারা বা তাদের ওয়ারিশগণ আর ফিরে আসেন নি। ধীরে ধীরে এই স্কুল ও স্থাপনা পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে যায়। তৎকালীন সরকার এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ পুনঃস্থাপন এর কোনো উদ্যোগ নেন নি। মো: ইয়াকুব মিয়া (মৃত) ও তার ছোট দুই ভাই আনু মিয়া ও সফি মিয়া (মৃত) এবং তার ভাগ্নে রমজান বসবাস করে আসছেন।
১৯৮৬ সালের আগে এক পক্ষ এসে দাবি করেন এই জমির মালিক তারা এবং মো: ইয়াকুব মিয়া (মৃত) ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে এই মামলা খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে পুরান ঢাকা থেকে আরো একবার জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেন, সেটাও খারিজ হয়ে যায়।
প্রকৃত জমির পরিমান ২০ কাটা। বর্তমানে ইয়াকুব মিয়ার মেয়ে রুবিনা ও তার পরিবার, ইয়াকুব মিয়া ছোট ভাই আনু মিয়া ও তার পরিবার, তাদের ভাতিজা পান্না ও ইসমাইল দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন।
বর্তমান সময়ে পুরান ঢাকার ৯/২০ জিন্দাবাহার থেকে রবিন ও হাফেজ হারুন এসে দাবি করছেন এটি তাদের বাড়ি ও বাপ্ দাদার সম্পত্তি। এখানে নাকি ১৬ কাটা জায়গা আছে তাদের। এখানে বসবাসরত ৭টি পরিবার থেকে ৪টি পরিবারকে প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে বাসা ছাড়তে বাধ্য করে তারা। বর্তমানে বসবাসরত ৩টি পরিবারকে হুমকি দিয়ে বলে গেছে আগামী ৩ দিনের মধ্যে বাসা ছাড়তে হবে। থানা পুলিশের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় এবং কিছু অসাধু লোকের সেল্টারে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছে।
ওসি ছায়েদুল হক ভূঁইয়া বলেন তাদের কাছে নাকি কিছু দলিল আছে কিন্তু তারা দেখতে চাচ্ছেন না। এছাড়া এস আই মহসিন এবং এই আই জাহান-ই-আলমকে নিয়মিত এই বাসায় আনাগোনা করতে দেখা যাচ্ছে। তারা বলতে চায় বসবাসকরি পরিবাররা বেশী বাড়াবাড়ি করলে মামলা খেতে পারেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্থানীয় বাড়িটি পরিদর্শনে গেলে সাংবাদিকদের সামনে এই সমস্ত কথা বলেন ভুক্তভোগীরা। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনার এবং মানবাধিকার সংস্থার কাছে এই সুষ্ঠু তদন্ত চান। এবং এই বাড়িতে পুনর্বাসন হতে চান। ভুক্তভোগীদের দাবি যারা মালিক দাবি করছেন তাদের কাছে যদি প্রকৃত দলিলপত্র ও কাগজ থাকে তাহলে যেন তাদের সাথে সরাসরি বসে কথা বলে। পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে বা এলাকার কারো যোগসাজুসে কথা বললে কোন লাভ হবে না।
যেখানে ইয়াকুব মিয়া (মৃত) ও তার ছোট দুই ভাই, বোনসহ ভাগ্নে অর্থাৎ তাদের পরিবাররা ৭০/৮০ বছর ধরে বসবাস ও ভোগ দখল করে আসছেন সেখানে অন্য কেউ এসে কিভাবে তিনদিনের মধ্যে বাসা ছাড়তে বলে। এটা তো মানবতাবিরোধী কাজ। এলাকার মুরুব্বিরা যানতে চান বার বার হেনস্থার এই রহস্য কবে ও কোথায় গিয়ে শেষ হবে??

Please Share This Post in Your Social Media
March 2023
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031