Sharing is caring!
স্টাফ রিপোর্টার: টাকাসহ নানা সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে পেশাদার অপরাধীদের সাংবাদিক নিয়োগ দিলে পরিণতি কী ঘটে তার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত দেখা গেল বরগুনায়। আমার ভাই জুবায়ের চৌধুরীর বর্ণনায় ফুটে উঠেছে সেখানকার ঘটনা : গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা জেলা প্রতিনিধি তালুকদার মাসুদ, মাছরাঙ্গা টিভির মুসফিক আরিফ, রেডিও টুডের রিঙ্কু, বৈশাখী টিভি ও কালের কণ্ঠের মিজানসহ কয়েকজন সাংবাদিক বরগুনা প্রেসক্লাবে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এসময় প্রেসক্লাবে তারা কেন এসেছেন, কেনইবা প্রেসক্লাবের কেরাম খেলছেন এ নিয়ে তর্কে জড়ান।
এক পর্যায়ে তাদের ওপর হামলে পড়ে এনটিভির সাংবাদিক সোহেল হাফিজ ও তার ক্যামেরাম্যান আরিফুল ইসলাম মুরাদ, সংবাদ প্রকাশের কাশেম হাওলাদার, ডিবিসি টিভির মালেক মিঠু, সময় টিভির সাইফুল ইসলাম মিরাজ, যমুনা টিভির ফেরদৌস খান ইমন, সগির হোসেন টিটুসহ কয়েকজন। একজন সাংবাদিক হয়ে কিভাবে সহকর্মীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো যায় তারই জঘন্য প্রমাণ রাখেন তারা।
মাসুদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে তিনি সেখানেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। বাঁচার আকুতি জানিয়ে তাকে হাসপাতালে নেয়ার অনুরোধ করলেও তাদের মন গলেনি। প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে বন্দী রেখে গেট তালাবদ্ধ করে তার মৃত্যুর অপেক্ষা করছিলেন। (ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরাম্যান মুরাদ চিৎকার করে বলছে, ‘ও মরুক, ও মারা গেলে আমি হত্যার দায় নেবো’)
খবর পেয়ে বরগুনার সহকারী কমিশনার (ভূমি), সদর থানার ওসি, ডিবির ওসি, পৌর মেয়রসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গেলেও তারা মাসুদকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেন। পরে এসিল্যান্ডের জোড়ালো ভূমিকায় তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে অবস্থা খারাপ হলে বরিশাল শেবাচিম আইসিইউতে নেয়া হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতে মাসুদ মারা যান।
প্রেসক্লাবে সংঘটিত ওইদিনের ঘটনার কিছু ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, তার ওপর সোহেল হাফিজ, আরিফুল ইসলাম মুরাদ, কাশেম হাওলাদার, মালেক মিঠু, সাইফুল ইসলাম মিরাজ, ফেরদৌস খান ইমন কিভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
এই হামলা ও মারধরেই ক্ষান্ত হয়নি সংশ্লিষ্টরা। ১৭ জন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে দ্রুত বিচার আইনে তারাই করেছেন মামলা। ওই মামলায় আহত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে জবর দখল চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়। (আজ ৩ মার্চ তাদের সকলকে জামিন দিয়েছেন আদালত।)
এছাড়াও হামলাকারীরা একের পর এক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। মাসুদসহ অন্য সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মারধর করে উল্টো তাদেরই হামলাকারী সাজানোর পাঁয়তারা চালানো হয়। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন পর্যন্ত করা হয়। সাংবাদিক নির্যাতন সংক্রান্ত পাল্টা মানববন্ধনও হয় সেখানে।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্যসহ সাংবাদিকরা নিজ পেশার সহকর্মীদের উপর বহুবার নিপীড়ন, নির্যাতন, মিথ্যা অভিযোগ তুলে চাকরি থেকে হটিয়ে দেয়া, মামলা হয়রানিসহ হাজারো অপকর্ম চালিয়েছে। এর আগে সাংবাদিক হয়েও দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার মাহবুবুর রহমান মান্নুর নামে মিথ্যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে তাকে হয়রানির ধকলে ফেলা হয়।
বরগুনা প্রেসক্লাবের এই চক্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় যমুনা টিভির সাবেক প্রতিনিধি জাবের সোহেল ও সময় টিভির সাবেক প্রতিনিধি এম এ আজিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ তৈরি, পরিকল্পিত মানববন্ধন-সমাবেশ ও মামলা করে চাকরি থেকে বরখাস্তর ব্যবস্থা করে চক্রটি। তাদের বিরুদ্ধে ভূমি দখল, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসে নিয়মিত চাঁদাবাজী, শিশু মেলার নামে জুয়ার আসর বসিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এসব সন্ত্রাসী-খুনি নিয়োগ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয় না কেন? নাকি চাঁদাবাজ, মাস্তান, খুনিদের নিয়োগ দিয়ে মিডিয়া কর্তারা পুলকিত বোধ করেন? সাংবাদিক হত্যার পর প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি মাস্তান খুনিদের দখলেই চলে গেছে বরগুনার সাংবাদিকতা?