৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে মহাসড়কে খানাখন্দ, আঞ্চলিক সড়কের বেহাল দশা

admin
প্রকাশিত মে ২৬, ২০১৯

Sharing is caring!

ফকির হাসান : প্রতি বছর ঈদের আগে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তবে এবার ঈদ সামনে রেখে সড়ক মেরামতের কাজে হাত দেয়নি দফতরগুলো।

এমন পরিস্থিতিতে এবারো ঈদে শঙ্কা নিয়ে সড়ক পথে নাড়ির টানে ঘরমুখো হবেন সাধারণ মানুষ। সেই শঙ্কার মূলে সড়কের বেহাল অবস্থা। সেইসঙ্গে চালকের অদক্ষতা-তো রয়েছেই।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কর্মকর্তাদের মতে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই সড়ক পথে যাতায়াত করেন। আর ২০১৭ সালের তুলনায় ১৮ সালে দুর্ঘটনার হার বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এ কারণে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

কর্মকর্তাদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনা কোনো লৌকিক কারণে হয় না, সেটা হতে পারে চালকের ত্রুটি, যানবাহন, পথচারী বা রাস্তার ত্রুটির কারণে। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে খানাখন্দে পড়ে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এসব নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দুর্ঘটনাও আনুপাতিক হারে কমে আসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে মোট ৮ হাজার ১০৪ কিলোমিটার মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। সওজের অধীনে সাড়ে ৫শ’ কিলোমিটার পাকা সড়ক। এরমধ্যে রয়েছে ১৩৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ও ১৬২ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক। এলজিইডি’র অধীনে গ্রামীণ সড়ক রয়েছে ৭ হাজার ৫১৪ কিলোমিটার, কাঁচা সড়ক ৫ হাজার ৭৬ কিলোমিটার।

বছরজুড়ে এসব সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হলেও কেবল ঈদ এলেই শুরু হয় প্রলেপ দেওয়ার কাজ। কিন্তু এবার সেই কাজটিও হচ্ছে না।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া অভিযোগকে বলেন, সড়ক সংস্কারের কাজ সব সময়ই চলমান থাকে। ঈদ সামনে রেখে আলাদাভাবে করা হয় না। অবশ্য চলমান প্রতিটি কাজে বিশেষ নজরদারি রেখেছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম মহসীন অভিযোগকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে আলাদাভাবে কোনো কাজ করা হচ্ছে না। এটা নিয়মিত কাজের অংশ।

সিলেট বিভাগীয় সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক অভিযোগকে বলেন, বিভাগের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কেরই অবস্থাই খারাপ। রাস্তা সংস্কারে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। এরপরও সংস্কারে কার্যকরী উদ্যোগ নেই। অবশ্য সমিতি থেকে চালকদের সচেতন করছেন। হেলপার দিয়ে গাড়ি না চালাতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

শ্রমিক নেতারা বলেন, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর থাকলেও অনিয়মের কারণে সড়কের এমন দুর্দশা হচ্ছে। তাই সড়কের উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি যথাযথ তদারকি প্রয়োজন মনে করেন নেতারা।
সম্প্রতি সড়কের কাজে এক কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকার অনিয়মে অভিযুক্ত সিলেটের এক ঠিকাদার ও পাঁচ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রও দিয়েছে দুদক। শ্রমিক নেতাদের এই অনিয়মের অভিযোগ টেনে বলেন, সড়কে বারো মাস উন্নয়ন প্রকল্প চললেও অনিয়মের কারণে রাস্তার কাজ টেকসই হয় না। তাই সড়ক ভালো করতে হলে আগে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, জাতীয় মহাসড়কের অবস্থা যেমন-তেমন, আঞ্চলিক সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছাড়াও সিলেট-তামাবিল, সিলেট-বিয়ানীবাজার-মৌলভীবাজার, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক, সিলেট সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং সিলেটের-ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা যেনো কাটছেই না। উপজেলা সদর থেকে মাইজগাঁও হয়ে শাহজালাল সার কারখানা সড়কের বেহাল অবস্থা এক যুগেও অবসান হয়নি।

সওজ সূত্র জানায়, বর্তমানে সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুরে ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার, জকিগঞ্জ সড়কে ১৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। এছাড়া সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কে ২৯ কিলোমিটার আরসিসি ঢালাই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন কেবল সড়কে ওয়েট স্কেল বসানো প্রক্রিয়াধীন। এতে করে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা সড়ক যোগাযোগের নরক যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাচ্ছেন উপজেলাবাসী।

এছাড়া সিলেট-সুলতানপুর সড়কে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। মহাসড়কের শেরপুর ও সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর সড়কে মেরামত কাজ অব্যাহত রয়েছে। অথচ শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে নুরুল ইসলাম নাহিদ ভাদেশ্বর সড়কসহ গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রকৌশলীদের ডেকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সাবেক এ মন্ত্রীর নির্দেশনার পরও ঢাকা দক্ষিণ-ভাদেশ্বর ১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার এখনো শেষ হয়নি।

অন্যদিকে, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯ কিলোমিটার সড়কের কাজের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রাস্তায় সমপরিমাণ বালু-পাথর ব্যবহার করার কথা থাকলেও ৭০ শতাংশ মাটি মিশ্রিত বালু ও ৩০ শতাংশ পাথর ব্যবহার করছে।

এলজিইডি সূত্র জানায়, সিলেটের অধীনে ৭ হাজার
৫১৪ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৪৩৮ কিলোমিটার পাকা ও ৫ হাজার ৭৬ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে। অর্থবছরে ৫৪৪টি গ্রামীণ সড়কে ১৪৫ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ২৫৩টি সড়কের কাজ শেষ হয়েছে।

আমাদের হবিগঞ্জের প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জ-সরাইল, নাছিরনগর ২৫ কিলোমিটার সড়কের দুরবস্থা দৃশ্যমান ছিল। বর্তমানে ওই সড়কে একটি ব্রিজ নির্মাণসহ রাস্তার উন্নয়নে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দে কাজ শুরু হয়েছে। ওই কাজ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাকের মো. সিকান্দার। এছাড়া হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়ক, নবীগঞ্জ সড়কে এবং হবিগঞ্জ পুলিশ লাইন সড়কের অর্ধেক রাস্তা খানাখন্দে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া গ্রামীণ সড়কগুলোর বেহাল দশা কেটে উঠছে না, ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মৌলভীবাজার অংশে ৩টি ও ভারতের সঙ্গে একটি মহাসড়ক রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা-শ্রীমঙ্গল-সিলেট ও রাজনগর-সিলেট সড়ক দু’টি হচ্ছে জাতীয় মহাসড়ক।