২৬শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা রমজান, ১৪৪৪ হিজরি

কক্সবাজার সমুদ্রকে নিরাপদ রাখা আবশ্যক; প্রধানমন্ত্রী

অভিযোগ
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৭, ২০২২
কক্সবাজার সমুদ্রকে নিরাপদ রাখা আবশ্যক; প্রধানমন্ত্রী

কাজল কান্তি দে ক্সবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ অবাধ বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্বার্থেই সমুদ্রকে নিরাপদ রাখা আবশ্যক বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ হয়ে থাকে সমুদ্রপথে। সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও অনুসন্ধানের বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্র সম্পদের এই অপার সম্ভাবনা উপলব্ধি করে

বাংলাদেশের সামুদ্রিক খাতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সমৃদ্ধ অর্থনীতি কেবল তখনই সম্ভব, যখন আমরা সমুদ্রে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবো। সে লক্ষ্যে আমরা সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ গুণগত উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে নৌবাহিনীকে আধুনিকায়ন করে যাচ্ছি।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ ২০২২’ (আইএফআর ২০২২) কক্সবাজারের ইনানীতে আয়োজনের শুভ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কূটনৈতিক মিশনের সদস্যরা; সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা, অংশগ্রহণকারী নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড প্রধানরা, প্রতিনিধিরা, অন্যান্য সামরিক ও অসামরিক সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংঘাত নয়, সমঝোতা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনও সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের লক্ষ্য শান্তি স্থাপন এবং শান্তি বজায় রাখা।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনও
যুদ্ধ যে মানবজাতির জন্য কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকনির্দেশনায় আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। জাতি হিসেবে আমরা সর্বদা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।
সেই নীতি মেনেই আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিকট প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক সব দেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বিদ্যমান।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সংঘাত নয়, সমঝোতা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনও সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের লক্ষ্য শান্তি স্থাপন এবং শান্তি বজায় রাখা।’ যেকোনও যুদ্ধ মানবজাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলমান
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। নিকট অতীতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন দেখাতে সক্ষম হয়েছি উল্লেখ করে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত মতপার্থক্য সৌহার্দপূর্ণভাবে সমাধানের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে আমরা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এই বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে তিনটি দেশরই সুনীল অর্থনীতি বিকাশের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি
হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি আমরা করতে পেরেছি।’

অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি বাংলাদেশ আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিগত দুই দশক ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ
সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশগুলোর একটি। ২০১০ সাল থেকে সুদূর ভূমধ্যসাগরের লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ মোতায়ন রয়েছে। এসব কার্যক্রম বিশ্ব শান্তির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারেরই বহিঃপ্রকাশ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক সীমানার মাধ্যমে আমাদের সব দেশ বিভক্ত হলেও বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনে সমুদ্র উপকূলীয় সব দেশের সঙ্গে আমরা একই সূত্রে গাঁথা। ‘ফ্রেন্ডশিপ বিয়োন্ড দ্য হরিজোন’ উপজীব্যকে ধারণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত ‘আইএফআর-২০২২’ ইভেন্টটি আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে, যা সব সামুদ্রিক দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধিতে এবং
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
‘অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্রের দেশ
বাংলাদেশ। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোনালি বালুকাময় সৈকত। বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনার দেশ। আমি আশা করি, আইএফআর ২০২২-তে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সমুদ্র, সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা, পর্যটন ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে কক্সবাজারে আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০২২’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ‘আইএফআর ২০২২’
আয়োজন করার জন্য আমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি অংশগ্রহণকারী সব দেশ, বিভিন্ন দেশের নৌপ্রধান এবং প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই- আলম চৌধুরী
লিটন, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একাধিক সংসদ সদস্য, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক- বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সামরিক কর্মকর্তারা।

Please Share This Post in Your Social Media
March 2023
T W T F S S M
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031