২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

চাটখিলে তহসিল অফিসগুলো দুর্নীতির আখড়া- সেবাগ্রহীতাদের চরম ভোগান্তি

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ২০, ২০২৩
চাটখিলে তহসিল অফিসগুলো দুর্নীতির আখড়া- সেবাগ্রহীতাদের চরম ভোগান্তি

Sharing is caring!

মোজাম্মেল হক লিটন, নোয়াখালী প্রতিনিধি:নোয়াখালী চাটখিল উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও চাটখিল পৌরসভায় দশটি ভূমি অফিসের স্থলে ৭টি ভূমি অফিস রয়েছে। এই ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে রীতিমতো দর কষাকষির মাধ্যমে চলছে ঘুষ বাণিজ্য। এসব অফিসগুলোর কিছু লালিত দালাল ও হলুদ সাংবাদিক রয়েছে। এদের মধ্যে দালালেরা সেবা গ্রহণকারীদেরকে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখিয়ে ও অফিস খরচের নামে প্রকৃত ভূমি করের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায় করে থাকে। আবার হলুদ সাংবাদিকেরা এসব অফিস থেকে মাসিক চাঁদা নিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলয় সৃষ্টি করে আসছে। তবে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে চাটখিল পৌর ভূমি অফিসে, কারণ উপজেলার পরকোট, বদলকোট ও হাটপুকুরিয়া-ঘাটলাবাগ ইউনিয়নে ভূমি অফিস না থাকায় এই ৩ ইউনিয়নের লোকজন চাটখিল পৌর অফিসে ভূমি কর পরিশোধ করা ও নামজারি সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করতে আসতে হয়। এতে করে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাহিদা মতো টাকা দিতে রাজি না হলে সেবা গ্রহণকারীদের বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করা হয়। ফলে সেবা গ্রহীতাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমাম মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, তিনি কয়েকদিন আগে চাটখিল পৌর ভূমি অফিসে ভূমি কর দিতে গেলে তার কাছে ২২ হাজার টাকা দাবি করা হয়। অনেক দর কষাকষির পর ১১ হাজার টাকা দিলে ভূমি কর নিবে বলে তাকে জানানো হয়। এরপর তিনি খাজনা না দিয়ে নোয়াখালী ডিসি অফিসে গিয়ে কর নির্ধারণী তালিকা এনে হিসাব করে দেখেন তার বকেয়া খাজনার পরিমাণ ১৩২০টাকা। তিনি এই টাকা পরিশোধ করতে আবারো ভূমি অফিস গেলে তার কাছ থেকে ভূমি কর ১৩২০ টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তিনি বিষয়টি এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে এসিল্যান্ড উজ্জল রায় কে অবগত করেন। পরে তার উপস্থিতিতে এসিল্যান্ড তহসিলদার কে ফোন দিয়ে প্রকৃত ভূমি কর আদায়ের নির্দেশ দিলে তহসিলদার ওই ইমাম থেকে ১হাজার ৩২০ টাকা ভূমি কর আদায় করতে বাধ্য হন। এর কিছুদিন পর ওই ইমাম তার এক আত্মীয়ের ভূমি কর দিতে গেলে তার কাছ থেকে ভূমি কর হিসাবে ২০০০ টাকা রাখা হয়। তবে রশিদ দেওয়া হয় ১১০০ টাকার। পরে তিনি আবারো এসিল্যান্ড কে বিষয়টি জানালে এসিল্যান্ড তাৎক্ষণিক চাটখিল পৌর তহসিলদার কে কল দিয়ে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে তহসিলদার ৯০০ টাকা ফেরত দেন। ভূমি অফিসগুলো ভূমি কর আদায় করা ছাড়াও নামজারির আবেদন তদন্তের দায়িত্ব পালন করে থাকে। নামজারির আবেদনকারী অনেকে জানান, নামজারির আবেদন ভূমি অফিসে তদন্তের জন্য আসলে অফিস থেকে কল দিয়ে অফিসে ডেকে এনে বিভিন্ন মিথ্যা সমস্যা আছে বলে মোটা অংকের টাকা আদায় করে। সরকারিভাবে নামজারির জন্য ২০ টাকার কোর্ট ফি, ৫০ টাকা নোটিস জারি ফি, খতিয়ান ফি ১০০ টাকা ও রেকর্ড সংশোধন ফি ১০০০ টাকা সহ সর্বমোট ১,১৭০ টাকা হলেও চাটখিলে নামজারির ফি স্বাভাবিকভাবে ৮/১০হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। আবার ক্ষেত্র বিশেষ সামান্য ভুলক্রুটি থাকলে ২০/২৫হাজার টাকাও নেওয়া হচ্ছে বলে অনেকেই জানান। এ বিষয়ে চাটখিল পৌর তহসিলদার আলতাফ হোসেনের মুঠোফোনে যোগযোগ করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। চাটখিল উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) উজ্জল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, দূর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কোন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা করেন। কেউ অতিরিক্ত টাকা চাইলে সঙ্গে-সঙ্গে তাকে জানাতে তিনি অনুরোধ করেন। এছাড়াও তিনি আরো বলেন, অনলাইনে খাজনা পরিশোধের যে সুযোগ রয়েছে এই বিষয়ে সেবাগ্রহীতারা যদি সচেতন হয় তাহলে ভূমি অফিসে যেতে হবে না এবং ভোগান্তি কমে আসবে।