১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করলেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো

প্রকাশিত মার্চ ৪, ২০২৩
চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করলেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো

Sharing is caring!

রাসেল দাশ,  ব্যুরো প্রধান, চট্টগ্রাম

গত ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৩, সকাল ০৯.০০ টায় সময় সিএমপি, খুলশী থানাধীন টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যক্ত ১১নং বিল্ডিং এর সামনে ছেনোয়ারা বেগম প্রকাশ ছেনু এর টিনশেড ভাড়াটিয়াদের ঘরের ভিতর ভুক্তভোগী  মোঃ সালাউদ্দিন শেখ (৪৫), সাং- অজ্ঞাত এর গলায় জবাইকৃত অবস্থায় অর্ধপচনকৃত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় সিএমপি খুলশী থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক প্রাথমিক  প্রতিবেদন প্রস্তুতপূর্বক ময়না তদন্তের জন্য চমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।

প্রাথমিকভাবে জানা যায় যে, অজ্ঞাতনামা আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মৃত সালাউদ্দিনকে ২৪ শে ফেব্রুয়ারী, ২৩ সন্ধ্যা ০৬.০০ টা হতে ২৭ শে ফেব্রুয়ারী ২৩, সকাল ০৯.০০ টার মধ্যে যে কোন সময় জবাই করে হত্যা করে লাশ বর্ণিত ঘটনাস্থলে ফেলে যায়। উক্ত ঘটনায় এসআই জামাল উদ্দিন, খুলশী থানা, সিএমপি, চট্টগ্রাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে খুলশী থানার মামলা নং-৩০, গত ২৮ শে ফেব্রুয়ারী ২৩, ধারা-৩০২-২০১-৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০ রুজু হয়। উক্ত ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে এবং উক্ত ঘটনাটি সম্পূর্ন ক্লু-লেস হত্যাকান্ড হওয়ায় পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো মামলার রহস্য উদঘাটনে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। মামলা রুজু হওয়ার পর পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো তা অধিগ্রহন করে। প্রাথমিকভাবে ভুক্তভোগী সালাউদ্দিন এর পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা তথা পিতা- মৃত আব্দুল মালেক শেখ, মাতা- রেজিয়া বেগম, গ্রাম- বরপা, মাসাবো (দক্ষিণ), ওয়ার্ড নং-০৬, তারাবো পৌরসভা, পোঃ- রুপসী, থানা- রূপগঞ্জ, জেলা- নারায়নগঞ্জ, বর্তমানে- টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যক্ত ১১নং বিল্ডিং এর সামনে ছেনোয়ার বেগম প্রকাশ ছেনু এর টিনশেড ঘর মর্মে শনাক্ত করা হয়।

