Sharing is caring!
জামরুল ইসলাম রেজা,ছাতক থেকে :
সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্দুক যুদ্ধ, ওসি সহ সাত পুলিশ, সাধারন জনতা হতাহত ও ভ্যান চালক নিহত হওয়ার ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর সহোদর শামীম আহমদ চৌধুরী সহ পাঁচ সহোদের পাঁচ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
শনিবার পাঁচ সহোদরের আগ্নেয়াস্ত্র’র লাইসেন্স বাতিলের আদেশ জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়।
আদেশের অনুলিপি সদয় জ্ঞাতার্থে প্রধান মন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপক্তা বিভাগের সচিব, ব্যবস্থাপণা পরিচালক বাংলাদেশ মেশিন টুুলস ফ্যাক্টরী লিমিটেড গাজীপুর সেনানিবাস সহ সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্টেট মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ স্বাক্ষরিত ৩০মে এক আদেশে লাইসেন্স বাতিল সংক্রান্ত আদেশটি প্রকাশিত হয়।
যেসব আগ্নেয়াস্ত্র ও যাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে: ছাতক বাগবাড়ির মৃত আলহাজ্ব আরজ মিয়া চৌধুরীর ছেলে শাহীন আহমদ চৌধুরীর একটি ডিবিবিএল বন্দুক, তার সহোদর জামাল আহমদ চৌধুরীর পর্তুগালের তৈরী একটি এসবিবিএল বন্দুক, সহোদর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরীর এক্সট্রা ব্যারেলে একটি শটগান, সহোদর কামাল চৌধুরীর তুর্কির তৈরী এক্সটা ব্যারেলে একটি শটগান, তাদের অপর সহোদর আহমদ সাখাওয়াত চৌধুরী সেলিমের তুর্কির তৈরী এক্সটা ব্যারেলের একটি শটগান।
যে কারনে লাইসন্স বাতিল করা হয়েছে: গত ১৪ মে মঙ্গলবার রাতে সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকের সুরমা নদীর নৌপথে টোল আদায়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছাতক পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও তার সহোদর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী এ দুই আওয়ামী লীগ নেতার লালিত গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক নিরীহ ভ্যান চালক সাহাবউদ্দিন (৪৫) নিহত হয়েছেন।
তিনি পৌর শহরের আবদুস ছোবানের ছেলে। এছাড়াও ওই ঘটনায় ছাতকের ওসি. দুই এসআই চার পুলিশ সদস্য সহ আহত হন অর্ধশতাধিক লোকজন।
আহতরা পরবর্তীতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঘটনার পরপরই প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, ছাতকের সুরমা নদীতে বালু পাথর সিমেন্ট পরিবাহী কার্গো, জাহাজ বাল্ক হেড নৌকা থেকে চাঁদা সংগ্রহে স¤প্রতি ছাতক পৌরসভার মেয়র নিয়ন্ত্রিত ৯ কাউন্সিলর জোট বেধে ‘শাহজালাল সমিতি’ নামে একটি সংগঠন গঠন করেন।
এই সংগঠনের ব্যানারে পৌর শহর ঘেঁষে বয়ে চলা সুরমা নদীতে বালু, পাথর, সিমেন্ট পরিবাহী কার্গো, জাহাজ বাল্ক হেড নৌকা থেকে টোল আদায়ের নামে চাঁদা উত্তোলন করা হতো।
এনিয়ে ফেসবুকে লেখালেখির জের ধরে ছাতক পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা কালাম চৌধুরী ও তার কাউন্সিলদের সঙ্গে তারই প্রতিপক্ষ সহোদর শামীম আহমদ চৌধুরীর গ্রুপের মধ্যে বিরোধের জের ধরে ওই রাতে বন্ধুকযুদ্ধে জড়ায় দুই পক্ষ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, অতীতে এই দুই সহোদর সমঝোতার ভিত্তিতে নদী থেকে টোল আদায় করলেও গত সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের মাঝে বিরোধ দেখা দেয়। এর প্রভাব গিয়ে পড়ে নদী থেকে টোল আদায়ের ওপরও। সুরমায় নৌযান থেকে অতিরিক্ত হারে চাঁদা আদায় করা নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায়।
