২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

লক্ষ্মীপুর যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা হত্যায় টাকলা আলমগীর গ্রেপ্তার, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি

অভিযোগ
প্রকাশিত মে ৪, ২০২৩
লক্ষ্মীপুর যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা হত্যায় টাকলা আলমগীর গ্রেপ্তার, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি

মোজাম্মেল হক লিটন, নোয়াখালী: লক্ষ্মীপুরে আলোচিত যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান এবং ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম হত্যা মামলায় আলমগীর ওরফে টাকলা আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার (৩ মে) সন্ধ্যায় তিনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত জানিয়ে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক আনোয়ারুল কবীর তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার (২ মে) রাতে মামলার আরেক আসামি রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক দেওয়ান ফয়সাল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার ঘটনায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ জানায়, আলমগীরের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, দস্যুতা, অপহরণ এবং বিস্ফোরণ আইনে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা, নোয়াখালীর চাটখিল থানা এবং চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১০টি মামলা রয়েছে। আলমগীর একসময় সন্ত্রাসী লাদেন মাসুম বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। লাদেনের মৃত্যুর পর তিনি বাহিনী পরিবর্তন করেন। নোমান ও রাকিব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১৮ নম্বর আসামি আলমগীর। তিনি সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উত্তর মাগুরী গ্রামের আবু কালামের ছেলে। তাকে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জবানবন্দিতে আলমগীর জানান, ২৫ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে দুইজন লোক তার বাড়িতে যান। তখন তাকে জানানো হয়, নোমানকে সাইজ করতে হবে। এতে ওই দুইজনের সঙ্গেই মোটরসাইকেলে তিনি নাগেরহাট আসেন। সেখান থেকে তারা বশিকপুরের একটি বড় মাঠে যান। সেখানে আরও ৩০-৪০ জন লোক ছিলেন। তখন একজন লোক তাদেরকে শটগান, রিভলবার ও পিস্তলসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র দেন। পরে সাত-আটজন করে পাঁচ-ছয়টি দলে তাদের ভাগ করে দেওয়া হয়। আলমগীরের দলে আটজন ছিলেন। এসময় এক ব্যক্তি সবাইকে কার্যক্রম বুঝিয়ে দেন। তবে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নোমানকে হত্যা করতে হবে। এর জন্য টিমগুলো ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করবে। ঘটনার আগে আলমগীরের গ্রুপটি ঘটনাস্থলের কাছে করাত কলের পাশে প্রায় ৪৫ মিনিট ওঁত পেতে থাকে। পরে তারা ঘটনাস্থল থেকে গুলির শব্দ শোনেন। তারা দৌড়ে এসে দেখেন রাকিব ইমাম পড়ে আছেন। নোমান লাফ দিয়ে পালাতে থাকেন। পরে তিনজন মিলে তাকে ধরে গুলি করে হত্যা করেন। নোমান মারা গেলে তাদের গ্রুপটি নাগেরহাট মাদরাসার সামনে যায়। সেখানে থাকা অটোরিকশায় পাঁচজন চলে যান। বাকি তিনজন মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। হত্যাকাণ্ডে আলমগীর নিজেও পিস্তল ব্যবহার করেছেন। কাজ শেষে অস্ত্রগুলো ওই ব্যক্তির কাছে জমা দিয়ে দেন। পুলিশ সুপার বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে আলমগীরসহ যে আটজনকে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় সে পুলিশকে জানিয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ বি ছিদ্দিক, মংনেথোয়াই মারমা, সোহেল রানা, ডিআইওয়ান আজিজুর রহমান মিয়া ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। গত ২৫ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নোমান এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় দুর্বৃত্তরা তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মোবাইলফোন নিয়ে যায়। গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থল গিয়ে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক সেখানে তাদের মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন রাতে নিহত নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে আসামি মশিউর রহমান নিশান ও রুবেল দেওয়ানের পাঁচদিন এবং মো. সবুজ, আজিজুল ইসলাম বাবলু ও নাজমুল হোসেন নাজিমের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

Please Share This Post in Your Social Media
April 2024
T W T F S S M
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30