৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী মাজার শরীফে ওরশ আয়োজিত হবে।

Weekly Abhijug
প্রকাশিত জুন ৮, ২০২৪
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী মাজার শরীফে ওরশ আয়োজিত হবে।

শোয়েব হোসেন 

রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত হযরত শাহ আলী (রহ:) এর পবিত্র মাজার শরীফে আগামী ১১, ১২ ও ১৩ই জুন রোজ মঙ্গল, বুধ ও বৃহ:বার মোট তিনদিন মহা সমারোহে পালিত হতে চলেছে বাৎসরিক ওরস মোবারক।

খবরে প্রকাশ,উক্ত তিনদিন পবিত্র ওরশ মোবারক চলবে ঢাকার মিরপুর ১ এর চিড়িয়াখানা রোডস্থ সুলতানুল আউলিয়া হযরত শাহ আলী বাগদাদীয়া (রহ:) এর ঐতিহ্যবাহী মাজার প্রাঙ্গণে। অনুষ্ঠানটি নিবেদন করবেন হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ:) মাজার ওয়াকফ স্টেট পরিচালনা কমিটি। উক্ত ওরস মোবারকে সকল তরিকার ব্যক্তিবর্গসহ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই যোগদান করে দ্বীন ও দুনিয়ার অশেষ নেকি হাসিল করতে আহ্বান করা হয়েছে।

ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, ১২ আউলিয়ার মধ্যে অন্যতম এই সুলতানুল আউলিয়া হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর মাজার শরীফ। ছৈয়দ শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) ছিলেন তৎকালীন পাক-ভারত উপমহাদেশে সুদূর আরবাঞ্চল হতে ধর্ম প্রচারে আগত অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছুফি ব্যক্তিত্ব। তিনি একশত সঙ্গী নিয়ে আগমন করেছিলেন । তার নামানুসারে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে মিরপুর-১ এ শাহ আলী (রহঃ) এর মাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে জাতি-ধর্ম র্নিবিশেষে পূণ্যার্থে প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষের সমাবেশ ঘটে।

তিনি ছিলেন হযরত আলী (আঃ) -এর বংশধর। হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) হতে ইমাম আলী নকীর পিতা পর্যন্ত তার পূর্ব পুরুষগনের মধ্যে সকলেই বসবাস করতেন মদিনায়। তার বংশ হতে শাহ ছৈয়দ সুলতান আলী সর্বপ্রথম বাগদাদে আসেন, যিনি ছিলেন ইমাম আলী নকীর ছোট ভাই। পরবর্তীতে তিনি দিল্লীর সুলতানদের আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। বাগদাদের বাদশাহ সৈয়দ ফখরুদ্দিন রাজির জৈষ্ঠপুত্র ছিলেন ছৈয়দ শাহ্ আলী বোগদাদী (রহঃ)। ছেলে বেলা থেকেই তিনি ছিলেন ভাবুক ও সংসার বিরাগী।তিনি ৩০ পারা কুরআনের হাফেজ ছিলেন। সব সময় তিনি ইবাদত বন্দেগীতেই কাটাতেন। তাহার পিতার মৃত্যুর পর রাজ্য পরিচালনার ভার তার ওপর অর্পিত হলে মাওলার প্রেমের পাগল শাহ্ আলী বোগদাদী (রহঃ) সবকিছুই তুচ্ছ ও নগণ্য ভেবে সমস্ত সুখশান্তি বিসর্জন দিয়ে আল্লাহ্ পাকের নৈকট্য অর্জনে বেরিয়ে যান।

