Sharing is caring!
স্টাফ রিপোর্টারঃনওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন ব্যাতিক্রমী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি নামে এক এনজিও ১৩৯ জন গ্রাহকের প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুরে টাকা ফেরত পেতে ওই এনজিও কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী রুবি সুলতানা, দেলোয়ারা, প্রতিমা বিশ্বাস, নুরুল ইসলামসহ প্রমুখ।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলেন, ২০১৯ সালে মেহেদী হাসানসহ কয়েকজনে মিলে ব্যতিক্রম ক্ষুদ্র ব্যবসায় সমিতি নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর তারা গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রলুব্ধ করলে একটু লাভের আশায় ওই এনজিওতে লাখ লাখ টাকা রেখেছিলেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু গত ২ মাস আগে হঠাৎ করে প্রতারণা করে এনজিওর এমডি মেহেদী হাসান ১৩৯ জন গ্রাহকের প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এরপর তারা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। তাই কষ্টের অর্জিত টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
ভুক্তভোগী গ্রাহক দেলোয়ারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি একজন বিধবা মানুষ। দুই সন্তানকে সংসার আমার। আমার ছেলেকে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে ২২ লাখ টাকা তারা নেয়। তারপর ২২ লাখ টাকার কিছুদিন লাভ দেওয়ার পরে তারা আর টাকা দিতে চায় না।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার সময় টাকাগুলো রেখে যায়। ওই টাকার ওপর আমার সংসার ও ছেলেদের লেখাপড়া চলতো। এখন সংসারে চাল কেনার কোন টাকা থাকেনা। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছি। সেই টাকা নিয়ে তারা পালিয়েছে। প্রতিদিন তাদের খোঁজে এখানে আসি। কিন্তু তাদের কোন খুঁজ পাই না। আমি আমার টাকা ফেরত চাই ও মেহেদী হাসানের শাস্তির দাবি জানাই।
প্রতিমা বিশ্বাস বলেন, আমার স্বামী নেই। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। অনেক কষ্ট করে মেয়ে বিয়ের জন্য ১ লাখ টাকা জমা করে এখানে রেখেছিলাম। আমার ছেলেরা জানতো না। হঠাৎ করে তারা আর টাকা দিতে চায় না। তখন আমি এই অফিসে আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলাম। তারা শুধু আশ্বাস দিতো টাকা ফেরত দিবে। কিন্তু কিছুদিন আগে তারা অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায়। আমি এখন নিঃস্ব। টাকার জন্য মেয়েকে বিয়েও দিতে পারছি না। তাই টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নুরুল ইসলাম বলেন, রাইসমিলে কাজ করে ৫৩ হাজার টাকা জমা করেছিলাম এই এনজিওতে। সেখান থেকে আমি কোনো লাভ নেইনি। সেই টাকা নিয়েও প্রতারক মেহেদী হাসান পালিয়েছে।
ওই এনজিওর কর্মচারি বেলাল হোসেন বলেন, আমি যখন তাদের প্রতারনা বুঝতে পারি তখন তারা আমাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেয়। এরপর বিভিন্নভাবে প্রতারনা করে অসহায়-গরীব মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে গেছে মেহেদী হাসান। আমি তাদের বিচার চাই।
এ বিষয়ে ব্যাতিক্রমী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি এনজিওর এমডি মেহেদী হাসানের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভি করেনি।
এ বিষয়ে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, বিষয়টি শুনেছেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা আমার কাছে আসলে তাদেরকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।