Sharing is caring!
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তারুণ্যের সংলাপ নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ
নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ নোয়াখালী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন দেড় শতাধিক তরুণ তরুণী। চোখের সামনে কাউকে নির্যাতনের শিকার হতে দেখলে চুপ করে না থাকারও শপথ নেন তারা। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে প্রচারের অংশ হিসেবে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের সহায়তায় পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক-প্রান ও একশানএইড বাংলাদেশসহ জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের আয়োজনে ‘প্রজন্ম সংলাপ’ ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে শপথ গ্রহণের আয়োজন করা হয়। বুধবার বেলা ১২টার দিকে নোয়াখালী বিআরডিবি মিলনায়তনে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে এনআরডিএস, গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট, বন্ধন, নিজেরা করি, ভলেন্টিয়ার ফর বাংলাদেশ, এইচএসবিও, ধ্রুবতারা, প্রথমআলো বন্ধুসভা নোয়াখালী ও রয়েল ইকোনোমিক্স ক্লাবের তরুণ সদস্যরা সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপের শুরুতে পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক-প্রাণের নির্বাহী পরিচালক নুরুল আলম মাসুদ নোয়াখালীতে যৌন হয়রানি বিষয়ক একটি জরিপ তুলে ধরেন। নুরুল আলম মাসুদ বলেন, যৌন হয়রানির মতো একটি অপরাধ সংগঠনের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরাধকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারা। উত্যক্তকারী পুরুষ যেমন মনে করে এটি কোনো অপরাধ নয়, তেমনি নারীদের আনেকাংশও এই ধরণের অগ্রহণযোগ্য আচরণকে অপরাধ হিসেবে চেনেন না। ফলে অনেক সময় দেখা যায় নারীরা হয়রানি শিকার হবার জন্য নিজেরাই নিজেদেরকে দায়ী করছেন। নুরুল আলম মাসুদ আরও বলেন, বিগত কয়েক মাসে নোয়াখালী এমন যৌন হয়রানি থেকে শারীরিক আক্রমণ, প্রতিবাদকারীর উপর হামলা, ধর্ষণ এমনকি খুনের মতো ঘটনা ঘটেছে। জরিপে নারীরা অংশগ্রহণ করেছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৫৭ শতাংশ মনে করেন নোয়াখালীতে নারীর প্রতি সহিংসতা আশংকাজনক হারে বেড়েছে। প্রায় ১৮ শতাংশ নারীর মতে সহিংসতা একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৫ শতাংশ নারী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। ৮৭.৫ শতাংশ অংশগ্রহকারী জানিয়েছেন, নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টি গুরুতর এর প্রতিকারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, যৌন হয়রানি বাংলাদেশের বহুল আলোচিত বিষয় এবং উল্লেখযোগ্য সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০২ অনুযায়ী ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি ফৌজদারি বা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কোথাও যেন হয়রানির হাত থেকে নারীদের নিস্তার নেই। ফলাফলস্বরূপ নারীদের মধ্যে উত্ত্যক্ত হবার এক ধরণের ভয় কাজ করে যা তাদের সুস্থ স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ, সৃজনশীলতা, সম্ভাবনা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যৌন হয়রানির শিকার হয়ে অনেক মেয়ে শিক্ষালন থেকে ঝরে পড়ছেন, বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছেন, ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন এমনকি আত্মহনন বেড়ে চলেছে। আবার এই ধরণের ঘটনার প্রতিবাদ করলেও হামলার শিকার হচ্ছেন অনেক নারী, বা তাদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন। নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই মূলত উত্যক্ত করা বা যৌন হয়রানির সূত্রপাত ঘটে। জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুলিশ নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ঘটনার সংশ্লিষ্ট পুলিশের ফোন নম্বর না থাকলেও জাতীয় ভাবে ৯৯৯ সেবা রয়েছে। নোয়াখালীতে ইভটিজিং, মাদক ও কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভা সমাবেশ করছি। মানুষকে বুঝাচ্ছি। কোনো অভিযোগ পেলে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিনত হবে। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। নারী নির্যাতন কমাতে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। সমাজে বিভিন্ন কুসংস্কার রয়েছে, সেগুলোর পরিবর্তন করতে হবে। সংলাপে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের জাতীয় প্রোগ্রাম অফিসার জেফারসন চাকমা, উন্নয়ন সংস্থা এনআরডিএস এর প্রধান নির্বাহী আবদুল আউয়াল, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ফারিয়ান তাহরিম, আফ্রিদা জিননুরাইন উর্বী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি আবু নাছের মঞ্জু, ইউএনএফপিএ এর নোয়াখালীর ফিল্ড অফিসার ডা. সাদিয়া সামরিন হৃদি, ট্রান জেন্ডার অধিকার কর্মী সামসুল ইসলাম পলক, একশনএইডের প্রোগ্রাম অফিসার সাইয়েদা আক্তার, প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।