উক্ত ঘটনাটি পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা, পিপিএম-সেবা’র নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ কামরুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মনোজ কুমার দে, পুলিশ পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন, পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক-২ সঙ্গীয় অফিসার এএসআই আজমীর শরীফ সহ পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এর আভিযানিক দল কর্তৃক পুলিশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ০৩ মার্চ ২৩, বিকাল ০৩.১৫ টায় সময় ডিএমপি, ঢাকার আওতাধীন ধানমন্ডি থানাধীন মিনা বাজারের সামনের রাস্তা এলাকা হতে অভিযুক্ত সন্দিগ্ধ আসামী আব্দুর রহমান (৩২), পিতা মোঃ আলাউদ্দিন, মাতা-বিবি হাজেরা, গ্রাম -বক্স আলী ফকির বাড়ী, হরিষপুর, ০২নং ওয়ার্ড, থানা-সন্দ্বীপ, জেলা-চট্টগ্রাম, বর্তমানে- টাইগারপাস, রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যক্ত ১১নং বিল্ডিং এর সামনে ছেনোয়ারা বেগম এর টিনশেড ঘর, থানা- খুলশী, জেলা- চট্টগ্রামকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। ধৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভুক্তভোগী সালাউদ্দিন, আসামী আব্দুর রহমান এবং অপর পলাতক আসামী সিলেটি স্বপন খুলশী থানাধীন টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যক্ত ১১নং বিল্ডিং এর সামনে ছেনোয়ারা বেগম প্রকাশ ছেনু এর টিনশেড ঘরের ভাড়াটিয়া ছিল। প্রথমে সালাউদ্দিন ও পলাতক আসামী সিলেটি স্বপন উক্ত কক্ষে ভাড়া থাকতো। আসামী আব্দুর রহমান টাইগার পাস ঘুরাইন্না গেইট এলাকায় দুলালের চা এর দোকানে কাজ করত। উক্ত চা এর দোকানে আসা-যাওয়ার সূত্র ধরে ভুক্তভোগী সালাউদ্দিন ও পলাতক আসামী সিলেটি স্বপন এর সাথে আসামী আব্দুর রহমানের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে থাকার সমস্যা হওয়ায় আসামী আব্দুর রহমান ভুক্তভোগী সালাউদ্দিন ও পলাতক আসামী সিলেটি স্বপন একসাথে বর্তমান ঠিকানার বাসায় ফেব্রুয়ারী ২৩, মাসের প্রথম থেকে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস শুরু করে। একই রুমে ভাড়া থাকার সূত্রে ০৩ জন একই সাথে হালিশহর আবাহনী মাঠ ও পলোগ্রাউন্ড বাণিজ্য মেলার বিভিন্ন স্টল তৈরির কাজ করে। কাজের মজুরীর টাকা সালাউদ্দিন গ্রহন করত। কাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত টাকা মো সালাউদ্দিন কম বলতো মর্মে আসামী সিলেটি স্বপন ও আব্দুর রহমান ধারণা করত। এই নিয়ে সালাউদ্দিনের সাথে প্রায় ঝগড়া-বিবাদ হত। ভুক্তভোগীদের বাসায় ব্যবহারের পানি ক্রয় করে ব্যবহার করতে হত। সালাউদ্দিন বেশি পানি ব্যবহার করত মর্মে দাবী করে আসামীদের সাথে প্রায় তার ঝগড়া-বিবাদ হত। এরই এক পর্যায়ে পলাতক আসামী সিলেটি স্বপন ভুক্তভোগী সালাউদ্দিন এর নিকট তার পূর্বের মজুরী বাবদ বকেয়া ৭,০০০(সাত হাজার) টাকা দাবী করলে সালাউদ্দিন ৩,৫০০(তিন হাজার পাঁচশত) টাকা বকেয়া থাকার কথা স্বীকার করে এবং তার মধ্যে ২,০০০(দুই হাজার) টাকা পরিশোধ করে। অবশিষ্ট ১,৫০০(এক হাজার পাঁচশত) টাকা পলাতক আসামী সিলেটি স্বপনকে পরিশোধ করতে রাজি হলেও সিলেটি স্বপন তা মানতে চায়নি। যার ফলে বিরোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এরই এক পর্যায়ে ঘটনার আনুমানিক সপ্তাহখানেক পূর্বে আসামী আব্দুর রহমান ও সিলেটি স্বপন, ভুক্তভোগী সালাউদ্দিনকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা একটি ধারালো ছুরি কিনে। ঘটনার দিন ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২৩, সিলেটি স্বপন ও আব্দুর রহমান কাজে না গিয়ে বাসায় অবস্থান করছিল। রাত ১০.০০-১০.৩০ টায় দিকে সালাউদ্দিন কাজ শেষে বাসায় ফিরে আসে এবং কিছুক্ষণ মোবাইল ফোন দেখে ঘুমিয়ে পড়ে। আসামী আব্দুর রহমান ও সিলেটি স্বপন কিছুক্ষণ ছক্কা খেলে তারাও ঘুমিয়ে পড়ে। পরিকল্পনা মোতাবেক রাত ০১.০০ টার দিকে সিলেটি স্বপন ঘুম থেকে উঠে এবং অপর আসামী আব্দুর রহমানকেও জাগিয়ে তোলে। আসামী স্বপন প্রথমে ছুরি দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় সালাউদ্দিনের গলায় আঘাত করে এবং আসামী আব্দুর রহমান ভুক্তভোগীর দুই হাত চেপে ধরে। এরপর আসামী সিলেটি স্বপন এর হাত থেকে ছুরি নিয়ে আসামী আব্দুর রহমান সালাউদ্দিনের গলায় একটি আঘাত করে। তখন সালাউদ্দিন আসামী আব্দুর রহমান এর হাত থেকে ছুরি কেড়ে নিতে চাইলে তার ডান হাতে কেটে যায় এবং আসামী আব্দুর রহমান এর কব্জির উপরেও কাটা জখম হয়। আঘাতের তীব্রতায় সালাউদ্দিন এর দেহ নিস্তেজ হলে আসামী আব্দুর রহমান তার নিজের হাতের কাটা অংশ রুমাল দিয়ে বেধে নেয় এবং রুমে থাকা গামছা দিয়ে সালাউদ্দিনের দুই হাত বাধে,অপর আসামী সিলেটি স্বপন তার দুই পা ওড়না দিয়ে বাধে। পরবর্তীতে আসামীদ্বয় রুমে থাকা আরেকটি গামছা ও কম্বল দিয়ে সালাউদ্দিনের মুখ ঢেকে দেয়। এরপর আসামী আব্দুর রহমান ও সিলেটি স্বপন সালাউদ্দিনের মানিব্যাগে থাকা ৩৫০(তিনশত পঞ্চাশ) টাকা ভাগ করে নেই এবং সালাউদ্দিনের মোবাইল ফোন আসামী আব্দুর রহমান নিজের কাছে রাখে। পরবর্তীতে আসামীরা রুমের দরজা বন্ধ করে রিক্সা করে অলংকার যায়। তারা অলংকার থেকে বাসে করে ফেনী যায় এবং ফেনী থেকে সিলেট যায়। সিলেট থেকে তারা উভয়ে নরসিংদীর মালদ্বীপ যায়। সেখানে আসামী সিলেটি স্বপন কাজের জন্য থেকে যায় এবং আসামী আব্দুর রহমান নারায়নগঞ্জে তার মামার বাসায় যায়। সেখানে আব্দুর রহমান একদিন থেকে কুমিল্লা চাঁন্দিনায় তার শ্বশুরের বাসায় যায়। পরবর্তীতে পুলিশি অভিযানের মুখে আসামী আব্দুর রহমান পালিয়ে ঢাকা ধানমন্ডি তার স্ত্রীর কাছে চলে যায়। পিবিআই টিম তাকে ০৩ই মার্চ ২৩, বিকাল ০৩.১৫ টার সময় ডিএমপি, ঢাকার আওতাধীন ধানমন্ডি থানাধীন মিনা বাজারের সামনের রাস্তা এলাকা হতে গ্রেফতার করে।

পলাতক আসামী সিলেটি স্বপনকে গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ধৃত আসামী আব্দুর রহমানকে ০৪ই মার্চ ২৩, তারিখ বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামে সোপর্দ করা হয় এবং ০৭(সাত) দিন পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন দাখিল করা হয়।