শাহ্ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর কিছু বিশেষ ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ)তাহার হাতের আশাকে কারামত শক্তির প্রভাবে বট গাছে পরিনত করেন।সেই গাছটা সিন্নি গাছ নামে পরিচিত যা আজও ৭০০ বছর ধরে হযরত শাহ্ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর মাজারের বাম পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বহু ভক্ত আশেকান সেই গাছের নীচে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে ও সুগন্ধি ছিটিয়ে মানত করেন। সেখানে ভক্ত আশেকানদের মানত তার দয়ায় অপূর্ণ থাকে না।কয়েক বছর আগে হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর এই সিন্নি গাছে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। টানা ৩ দিন ফায়ার সার্ভিস শত চেষ্টা করেও যখন আগুন নেভাতে পারছিলো না তখন উপায় না পেয়ে হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর খাদেমের কাছে পরামর্শ চাইলে খাদেম হযরত শাহ্ আলী বোগদাদী (রহঃ) -এর দরগার পানি “দোঁহাই শাহ আলী ” বলে আগুনে নিক্ষেপ করার সঙ্গে সঙ্গে সেই আগুন নিভে যায়।তার মাজার অনেক উঁচু। বাংলাদেশে এমন উঁচু মাজার আর ২য় টি নেই। কথিত আছে, হযরত শাহ্ আলী বোগদাদী (রহঃ) একবার ৪০ দিনের চিল্লায় মগ্ন হন। চিল্লায় মগ্ন হওয়ার আগে তিনি তার মুরিদদের ৪০ দিন পূর্ণ হবার আগে ভুলেও হুজরার দরজা না খোলার নির্দেশ দেন। তারপর তিনি হুজরার ভিতর আল্লাহর সাথে ফানা ফিল্লাহর নামাজে রত হন। ফানা ফিল্লাহর নামাজ তরীকার জগতে খুবই কঠিন নামাজ। সব আউলিয়ারা এই নামাজ পড়ার যোগ্যতা রাখেন না। উল্লেখ্য, এই নামাজ পড়াকালীন সময়ে আল্লাহর তরফ থেকে অনেক ভয়ংকর সৃষ্টির সামনে পড়তে হয়।তাই এই নামাজ চলাকালিন সময়ে কেউ যদি সামান্য মনোযোগ অন্যদিকে দেন তাহলে আল্লাহর জালালি নূরে তার দেহ ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। ভক্তগন হযরত শাহ্ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর কথা মত তার চিল্লা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রইলেন। কিন্তু চিল্লা শেষ হওয়ার ১ দিন আগে অর্থাৎ ৩৯তম দিনে হযরত শাহ্ আলী (রহঃ) -এর হুজরা হতে অসম্ভব চীৎকার আসতে থাকে। তখন তার মুরিদ্গন উপায় না পেয়ে হযরত শাহ্ আলী বোগদাদী (রহঃ) -এর নিষেধ থাকা সত্তেও হুজরার দরজা খুলে দেখেন ওনার দেহ মোবারক রক্তাক্ত অবস্থায় ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে পড়ে আছে। পরে ভক্তরা সেই লাশকেই সসম্মানে মিরপুরে দাফন করেন। বর্তমানে মিরপুরেই হযরত শাহ্ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর পবিত্র মাজার শরিফ আছে। কথিত আছে, হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এখনও তাহার খাঁটি আশেকদের সাথে দেখা করেন। এই সকল ঘটনা থেকে আরও প্রমানিত যে, আল্লাহর অলিদের মৃত্যু নেই,তারা চিরঞ্জীবী।

আরও জানা যায়, হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) -এর মাজার পূর্বে এমন উন্নত ছিল না। জনাকীর্ণ ও সকলের কাছে অজ্ঞাত ছিল প্রায় ২০০ বছর। পরবর্তীতে শাহ্ মুহাম্মাদ নামের একজন কামেল অলি তার দিব্য চক্ষুতে এই রওজার খবর জানতে পেরে নিজের হাতে উক্ত মাজার পরিষ্কার করেন এবং সেই সাথে মাজার পাকা করার উদ্যোগ নেন। এরপর থেকে আর মাজারের জৌলুশ কখনও কমতে দেখা যায় নি।তিনি নি:সন্দেহে একজন জিন্দা-অলি।আজও কোন ভক্ত-আশেকান যদি তাকে প্রেম-ভক্তিতে ডাকেন, তাহলে তিনি সাথে সাথে সেই ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন।

Please Share This Post in Your Social Media
September 2024
T W T F S S M
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930