দেশে এপ্রিল মাসে সাধারণভাবে যেমন গরম থাকে, এবার তার চেয়ে বেশি গরম পড়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা এবার রেকর্ডও ভেঙেছে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে গ্রীষ্মকাল (মার্চ, এপ্রিল ও মে) আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা ১৯৮১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে যে হারে বেড়েছে, সে হারে বাড়তে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রীষ্মকালে দেশের সার্বিক গড় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। আর গবেষণার তথ্য বলছে, এ সময় নাগাদ দেশের সার্বিক তাপমাত্রা শূন্য দশমিক সাত (০.৭) ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে।
দেশের গ্রীষ্মকালের গরমের ধরন নিয়ে করা এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিসটিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং এবং নরওয়ের আবহাওয়াবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নরওয়েজিয়ান মেট্রোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এ গবেষণা করেছে।
‘বাংলাদেশে প্রাক্-বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কেমন বাড়তে পারে, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক মডেলের আলোকে তার পূর্বাভাস’ শীর্ষক ওই গবেষণার ফল ২০২১ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী অ্যাডভান্সেস ইন সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ–এ প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ মার্চ, এপ্রিল ও মে মাস স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে এপ্রিলে গরম সবচেয়ে বেশি পড়ছে। এই মাসে দেশে তাপপ্রবাহ বেশি বইছে।
গবেষণায় যুক্ত ছিলেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মেয়াদে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার একইভাবে বজায় থাকলে সামনে আরও চরম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তবে মোটামুটি উদ্যোগ নিলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ২ ডিগ্রির মধ্যে এবং সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিলেও তা শূন্য দশমিক আট (০.৮) ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের তাপমাত্রা বা গরম বৃদ্ধির দিক থেকে এলাকাভিত্তিক পার্থক্য দেখা যাবে। সেই পার্থক্য অবশ্য ইতিমধ্যে দেখা গেছে। চলতি গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে উত্তপ্ত থাকছে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো। এসব জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম বেড়েছে চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও ঝিনাইদহে। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, পাবনা ও নওগাঁর তাপমাত্রা অন্য জেলাগুলোর তুলনায় বেশি। দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি।
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত দিন কাটিয়েছেন ঢাকাবাসী। এদিন ঢাকার তাপমাত্রা ওঠে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা ১৯৬৫ সালের পর সর্বোচ্চ। একই দিনে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা তখন পর্যন্ত দেশে ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর এক দিন পরেই সেই রেকর্ড ভাঙে। ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ওঠে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। একই দিনে রাজশাহী জেলায় ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ৩০ বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী মার্চে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলে তা ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি ও মে মাসে প্রায় ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা দেশের সামগ্রিক গড় তাপমাত্রার চেয়ে আরেকটু বেশি থাকে। রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মার্চে ৩২ দশমিক ৫ ডিগ্রি, এপ্রিলে ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি ও মে মাসে প্রায় ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে, তা বজায় থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রীষ্মকালে দেশের গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়াবে। তখন এপ্রিলে ঢাকার গড় তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৭ ডিগ্রিতে।
আবহাওয়ার পরিস্থিতি বিবেচনায় কোনো এলাকার তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেখানে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। সেই হিসাবে ভবিষ্যতে এপ্রিলের পুরো সময় তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গবেষণা দলের সদস্য ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বাড়ছে। কিন্তু তা বাংলাদেশের কোন সময়ে কী পরিমাণে বাড়তে পারে, তা বুঝতে আমরা প্রাক্-বর্ষা মৌসুমের অবস্থা নিয়ে গবেষণাটি করেছি।’ তিনি বলেন, এই মৌসুম এমনিতেই দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম সময়। আর এ বছর এপ্রিলের উষ্ণতা আগের অনেক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এখন থেকে তাপমাত্রা কমানোর উদ্যোগ না নিলে আরও চরম পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আবহাওয়াবিদদের মতে, বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর অঞ্চলে মৌসুমি বায়ু দেরিতে পৌঁছায়। ফলে বৃষ্টি কম হয়। বর্ষার আগে গ্রীষ্মকালের বৃষ্টি হয় মূলত স্থানীয় উৎস থেকে তাপের কারণে তৈরি জলীয় বাষ্প থেকে। ওই অঞ্চলে নদী ও জলাভূমি কম থাকায় সেখানে জলীয় বাষ্প তৈরি কম হয়, ফলে মেঘ-বৃষ্টিও কম থাকে। যে কারণে তাপমাত্রা সেখানে বেশি হয়।
তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, দ্রুত নগরায়ণ। এই দুই শহরে জলাভূমি কমে আসা ও গাছপালা কেটে ফেলার কারণে জলীয়বাষ্পের উৎস কমে আসছে। একই সঙ্গে কংক্রিটের অবকাঠামো বেড়ে যাওয়ায় সেখানে তাপমাত্রা বেশি সময় ধরে জমে থাকছে। বায়ুদূষণের কারণে সেখানে বৃষ্টি কম হচ্ছে। এমনকি শীতকালেও তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না।
এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সময় এবং এলাকাভিত্তিক পার্থক্য আছে। এর সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রা ও কৃষিব্যবস্থা যুক্ত। তাপমাত্রা বেশি বাড়লে সামগ্রিকভাবে এই খাতগুলোর ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটাই তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ ছাড়া আমাদের টিকে থাকার কোনো উপায় নেই।’
<p>ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক -শেখ তিতুমীর আকাশ।<br>সহকারী সম্পাদক-নাসরিন আক্তার রুপা।<br>বার্তা সম্পাদক-মোঃ জান্নাত মোল্লা।<br>প্রধান উপদেষ্ঠা: আলহাজ্ব খন্দকার গোলাম মওলা নকশে বন্দী ।<br><br>প্রকাশ কর্তৃক : এডভানসড প্রিন্টং - ক-১৯/৬, রসুল বাগ, ঢাকা। মহাখালী ঢাকা হতে মুদ্রিত এবং ১৭৮, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা-১২১৭ হতে প্রকাশিত। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ অফিসঃ ৩৮৯ ডি আই.টি রোড (৫ম তলা) পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা ১২১৯ ,<br>মোবাইল: - ০১৮৮৩২২২৩৩৩,০১৭১৮৬৫৫৩৯৯</p><p>ইমেইল : abhijug@gmail.com ,</p>
Copyright © 2024 Weekly Abhijug. All rights reserved.