Sharing is caring!
নোয়াখালীতে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন আন্দোলনের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। আজ সন্ধ্যায় সোনাইমুড়ির পোরকরা গ্রামের শহীদী জামে মসজিদের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স হলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
.
মূল বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম বলেন, আজকে সারা পৃথিবীময় যে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, যুদ্ধ-রক্তপাত চলছে, বিশেষ করে মুসলমান নামক জাতি যেভাবে মার খাচ্ছে, হেনস্থা হচ্ছে- এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে পুরো মানবজাতির আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম না মানার প্রতিজ্ঞা করা। তবেই এই সঙ্কট থেকে মুক্তি সম্ভব। এটা শুধু আমাদের কথা কথা না। ১৪শ’ বছর আগে আল্লাহর রসুল (সা.) আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে প্রমাণ করে দিয়েছেন কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে বর্বর বেদুইন আরব জাতি দিয়ে তৎকালীন দুই দুইটি পরাশক্তি রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যকে তুলার মত উড়িয়ে দিয়ে অর্ধ পৃথিবীতে শান্তি, সুবিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়।
.
তিনি আরো বলেন, জীবনব্যবস্থা দুই প্রকার। একটা মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থা, অন্যটা আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা । বর্তমানে মানুষ আল্লাহর তৈরি জীবনব্যবস্থা বাদ দিয়ে মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে আজ সমাজে এই অশান্তি, সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এই সঙ্কটের মধ্যেও আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা স্বার্থের রাজনীতি, ধান্দাবাজের রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পাশাপাশি ধর্মের নামে অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িক ঘৃণাবিস্তার ও দাঙ্গা, অন্ধত্বের কুশিক্ষার প্রসার, ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র ইত্যাদি দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরফলে সমাজে হানাহানি, দীর্ঘমেয়াদে সংঘাত বাড়ছে। সাধারণ মানুষ আজ অসহায়। তারা ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করছে, দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিষ্পেষিত হচ্ছে। সর্বোপরি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
.
তিনি আরো বলেন, এই সঙ্কট থেকে মুক্তির জন্য হেযবুত তওহীদের সদস্যরা সেই আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা ও রাসুলের (সা.) তৈরি করা উপায় হাতে নিয়ে মাঠে-ময়দানে সংগ্রাম করছে। তারা পুরো মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান করছে, রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবদান রাখছে, সমাজে ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে ভূমিকা পালন করছে। এই কাজ করতে গিয়ে আমরা অসংখ্য বার হামলার শিকার হয়েছি। আমাদের চারজন ভাইকে পিটিয়ে, চাপাতি-হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেইনি। আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি। তারা আমাদের বাড়ি-ঘর ধংস করেছে, আমরা আবার নির্মাণ করেছি। তারা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে, আমরা সত্য তুলে ধরেছি। তারা অন্ধকারের পথ বেছে নিয়েছে, আমরা শিক্ষার আলো জালিয়েছি।
.
এসময় তিনি নোয়াখালীতে হেযবুত তওহীদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি নিজেদের যতটুকু সহায় সম্পত্তি, শিক্ষা ও সামর্থ্য আছে সেটুকুর সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের গ্রামকে একটি উন্নত আদর্শ গ্রামে পরিণত করার জন্য। অপসংস্কৃতি ও মাদকের কালোথাবা থেকে গ্রামের তরুণ সমাজকে ফিরিয়ে আনতে এবং বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিতে আমরা তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি। এর অংশ হিসাবে পোশাক তৈরির কারখানা ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেছি। অর্গানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ খামার দিয়েছি যা বিগত ঈদগুলোতে সুস্থ-সবল কোরবানির পশু সরবরাহের জন্য এলাকার মানুষের কাছে খ্যাতি কুড়িয়েছে। আগামী প্রজন্মকে আধুনিক ও নৈতিক উভয় প্রকার শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠা করছি একটি উচ্চ বিদ্যালয়। আমাদের এসব কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যই হচ্ছে গ্রামের উন্নয়ন, প্রগতি, সমৃদ্ধি আনয়ন করা এবং এর মাধ্যমে প্রমাণ দেওয়া যে হেযবুত তওহীদ ইসলামের প্রকৃত আদর্শ ধারণ করে মানবসমাজে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চায়।”
.
পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় আমির মো. নিজাম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নারী বিভাগের প্রধান রুফায়দাহ পন্নী, প্রচার সম্পাদক শফিকুল আলম উখবাহ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাশেদুল হাসান প্রমুখ। সভায় নোয়াখালীর বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের অর্ধশতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।