৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উচ্ছ্বসিত পটুয়াখালী ভার্সিটির সৃজনী বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীরা

admin
প্রকাশিত জানুয়ারি ২, ২০২৫
নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উচ্ছ্বসিত পটুয়াখালী ভার্সিটির সৃজনী বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীরা

Sharing is caring!

দুমকি ও পবিপ্রবি( পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:- প্রকৃতিতে শীতের আবহ, কুয়াশা এখনও কাটেনি। সেই কুয়াশার চাদর ভেদ করে স্কুলের মাঠে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। সবার চোখে-মুখে আনন্দ। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না, কখন আসবেন অতিথিরা, শুরু হবে বই উৎসব। আর একটু বেলা বাড়লো, রোদ উঁকি দিল, শুরু হলো উৎসব।

নতুন বই দেওয়ার এ আয়োজনকে শিক্ষার্থী আর শিক্ষকরা উৎসবের মতই পালন করছেন। নববর্ষের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে পেয়ে উল্লাসে মেতেছে কোটি কোটি শিক্ষার্থী। ০১ জানুয়ারি ২০২৫ (বুধবার) সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তক উৎসব উদ্‌যাপিত হচ্ছে। খালি হাতে বিদ্যালয়ে গিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছে শিক্ষার্থীরা।

নতুন বই বুকে জড়িয়ে এর গন্ধ শুঁকে নির্মল হাসিমুখে তারা ছুটে গেছে বাড়িতে। তাদের এ অনাবিল আনন্দের সঙ্গে ভাগ বসিয়েছেন শিক্ষক-অভিভাবকরাও। ফলে দেশজুড়ে উৎসবে মেতে উঠেছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সকলে।

সকালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী সৃজনী বিদ্যানিকেতনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের সময় এখনও শুরু হয়নি, কিন্তু পুরো শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীতে ভরপুর, কচি-কাঁচার কিচির মিচিরে মুখরিত হয়ে আছে পুরো এলাকা, নতুন বই পড়া নিয়ে তাদের সেকি আনন্দ! শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ডুকতেই সঙ্গে সঙ্গেই সালাম দিয়ে পড়া শুরু করলো শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের পুর্ব পার্শের টিনশেড ঘরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, এখনও ক্লাস শুরু হয়নি, মাঠের এক কোনায় একদল ছাত্রী আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু আড্ডাতেও তাদের সেই নতুন বই। সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে আর বইগুলো দেখছে, চোখে-মুখে তাদের আনন্দের ঝিলিক।

সৃজনী বিদ্যনিকেতনের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মুহাম্মদ নাফিউ বিন ইমাদ জাইফ জানায়, নতুন বইয়ের ছবিগুলো তার কাছে ভীষণ ভালো লাগে, তাই সারাদিন সে ছবি গুলোই দেখছে, মাঝে মাঝে গল্পগুলোও পড়ছে। নতুন বইগুলোর পাতা উল্টাতেই তার ভালো লাগা অনুভূত হয়। বছরের প্রথমে বই পেয়ে সে খুব খুশি, বইয়ের প্রথম থেকে সে পড়া শুরু করেছে। স্কুলের এক কোনে বসেই সে দেখে নিচ্ছে বইয়ের ছবিগুলো। ফাকে ফাঁকে নাকের ডগায় নিয়ে নতুন বইয়ের গন্ধ শুকছেন। নতুন বই পড়ার তার সেকি যে বাধভাঙ্গা উচ্ছাস।

সৃজনী বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, বছরের প্রথমে বই পেয়ে শিশুরা আনন্দিত। শিক্ষকরাও পাঠদানে উৎসাহী। বছরের প্রথমে বই পেয়ে যাওয়াতে বছর শেষ হওয়ার আগেই সিলেবাস শেষ করা যাবে।

