চট্টগ্রাম ডেক্সঃ
স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫২ বছর পার হয়ে গেছে, দেশের জন্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে জীবন দিয়েছে স্বামী প্রফুল্ল ধর, একমাত্র মেয়ে বাসনা ধরকে নিয়ে দুঃখের মাঝে তেরপালের ছাউনিযুক্ত ছোট্ট কুড়ে ঘরে জীবন-যাপন করছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের কোকদন্ডী এলাকার মৃত্যু নবীন চন্দ্র ধরের ছেলে প্রফুল্ল ধরের স্ত্রী পারুল ধর ও বাবা হারা মেয়ে বাসনা ধর। নিহত মুক্তিযোদ্ধার তালিকাতে নাম থাকা সত্বেও মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সরকারি কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাননি বলে জানিয়েছে যুদ্ধে নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল ধরের অসহায় স্ত্রী পারুল ধর ও মেয়ে বাসনা ধর। যুদ্ধে নিহতদের তালিকায় প্রফুল্ল ধরের নাম আছে, কিন্তু তাঁর অসহায় পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত কেন?সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন স্থানীয় সচেতন মহল। ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের জন্যে যুদ্ধ করতে গিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারায় মৃত্যু নবীন চন্দ্র ধরের ছেলে প্রফুল্ল ধর। একমাত্র কন্যা বাসনাকে স্ত্রী পারুলের কোলে তোলে দিয়ে স্বামী দেশের জন্যে যুদ্ধ করতে যাওয়ার কারণে রাজাকার বাহিনী ওই প্রফুল্ল ধরের বসতঘর পুড়ে ছাই করে দেয়ার ফলে দীর্ঘ ১০/১২ বছর পর্যন্ত একমাত্র মেয়ে বাসনাকে নিয়ে কোথাও মাথা গোছানোর ঠাই ছিলোনা বলে জানান প্রফুল্লের অসহায় স্ত্রী পারুল। নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকার ৩৬ নং সিরিয়ালে ওই মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল ধরের নাম আছে স্বাধীনতার ৪ যুগের অধিক সময় পার হলেও মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ কোন সরকারি সুযোগ পাননি জানান স্ত্রী পারুল ধর ও মেয়ে বাসনা ধর।পরিদর্শনকালে তেরপাল ছাউনি এক কুঁড়ে ঘরে "হাউ-মাউ করে কান্না করছে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল ধরের স্ত্রী পারুল ও মেয়ে বাসনা। এসময় পারুল মুক্তিযোদ্ধার একটি তালিকা হাতে নিয়ে বলেন, এই তালিকায় আমার স্বামী প্রফুল্ল ধরের নাম আছে। কিন্তু ভাতা বঞ্চিত হয়ে অসহায়ত্বের দিনাতিপাত করছি। যুদ্ধের সময় স্বামী প্রফুল্ল ধরকে হারিয়েছি, রাজাকার বাহি নীরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বসতঘর ছাই করে দেয়ার ফলে একমাত্র মেয়ে বাসনা নিয়ে মাথা গোছানোর ঠাইও হারিয়েছিলাম, কোন উপায় না পেয়ে একমাত্র মেয়ে বাসনাকে নিয়ে বাবার বাড়ীতে চলে গিয়েছিলাম, পরে এলাকারলোকজন স্বামীর বসতভিটাতে এই কুঁড়ে ঘরটি বেঁধে দিয়েছিল, এখনো ওই কুঁড়ে ঘরে অসহায়ত্বের জীবন করছি। মুক্তিযোদ্ধারা ভাতাসহ সরকারি বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পেলেও সরকারি কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাইনি,স্বামীর নাম নিহত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আছে,অসহায়ত্বের জীবন যাপন করলেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে নিজেকে গর্ববোধ করি, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের নামের তালিকা বুকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছি, কিন্তু পাচ্ছিনা কোন ভাতা কিংবা সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা এমনকি সম্মানও, এইসব কথা জানান নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল ধরের স্ত্রী পারুল ও একমাত্র মেয়ে বাসনা। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সরকারি সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ও স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল ধরের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আকুল আবেদন জানান অসহায় স্ত্রী পারুল ধর ও একমাত্র মেয়ে বাসনা ধর। তারা আরো বলেন, প্রফুল্ল ধর যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর থেকে তাঁদের জায়গা জমি অনেকে জবর দখল করে নিয়েছে, তাছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র তাঁদের বসতঘর ও জায়গা-জমি দখল করে নিচ্ছে। এসময় পারুল ধরের হাতে থাকা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঁশখালী থেকে নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকায় দেখা যায় যুদ্ধে নিহত প্রফুল্ল ধরের নাম,কিন্তু তাঁর পরিবার কেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা থেকে দীর্ঘ ৫২ বছর যাবত কেন বঞ্চিত সেটার উত্তর নেই কারো কাছে, নেই বঞ্চিত পরিবারের কাছেও। এবিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আহমদ ছফা বলেন, বাণীগ্রাম ও কোকদন্ডী এলাকায় যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা অনেক মানুষকে হত্যা করেছিল আর ওইসময় নিহতদের সেখানে গণকবর দেওয়া হয়েছে, তবে যুদ্ধে নয় বরং সম্মুখ যুদ্ধে নিহত হওয়া আমরা বাঁশখালী থেকে ৩ জনের নাম তালিকায় দিয়েছি। এছাড়া আমার জানামতে সম্মুখ যুদ্ধে কেউ নিহত হয়েছে এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে গণহত্যার মধ্যে হয়তো অনেকেই থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
প্রকাশ কর্তৃক : ‘এডভানসড প্রিন্টং’ক-১৯/৬, রসুলবাগ,ঢাকা। মহাখালী ঢাকা হতে মুদ্রিত এবং ১৭৮, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা-১২১৭ হতে প্রকাশিত। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ অফিসঃ ৩৮৯ ডি আই.টি রোড (৫ম তলা) পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা - ১২১৯। ইমেইল: abhijug@gmail.com