২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ক্যাসিনোর পর এবার নজরদারিতে ঢাকার বাড়ি-গাড়ি ওয়ালা

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
ক্যাসিনোর পর এবার নজরদারিতে ঢাকার বাড়ি-গাড়ি ওয়ালা

Sharing is caring!

পুনম শাহরীয়ার ঋতু: ক্যাসিনোর পর এবার নজরদারির আওতায় আসছেন অবৈধ্যভাবে গড়ে তুলা বাড়ি-গাড়ির মালিকরা। বিশেষ করে তাদের আয়ের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে এনবিআর। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাদের রাজস্ব হিসাব।

কারণ, বাড়িভাড়া থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করলেও অনেক বাড়ির মালিক হিসাবমতো কর দিচ্ছে না। অনেকের ইটিআইএন পর্যন্ত নেই। আবার কোটি টাকা দামের গাড়ির মালিকদের অনেকেই রাজস্ব ফাঁকি দিতে রিটার্নে তাদের গাড়ির তথ্য উল্লেখ করেন না।

এমন পরিস্থিতিতে হিসাবমতো রাজস্ব আদায়ে এনবিআর বাড়ির মালিক ও দামি গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে রাজস্ব বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এদিকে ক্যাসিনোকাণ্ডে দেশের প্রায় সব জায়গায় চলছে শুদ্ধি অভিযান। এ অভিযানে র‍্যাব-পুলিশের পাশাপাশি ভূমিকা রাখছে এনবিআর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এটি ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ঘাটতি এড়াতে এনবিআর অর্থবছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব এমন সব খাতের তালিকা করে কাজ করছে। বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক ও বিলাসবহুল গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে আদায় বাড়াতে জোর দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা বাড়ির মালিকদের এবং কোটি টাকা দামের গাড়ির মালিকদের আয়কর রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বড় বড় বাড়ি চিহ্নিত করে ও বাড়ি থেকে রিটার্নে কত ভাড়া আদায়ের তথ্য দেয়া হয়েছে তা যাচাই করা হচ্ছে। বাড়িভাড়ার তথ্যে গরমিল পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকৃত তথ্য জানতে চাওয়া হয়। আর মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে সন্দেহ হলে এনবিআরের গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। এভাবে তথ্য সংগ্রহ করে সঠিক হিসাবে রাজস্ব আদায়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কারণ, অনেক বাড়ির মালিক করযোগ্য আয় থাকলেও ইটিআইএন গ্রহণ করেনি। আবার অনেকের ইটিআইএন থাকলেও হিসাবমতো রাজস্ব পরিশোধ করছে না। বাড়ির মালিকদের অনেকেই সম্পদশালী। তাদের অনেকে আবার প্রভাবশালীও। হিসাবমতো রাজস্ব আদায়ে এনবিআর কর্মকর্তারা হাজির হলে ফাঁকিবাজ বাড়ির মালিকরা প্রভাশালীদের মাধ্যমে সুপারিশ করিয়ে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম থামিয়ে দেন।

সূত্র জানায়, বিগত ২০১৩ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকার এক লাখ ১১ হাজার ২০০ বাড়ির মালিকের রাজস্ব পরিশোধের তথ্য খতিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম পায় এনবিআর। তাদের মধ্যে করযোগ্য আয় থাকলেও ৩৮ হাজার ৭০০ বাড়ির মালিকের টিআইএন (সে সময় ই-টিআইএন চালু হয়নি) পাওয়া যায়নি। টিআইএন না থাকা বাড়ির মালিকদের ২৯ হাজারই ভাড়ার সনদ দেখাতে ব্যর্থ হয়। আর যাদের টিআইএন ছিল কিন্তু বাড়িভাড়ার রশিদ ছিল না তাদের সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার। বাড়ির মালিকদের হিসাবে স্বচ্ছতা আনতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে পৃথক ব্যাংক হিসাব খুলে শুধু ভাড়া আদায়ে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালী বাড়িওয়ালাদের দাপটে শেষ পর্যন্ত ওই নিয়ম স্থগিতে বাধ্য হয় এনবিআর। বিগত দিনের এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে নেমেছে এনবিআর।

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কাছে কয়েক দফা চিঠি পাঠিয়ে কোটি টাকা দামের প্রায় এক হাজার গাড়ির মালিকের তালিকা সংগ্রহ করেছে এনবিআর। ওই তালিকা বিভিন্ন কর অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে আয়কর রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখে ইতোমধ্যে একাধিক রিটার্ন পাওয়া গেছে, যেখানে কোটি টাকা দামের গাড়ির তথ্য উল্লেখ করেননি সংশ্লিষ্ট করদাতা। মূলত রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যেই কোটি টাকা দামের গাড়ির মালিকদের অনেকেই গাড়ির তথ্য রিটার্নে উল্লেখ করেন না। ওসব ব্যক্তির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া চলতি অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনাকালে বলেন, অনেক বড় বড় বাড়ি দেখা যায়। ওসব বাড়ির অনেক থেকে ভাড়া হিসেবে বড় অঙ্কের অর্থ আয় হয়। অথচ অনেক বাড়ির মালিক রাজস্ব ফাঁকি দিতে কত টাকার বাড়িভাড়া পাচ্ছেন তার তথ্য রিটার্নে উল্লেখ করেন না। বাড়িভাড়া খাতে সঠিক হিসাবে রাজস্ব আদায়ে নজরদারি বাড়ানো হবে