এ ব্যাপারে অনুভূতি ব্যক্ত করেন দুমকি উপজেলার দুমকি উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও, শ্রীরামপুুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল আলম মৃধা। তিনি বলেন, ‘আমরা বই কিনে পড়েছি। সবগুলো বই এক সঙ্গে টাকা দিয়েও লাইব্রেরিতে পাওয়া যেত না। এমনও হয়েছে সবগুলো বই জোগাড় করতে বছরের কয়েকমাস পার হয়ে গিয়েছে। এ প্রজন্ম ভাগ্যবান, নতুন বইয়ের গন্ধ বছরের প্রথম দিনই পাচ্ছে।

১ জানুয়ারি বুধবার সকাল ৯ টায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনী বিদ্যানিকেতনের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বই উৎসব । এদিন বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নতুন বই তুলে দেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এসএম হেমায়েত জাহান।

সৃজনী বিদ্যানিকেতনের গভর্নিং বডির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলএ অনুষদের ডিন প্রফেসর মোঃ জামাল হোসেন এর সভাপতিত্বে এসময় সৃজনী বিদ্যানিকেতন এর অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ আসাদুজ্জামান, প্রধান শিক্ষক মোঃ আবদুল কুদ্দুস এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও সৃজনী বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভাইস-চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, একটা সময়ছিল, যখন আমরা পড়ালেখা করতাম, তখন বছরের তিন-চার মাস চলে যেতো কিন্তু নতুন বইয়ের খবর থাকতো না। এদিক-ওদিক থেকে বই নিয়ে শুরু হতো পড়া। আর এখন শিক্ষার্থীদের কি সৌভাগ্য, বছরের শুরুতেই নতুন বই তোমাদের হাতে। এতে করে তোমাদের পড়া-লেখার প্রতি আগের চাইতে বেশি আগ্রহ হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন বইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। কিছুদিন বই ছাড়া ক্লাস করতাম অথবা কারো কাছ থেকে পুরানো বই সংগ্রহ করতাম। এরপর যখন বই দেওয়া হতো তখন নতুন-পুরাতন মিলিয়ে দিতো। বই পেয়ে আনন্দের চেয়েও মন খারাপ হতো বেশি। পুরানো বইয়ের কারণে। পরে আবার লাইব্রেরি থেকে কিনে নিতাম যেগুলো পুরানো ভাগে পড়তো। অথচ এখন বছরের প্রথম দিনেই বই পেয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে সে এক অন্যরকম আনন্দ। স্কুলে স্কুলে বই উৎসব হয়। দেখে আমার কি যে আনন্দ লাগছে। আমার মতে বর্তমান সরকারের ভালো উদ্যোগের মধ্যে এটিও একটা।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, জীবনে মানুষ হতে হবে অঙ্গীকার থাকতে হবে। জিপিএ-৫ এর চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে। বইয়ের কনসেপ্ট বুঝে পড়তে হবে। জীবনে কোন পেশাই ছোট নয়। সব পেশাকে সম্মান করতে হবে। জীবনে অনেক কিছু করতে হবে। প্রধান অতিথির কাছ থেকে নতুন বই পেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে এবার ১২ বছর আগের শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক-মাধ্যমিকের শিক্ষা ব্যবস্থা। পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে নতুন বছরে ছাপা মোট বইয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ১৬ লাখ, বাড়ছে ছাপার বাজেটও।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান জানান, পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জনের ক্ষেত্রে বিতর্কিত, ভ্রান্ত ও অতিরঞ্জিত কনটেন্ট বাদ দেয়া, সঠিক ইতিহাস সংযোজন, বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নতুন গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, রচনা, ছবি বা কনটেন্ট সংযোজন এবং বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সংশ্লিষ্ট রচনা- বিষয়বস্তু হিসেবে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে-আমরা তোমাদের ভুলব না, শহীদদের নিয়ে লেখা, ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বিষয়ে-কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও গ্রাফিতির ভাষা, সপ্তম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে স্থান পেয়েছে সিঁথি (কবিতা), অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে গণঅভ্যুত্থানের কথা এবং নবম শ্রেণির ইংরেজিতে গ্রাফিতি, বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনে গ্রাফিতির ব্যবহার সংযোজন করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের ব্যাক কভারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সংশ্লিষ্ট গ্রাফিতি সংযোজন করা হয়েছে।