২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

কন্যাশিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াবেন যেভাবে

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১
কন্যাশিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াবেন যেভাবে

Sharing is caring!

অভিভাবকের দায়িত্ব শুধুই সন্তানের যত্ন নেওয়া নয়। সন্তানকে পরিবার ও সমাজের একজন যথাযোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বও বর্তায় বাবা-মায়ের উপর। বিশেষ করে কন্যাশিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পদক্ষেপ ঘর থেকেই শুরু করা উচিত।

বর্তমান যুগে এসেও এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে ছেলে ও মেয়ের বিভেদ দেখা যায়। খাবার থেকে শুরু করে চলাফেরা এমনকি খেলাধুলাতেও ছেলে-মেয়ের বিভেদ শিশুমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

একটি মেয়েই কেন শুধু পুতুল বা বাসনপত্র নিয়ে খেলবে? আর ছেলেরাই কেন শুধু গাড়ি নিয়ে খেলবে? এসব ধারণা কিন্তু ছেলে-মেয়ারা তাদের পরিবার থেকেই প্রথমে পায়।

তবে অভিভাবক হিসেবে আপনি যদি শুরু থেকেই কন্যাশিশুর সামাজিকীকরণে বাড়তি নজর না নেন তাহলে আপনার মেয়েটি পিছিয়ে পড়বে। আর মেয়েকে যদি আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী হিসেবে ভবিষ্যতে দেখতে চান তাহলে প্রথম থেকেই তার বিকাশে বিষয়ে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। যেমন-

>> শিশুকাল থেকেই সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। সাইকেল চালানো শেখানো, ছবি আঁকা, নাচ-গান ইত্যাদি শেখানো যেতে পারে শিশুকে। এসব শিখলে শিশুর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

>> কখনও মেয়েকে বলবেন না ঘরের কাজেও বাড়তি মনযোগ দিতে হবে। ঘরের কাজের গণ্ডি ছাড়িয়ে বড় স্বপ্ন দেখাতে শেখান। আপনাকে দেখে ঠিকেই সে ঘরের কাজ শিখতে পারবে, তাতে বাঁধা নেই। তবে কেউ যেন তাকে না বলে রান্না করাই মেয়েদের কাজ।

>> শিশুরা দুষ্টুমি করবেই। এভাবেই খেলার ছলে মেয়ের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে। কখনও গায়ে হাত তুলবেন না। এতে শিশুরা আরও বেশি জেদি হয়ে ওঠে। যতটা পারুন শিশুকে সমর্থন দিন।

>> সমাজে কন্যাশিশুকে নিয়ে অনেক কুসংস্কার ও ট্যাবু আছে। ‘মেয়েদের এটা করা উচিত, এটা করা উচিত নয়’ ইত্যাদির প্রভাব যেন ছোটবেলাতেই শিশুর উপর না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। মনে করুন আপনিই তার ‘সমাজ’।

>> ধীরে ধীরে শিশুকে ভালো-মন্দ, বিপজ্জনক কাজ, নিরাপদ থাকার কৌশল- এসব বিষয়ে শিক্ষা দিন। এতে শিশু নিরাপদে থাকতে পারবে।

>> শিশুর সামনে কখনও অন্যদের শারীরিক গড়ন কিংবা ত্বকের রং নিয়ে উপহাস করবেন না। এর প্রভাব পড়বে শিশুর উপর। এমনকি অন্যদেরকেও নিষেধ করুন যাতে শিশুর সামনে অন্য কারও শারীরিক গঠন নিয়ে কেউ মন্তব্য না করেন।

>> অন্যের সামনে কখনও শিশুকে নাচতে বা গাইতে বলে বিব্রত করবেন না। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস কমে যায়। মনে রাখবেন সবাইকে বিনোদিত করা কিন্তু আপনার কন্যার কাজ নয়।

>> খেলাধুলা হোক বা ছবি আঁকা সব বিষয়েই শিশুকে নিজের মতো করে বেছে নেওয়া সুযোগ দিন। কখনও তার উপর কিছু চাপিয়ে দেবেন না। বিশেষ করে খেলনা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকরাও তা ঠিক করেন। শিশুকেও সুযোগ দিন। তার হাতে আগেই পুতুল তুলে দেবেন না।

>> সফল ব্যক্তিবর্গের জীবনকাহিনী বা দৃষ্টান্ত সম্পর্কে শিশুকে জ্ঞান দিন। এর মধ্য থেকেই একসময় দেখবেন আপনার মেয়েটি তার অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বকে বেছে নিয়েছে।

>> বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তার মতামত নেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শিশুর কথা বলার আগ্রহ বাড়বে। অনেক শিশুরাই ঘরে চুপচাপ থাকার কারণে ভীতু প্রকৃতির হয়ে যায়। বিশেষ করে কন্যাশিশুদেরকে প্রাণখুলে কথা বলার সুযোগ করে দিন।

>> কখনও মেয়ের সামনে তার চেহারার প্রশংসা করবেন না। এতে শিশু নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর ভাবতে শুরু করবে। এমনকি অন্যের চেহারা নিয়েও সে বিরূপ মন্তব্য করে বসতে পারে।

>> খেয়াল রাখবেন শিশুর সামনে যেন কখনও ফ্যাশন ম্যাগাজিন না থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটি ফ্যাশন ম্যাগাজিন দেখার ১৫ মিনিট পর কন্যাশিশুর মেজাজ, কৌতূহল ও উত্সাহে পরিবর্তন ঘটে। মডেলদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা ও নিজেকে নিচু ভাবার প্রবণতাও দেখা দেয়।

সূত্র: চাইল্ড মাইন্ড/টাইমস অব ইন্ডিয়া