Sharing is caring!
অভিযোগ স্পোর্টস:দিস ইজ ব্রাজিল, দিস ইজ বিউটিফুল গেম’-ধারাভাষ্যকারের মুখে কয়েকবারই উচ্চারিত হয়েছিল এমন শব্দবন্ধ। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল যে নান্দনিক ফুটবল উপহার দিয়েছে, তা দেখে ধারাভাষ্যকার কেন ফুটবল-ভক্ত মাত্রই মুগ্ধ হতে বাধ্য। স্টেডিয়াম নাইন সেভেন ফোরে নেইমার, ভিনিসিউস জুনিয়র, রিচার্লিসন,পাকেতারারা রীতিমতো ফুটবল শৈলীর পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন যেন! এক সমর্থক যেমন মন্তব্য করেছেন, শুধু পাঁচ বিশ্বকাপ জেতার জন্য না। এই সব মোহনীয় মুহূর্তের জন্যই ব্রাজিল অনন্য।
গ্রুপপর্বে তিন ম্যাচে মাত্র তিনবার প্রতিপক্ষের জালভেদ করতে পেরেছিল ব্রাজিল, যা ১৯৭৮ বিশ্বকাপের পর গ্রুপপর্বে ব্রাজিলের সবচেয়ে কম গোলের রেকর্ড। তার সবশেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে হারের দগদগে ক্ষত এবং গোল করতে না পারা—সব মিলিয়ে নেইমারদের মধ্যে একটি বিস্ফোরণ দেখার অপেক্ষা ছিল। সেটাই আজ দেখা গেল যেন।
হেক্সা মিশনে কাতারে গেছে ব্রাজিল। তবে গ্রুপপর্বে কোথায় যেন সুরটা কেটে যাচ্ছিল। তার ওপর দলের প্রাণভোমরা নেইমারের ইনজুরিও ছন্দপতন ঘটায় দলে। আর তাই ইনজুরি কাটিয়ে নেইমার ফিরতেই চেনা ছন্দের ভয়ঙ্কর সেই ব্রাজিলকে দেখল ফুটবলবিশ্ব।
বিশ্বসেরা আক্রমণভাগের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) স্টেডিয়াম নাইন সেভেন ফোর ভাসে গোল বন্যায়। পর্তুগালকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয়া দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলায় মেতে ওঠে ব্রাজিল। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই
ভিনিসিউস-রাফিনিয়া-রিচার্লিসনরা জাদুতে বুঁদ হয় ফুটবলভক্তরা। গোলও ধরা দিতে থাকে একের পর এক। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে সবশেষ দেখায় গুণে গুণে পাঁচ গোল দিয়েছিল ব্রাজিল। সেই দলটির বিপক্ষে বিশ্বকাপের মঞ্চে মুখোমুখি হতেই গেল জুনের ম্যাচটা যেখানে শেষ করেছিল ব্রাজিল, আজ যেন শুরু করল সেখান থেকেই।
বিশ্বকাপে এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার কোনো ম্যাচের প্রথমার্ধে চার গোল করল ব্রাজিল। ১৯৫৪ আসরে মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথম এমন কিছু করেছিল তারা। যদিও প্রথমার্ধের চার গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান আর বাড়াতে পারেনি ব্রাজিল। ইনজুরির শঙ্কা থাকায় দ্বিতীয়ার্ধে ঝুঁকি নিতে চাননি ব্রাজিল কোচও। সেরা তারকাদের উঠিয়ে নিয়েছিলেন একে একে। চোট এড়াতে এদের মিলিতাও, দানিলো ও ভিনিসিউসকে তুলে নেন। শুধু কি তাই, ৮১ মিনিটে গোলকিপার আলিসনকেও তুলে নেন তিতে! এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ২৬ খেলোয়াড়কেই খেলার সুযোগ করে দিলেন ব্রাজিল কোচ।
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতে ৯০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলেও ব্রাজিলের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল মূলত প্রথমার্ধের ৩৫ মিনিটেই। ম্যাচের সপ্তম মিনিটে রাফিনিয়ার দুর্দান্ত পাস থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে সহজেই বল জালে জড়ান ভিনিসিউস। তার বেঁধে দেয়া সুরে একের পর এক ঝঙ্কার তুললেন নেইমার-রিচার্লিরা। আর তাতেই প্রথমার্ধেই হার দেখে ফেলে দক্ষিণ কোরিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে নেইমারদের উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। জানিয়েছিলেন, হাসপাতাল থেকেই ম্যাচটি দেখবেন। সেই সঙ্গে উত্তরসূরীদের নিজের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতিও মনে করিয়ে দেন পেলে। বলেন, ১৯৫৮ সালে সুইডেনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বাবাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা ভাবছিলাম। আমি জানি আমার মতো জাতীয় দলের অনেকেই একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং প্রথম বিশ্বকাপের খোঁজে আছে। আমি তোমাদের অনুপ্রাণিত করতে চাই, আমার বন্ধুরা মিলে আমি এখান থেকে হাসপাতালে বসে খেলা দেখবো। আমরা একসঙ্গে আছি। শুভকামনা আমাদের ব্রাজিল!
পেলের শুভকামনা বিফলে যায়নি। হেক্সা মিশনে আরও কাছাকাছি চলে গেছে তার উত্তরসূরীরা। গ্রুপপর্বে ক্যামেরুনের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত হারের পর এমন পারফরম্যান্স খুবই প্রয়োজন ছিল ব্রাজিলের জন্য। সেটা তো তারা করেছেই, বিশ্বকাপের বাকি প্রতিপক্ষদেরও একটা বার্তাও দিয়ে রাখল তারা। নেইমার-রিচার্লিসনদের ভয়ঙ্কর এই ব্রাজিলকে রুখবে কে, এমন প্রশ্নও এতক্ষণে উঠে গেছে!