Sharing is caring!

দুমকী ও পবিপ্রবি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:- পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)তে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে কর্মসূচির মধ্যে ছিল পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন, প্রভাতফেরী।
একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২.০১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম । এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এসএম হেমায়েত জাহান । এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সমিতি, পরিষদ ও ফোরাম, অনুষদ, হল, বিভাগ, ছাত্র সংগঠন এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন ও ভাষা শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
সকাল ৭টা ৩০মি. প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত করেন অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম এবং কালো পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম হেমায়েত জাহান।
সকাল ৭ টা ৩০মি. কালো ব্যাজ ধারণ ও প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখ থেকে এক প্রভাতফেরী কাম্পাস এর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসিতে এসে শেষ হয়। সকাল ৭টা.৪৫ মি. সৃজনী বিদ্যানীকেতনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন, সুন্দর হাতের লেখা, কবিতা আবৃত্তি ও দেশাত্ববোধক গানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
পরে টিএসসির কনফারেন্স রুমে সকাল ৮ টা ৩০ মি. আলোচনা সভা ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় । সভায় ছাত্র বিষয়ক উপ-উপদেষ্টা ড. এবিএম সাইফুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট স্ট্যাডিজ এর ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপাচার্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম হেমায়েত জাহান।
বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম হেমায়েত জাহান তার বক্তব্যে মাতৃ ভাষার গুরুত্ব বলতে গিয়ে পবিত্র আল কোরআন এর সুরা ইব্রাহিম এর ৪ নম্বর আয়াত তুলে ধরে বলেন, মাতৃ ভাষাকে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন যে তিনি যুগে যুগে যেসব নবী রাসুলদের পাঠিয়েছেন তাদেরকে তাদের মাতৃ ভাষায় ধর্ম গ্রন্থ পাঠিয়েছেন যাতে তারা তাদের গোত্র এবং কওমের মধ্যে সাবলিলভাবে ধর্মিয় বানী প্রচার করতে পারে। আজ আমরা সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যে, আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার পাশাপাশি জ্ঞান, গবেষণা ও সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ করব।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম তাঁর বক্তৃতায় ১৯৫২, ৭১ ও ২০২৪ এর সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের আত্বার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, ১৯৫২ সালের এই দিনে, আমাদের বীর শহীদরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে মাতৃভাষার অধিকার কোনো জাতির জন্য কেবলমাত্র ভাষার প্রশ্ন নয়, বরং আত্মপরিচয়ের, অধিকার ও স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতীক। তাদের সেই আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ আজ আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলায় জ্ঞানচর্চা করতে পারছি।
বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের দায়িত্বও সীমাহীন। ভাষার শুদ্ধতা রক্ষা, চর্চা ও প্রয়োগে যত্নশীল হওয়া আমাদের সকলের কর্তব্য। একইসঙ্গে বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদের মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেও বিশ্ব দরবারে আমাদের জাতিগত পরিচয়কে সমুন্নত রাখতে হবে।
এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মোঃ জামাল হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. মোঃ হাবিবুর রহমান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোঃ সাইফুল ইসলাম, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক আবুল বাশার খান, অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোঃ জহুরুল ইসলাম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম টিটো, ডেপুটি রেজিস্ট্রার হাচিব মোহাম্মদ তুষার, সহকারী রেজিস্ট্রার মোঃ রিয়াজ কাঞ্চন শহীদ, কর্মচারীদের মধ্যে মোঃ মাহবুবুর রহমান এবং মোঃ মোশারেফ হোসেন, শীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সোহেল রানা জনি এবং তানভীর আহমেদ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকতা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ১০ টা ৪৫ মি. অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বিখ্যাত কবি হেলাল হাফিজ এর কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।