Sharing is caring!
অভিযোগ ডেস্ক : নুসরাত জাহান রাফিকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিতে কেউ দেখেননি। তার গায়ে আগুন দিতেও কেউ দেখেননি। কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীও নেই।
ফেনীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আদালতে এমন দাবি করেছেন মামলার অন্যতম আসামি ও অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ভাগনি (শ্যালিকার মেয়ে) উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পার আইনজীবী ফারুক আহম্মদ।
সোমবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে আসামি উম্মে সুলতানার পক্ষে যুক্তিতর্কর উপস্থাপনকালে এমন দাবি করেন হাইকোর্টের এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।
উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতের সহপাঠী ও আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন।
এদিন উম্মে সুলতানা ছাড়াও আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম, কামরুন্নাহার মনি, জোবায়ের আহম্মদ, হাফেজ আবদুল কাদের ও ইফতেখার উদ্দিন রানা ও নুর উদ্দিনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ফারুক আহম্মদ। তাকে সহায়তা করেন ফেনী বারের আইনজীবী ফরিদ উদ্দিন খান, মোহাম্মদ ইসহাক, মো. সিরাজুল ইসলাম।
এছাড়া মামলার অন্যতম আসামি মাকসুদ আলম কাউন্সিলরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থপন করেন ফেনী বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, নুসরাতের গায়ে আগুন লাগার দিন আসামি মাকসুদ আলম কাউন্সিলর ফেনীতে ছিলেন না। কোনো সাক্ষী তার নামও বলেননি।
তিনি আরও দাবি করেন, নুসরাতের মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিকেলের ফরসেনিক রিপোর্ট, পোস্টমর্টেম সার্টিফিকেটে হত্যার কথা বলা হয়নি। দাহ্য পদার্থের আঘাতে নুসরাত নিহত হয়েছে- একথা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে নেই। তিনি দাবি করেন, এটি আত্মহত্যাও হতে পারে।
আইনজীবী ফারুক আহম্মদ দাবি করেন, ৪ এপ্রিল রাতে মাদরাসায় নুসরাত হত্যার কথিত পরিকল্পনাসভা অনুষ্ঠিত হতে কেউ দেখেননি। কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই।
তিনি বলেন, ‘মামলার অভিযোগপত্রে কালো বোরকার কথা উল্লেখ করা হলেও আসামি উম্মে সুলতানার বাড়ি থেকে একটি নেভি-ব্লু রঙয়ের বোরকা উদ্ধার করা হয়।’
ফারুক আহম্মদ আরও বলেন, ‘৬ এপ্রিল মাদরাসার ছাদে নুসরাতের কাছ থেকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ ধরনের কোনো কাগজ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।