Sharing is caring!
খাদ্য পরিদর্শক মাসুদের দুর্নীতি তদন্তে দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ
শোয়েব হোসেন–চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার খাদ্য পরিদর্শক মাসুদ রানার চরম দুর্নীতি ও পাহাড় সমান অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য উদঘাটনের খোঁজ খবর পাওয়া গেছে।
খবরে প্রকাশ, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর খাদ্য পরিদর্শক (কারিগরি) মাসুদ রানা চাকুরীর শুরু হতে প্রায় এক যুগের ব্যবধানে নিয়মিত ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়ম দ্বারা বিভিন্ন ব্যাক্তিদের জিম্মি করে হুমকির মুখে অবৈধ সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুত ও বিপণন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী, ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে অনুসন্ধান চালিয়ে দিনকে দিন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতই গোপন, অবৈধ ও রহস্যময় বিপুল সম্পদের সাম্রাজ্যের খবর উন্মোচিত হয়েছে।
বিবিধ অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই মাসুদ রানার পিতার নাম হান্নান আকন,মাতার নাম বেগম হাসিনা। বাড়ি বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার গড়িয়া গ্রামে। তিনি প্রায় এক যুগ আগে খাদ্য অধিদপ্তরের চাকরি শুরু করেন। তারপরই শুরু হয়ে যায় রাতারাতি টাকার কুমির বনে যাওয়ার ঘটনা। দ্রুত গতিতে এই মাসুদ রানা বরিশালে চার কোটি ও রাজশাহীতে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রয় করেছেন। তাছাড়াও নামে-বেনামে আরও দুইটি ফ্লাট চার কোটি টাকায় কিনেছেন রাজশাহী ভদ্রার মোড়ের পাশে। এমনকি ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুই কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাটও কিনেছেন। বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে আরো কিনেছেন নয় কোটি টাকার জমি। ব্যাংক এশিয়া সহ বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে রেখেছেন কোটি কোটি টাকা। জামালপুরের পদ্মা আবাসিক এলাকায় দুই কোটি টাকা মূল্যের বাড়িও কিনেছেন। আরও কিনেছেন অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের আকর্ষণীয় গাড়ি। নাটোরে চাউল ব্যবসায় খাটিয়েছেন অর্ধ কোটি টাকা।এখানেই শেষ নয়! লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করেছেন নিজের আপন দুই ভাই, স্ত্রী, ছোট বোন ও বোনের জামাইকেও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন খাদ্য ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমকে জানান, এই মাসুদ ভয়ংকর লোভী ও দুষ্টু প্রকৃতির।সে নানান অপকৌশলে ধূর্ততার সাথে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে উপরি গ্রহণ করে দিনকে দিন চরমভাবে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাদের সকলের দশা এমন যে কেউ কিছুই বলতেও পারেন না আবার সইতেও পারেন না!
সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক(ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মিজানুর রহমানের কাছে মাসুদের দুষ্কৃতী ও অঢেল সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি এই কার্যালয়ে নতুন এসেছেন গত জানুয়ারিতে। মাসুদের বিষয়বস্তু তার জানা নেই। তবে যে কোন অনিয়ম দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া অবৈধ সম্পদের প্রাপ্ত তথ্যগুলো মুঠোফোনে বিনয়ের সঙ্গে আমাদের সংবাদ কর্মীগণ মাসুদ রানার কাছে পেশ করলে মাসুদ নিজকে সরাসরি ছোট কর্মচারী ও সৎ মানুষ বলে জানান। সেই সাথে বেপরোয়া ও তামাশা মূলক আচরণে সাধুবাদ ও সাবাসি জানিয়ে বলেন, “আপনাদের স্টেটমেন্ট গুলো শুনে আমার খুব ভালো লাগলো”।সেই সাথে তিনি সাংবাদিকদের আরও বেশি বেশি তথ্য বের করে দুদকে পাঠিয়ে দিতে বলেন। এতে নাকি তার কিছুই যাবে আসবে না! সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কথায় কথায় ঠাট্টা করে তিনি বহুবার স্পষ্ট করে শক্ত কন্ঠে দাবির সুরে বলেন, “এগুলো অবশ্যই দুদকের জরুরিভাবে তদন্ত করা উচিত!” যদিও পর মুহুর্তেই ব্যাকুল হয়ে জানতে চান, “এমন গোপন তথ্য আপনারা কোথা থেকে পেলেন!” বলা বাহুল্য, মাসুদের এমন বৈচিত্র্যপূর্ণ আচরণ সন্দেহ ও রহস্যের সঞ্চার বাড়িয়ে অনুসন্ধানের কাজকে আরও বেগবান করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
সচেতন জনতার দাবি, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের হিসাব মাসুদকে দিতেই হবে। সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মাসুদের কাছে সমস্ত হিসাব চাওয়া পাওয়ার লক্ষ্যে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে।খাদ্য পরিদর্শক দুর্নীতিবাজ মাসুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখন সময়ের উপযুক্ত দাবি। এই সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার দ্বারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মাসুদের গড়া অবৈধ আয়ের সমস্ত ধন-সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।