২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

চট্টগ্রামে পুলিশের সোর্স কায়েস হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৬

Weekly Abhijug
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
চট্টগ্রামে পুলিশের সোর্স কায়েস হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৬

সৌমেন সরকার চট্টগ্রাম মহানগর :

চট্টগ্রাম রাঙামাটি অঞ্চলের পাহাড়ি এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নির্মমভাবে নিহত হয় পুলিশের সোর্স কায়েস। ওই মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করে আবার চট্টগ্রামে ফেরত আসে তারা। পরে হুমায়ূন কবির আবার একা গিয়ে রাঙামাটির ওই মাদক ব্যবসায়ীর সাথে দেখা করে। সেসময় তারা তাকে আটক করে বেধড়ক মারধর করে।এসময় মারধরের কারণ হিসেবে তারা জানায়— হুমায়ুন পুলিশের সোর্স; সেটি এরআগে হুমায়ূনের সঙ্গে যাওয়া কায়েসই নাকি তাদের নিশ্চিত করেছে।সেই ক্ষোভ থেকেই কায়েসকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় হুমায়ুন। পরে এক লাখ টাকার বিনিময়ে কায়েসের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সহযোগিতায় ছুরিকাঘাতে তাকে খুন করে। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় মনসুরাবাদে নগর ডিবি বন্দর ও পশ্চিম বিভাগের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-বন্দর ও পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন গণমাধ্যমে এসব কথা বলেন।গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে কর্ণফুলী উপজেলার সিডিএ আবাসিক এলাকায় সড়কের পাশ থেকে পুলিশের সোর্স মোহাম্মদ কায়েসের (৩৩) ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় সোমবার (২৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশের ‘সোর্স’ মোহাম্মদ কায়েস (৩৩) হত্যার সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন— মো. হুমায়ূন কবির প্রকাশ মাসুদ তালুকদার (৪৫), মো. খোকন প্রকাশ সোনা মিয়া (৩১), মো. রফিকুজ্জামান সানি মিয়া প্রকাশ আফরান (২২), মো. নজরুল ইসলাম (২৩), মো. রায়হান (২১) এবং আব্দুল কাদের জীবন (২২)।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, চার মাস আগে মো. কায়েস ও গ্রেপ্তার হুমায়ূন কবির মাদক সংক্রান্ত কাজে রাঙ্গামাটির পাহাড়ি এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছে যায়। মাদকের ব্যাপারে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে আসামি মো. হুমায়ূন কবির প্রকাশ মাসুদ তালুকদার ও মো. কায়েস চট্টগ্রাম চলে আসে। পরে হুমায়ুন রাঙ্গামাটিতে ওই মাদক ব্যবসায়ীর কাছে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা তাকে পুলিশের সোর্স বলে আটক করে এবং বেদম মারধর করে। এসময় তার অণ্ডকোষে ইট দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। সেখান থেকে সে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে চট্টগ্রাম চলে আসে এবং কায়েসই মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে তার সোর্সের পরিচয় জানিয়ে দিয়েছে বলে পাহাড়ীরা জানিয়েছে। তাই সেই থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামি হুমায়ুন মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় কায়েসকে মেরে ফেলবে।তিনি বলেন, প্রায় ৩ মাস আগে থেকেই কায়েসকে হত্যার চেষ্টা করে আসছিল হুমায়ূন। কায়েসকে সেটা কখনো বুঝতে দিত না। এছাড়া কায়েসকে দেখা করতে বললে কায়েস কখনও ৩-৪ জন সঙ্গে নিয়ে আসা ছাড়া দেখা করতো না। তাই কয়েকবার কায়েসকে হত্যার চেষ্টা করেও কোন ক্ষতি করতে পারেনি হুমায়ূন। এর মাঝে আসামি হুমায়ুন কায়েসকে কিভাবে হত্যা করবে সে বিষয়ে কায়েসের ঘনিষ্ঠ একজনের সঙ্গে আলোচনা করে। এতে ওই ব্যক্তি এক লাখ টাকা মধ্যস্থায় রাজি হন। পরে গত ২০ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টায় কায়েসের মোবাইলে ফোন দিয়ে তাকে মইজ্জারটেক আসতে বলে হুমায়ূন। এরমধ্যে আসামি হুমায়ুন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কায়েসকে মেরে ফেলার জন্য তার (কায়েস) ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে তার লোকজন নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলে। কায়েস মইজ্জারটেক এসে হুমায়ুনেরর সঙ্গে দেখা করলে সে তাকে চা-নাস্তা খাওয়ায় এবং বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। পরে সন্ধ্যা পার হলে একটি কাজের কথা বলে কায়েসকে সিএনজিতে তুলে কলেজ বাজারের দিকে ঘুরে চরলক্ষ্যা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সিডিএ আবাসিক এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে রাস্তায় সিএনজিতে কায়েসকে বসিয়ে রেখে হুমায়ূন নেমে যায় এবং সে পুনরায় ফিরে আসা পর্যন্ত থাকতে বলে মইজ্জারটেক চলে যায়।
‘আসামি হুমায়ুন দ্রুত মইজ্জারটেক থেকে আরেকটা সিএনজি নিয়ে আপ-ডাউন ভাড়ার কথা বলে ঘটনাস্থলে এসে কায়েস বসে থাকা সিএনজির পিছনে এসে অবস্থান করে। পূর্ব পরিকল্পনা মতো সিএনজিতে বসে থাকা কায়েসকে দু’দিক থেকে উপর্যুপরি ছুরি এবং ভোমর দিয়ে আঘাত করতে থাকে। চুরির আঘাতে কায়েস চিৎকার দিয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশে সিডিএ আবাসিক ড্রেনের দিকে দৌড় দেয়। সেখানেও হত্যাকারীরা পুনরায় তাকে ধরে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। কায়েসের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরে তাকে বহনকারী সিএনজি স্টার্ট করতে দেরি করায় আসামি হুমায়ুন তার ভাড়াকৃত সিএনজিতে চারজনকে তুলে নেয় এবং রায়হান ও জীবন মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে তারা সবাই মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।’এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও এক আসামি পলাতক রয়েছে জানিয়ে নগর পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার ৬ জনের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া হত্যাকাাণ্ডের প্রধান আসামি হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র ও মাদক মামলা রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media
September 2023
T W T F S S M
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930