এদিকে সংঘর্ষের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার রাতেই পৌর মেয়র শামীম চৌধুরীর ভাই জামাল চৌধুরী, চাচা এলাইস চৌধুরীসহ কমপক্ষে ২৮ জনকে আটক কওে পরদিন আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠায়।
এ ব্যাপারে ছাতক থানার (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও আমিসহ ওই রাতে পুলিশের সাত সদস্য আহত হই। পরবর্তীতে আমার একটি পা থেকে অপারেশনের মাধ্যমে গুলি বের করা হয়।
বুধবার (১৫ মে) ছাতক থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৌরসভার ৯ কাউন্সিলরসহ ৯৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আড়াই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় একটি পুলিশ এসল্ট মামলা (নং-১৭) দায়ের করেন।
এরপর ১৬ মে দিবাগত রাতে সংঘর্ষ ও বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভ্যান চালক শাহাবউদ্দিন নিহত হওয়ার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা ৪০ তেকে ৫০ জনকে আসামী করে ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-১৯) দায়ের করেন।
পরবর্তীতে ১৭ মে শুক্রবার ছাতক থানায় পুলিশ বাদি হয়ে ৯৮জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক আরো একটি মামলা (নং-২০) দায়ের করে।
বিভিন্ন সুত্র জানায়, ছাতকে আলোচিত বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত উভয় গ্রুপের কৌশলীরাই মেয়র কালাম চৌধুরী ও তার সহোদর শামীম আহমদ চৌধুরীর সমর্থক যারা সরাসরি ঘটনার রাতে সংঘর্ষ ও বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন এমন কয়েকজন হাই প্রোপাইল দাঙ্গাবাজ এমনকি মেয়র পরিবারের লোকজনের নাম হত্যা মামলার এজাহারেই না রাখার জন্য নিহত হতদরিদ্রে ভ্যান চালকের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে পর্দার আড়ালে মূলত হত্যা মামলার নামে সাপ-লুডু খেলে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার হত্যা মামলা দায়ের করান।
এজাহারে প্রকৃত হত্যাকান্ডে জড়িত অনেককেই আড়াল করে রাখা হয়েছে, যে কারনে প্রকৃত খুনীরা থেকে যাবে অধরা এমনকি অবৈধ অস্ত্র উদ্যার অভিযান গায়েব হয়ে হয়ে যাবার আগাম ফাঁদ পাতা হয়েছে।
এদিকে লাইসেন্স বাতিলে আদেশে আরও বলা হয়, যাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে শ্রীঘ্রই রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে এবং সরাসরি আদেশের কপি প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় তারা কিংবা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্র গুলো জমা দিতে হবে।
শনিবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ পাঁচ জনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের বিষযটি নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ি যাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে তারা ছাতকে ৩০০ থেকে ৪০০ জন লোক বে আইনি সমাবেশে সমবেত হয়ে দাঙ্গায় লিপ্ত হয়ে উভয়ে পক্ষের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলিবর্ষণ, ককটেল, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, যে কারনে একজন ভ্যান চালক নিহত, পুলিশের সদস্যরা ও সাধারন লোকজন গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায়পরবর্তীতে তারা পুলিশের এসল্ট ও বিস্ফোরক মামলার আসামীও হয়েছেন।
তাই জননিরাপক্তার স্বার্থে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান,নবায়ন ব্যবহার নীতিমালায় ২০১৬ এর ২৫ ধারার নীতিমালার ১৯ এর (চ) ধারা মোতাবেক উপরোক্ত ব্যাক্তিদের অনুকুলে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।