Sharing is caring!
বসুন্ধরা বিটুমিনের মান নিয়ে সন্তুষ্ট এলজিইডি প্রতিনিধি দল
নাসরিন আক্তার রুপা ঢাকাঃ বসুন্ধরার বিটুমিন প্লান্ট পরিদর্শন করে বিটুমিনের মান নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন লোকাল গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের (এলজিইডি) প্রতিনিধি দল। একইসঙ্গে গুণগত মান বজায় রেখে দ্রুত বাজারজাতকরণসহ রপ্তানির পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বসুন্ধরা গ্রুপের আমন্ত্রণে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ খানের নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল কেরাণীগঞ্জের পানগাঁওয়ে বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট পরিদর্শন করে।
তারা বসুন্ধরা বিটুমিনের কর্মপরিকল্পনা, কৌশল ও উন্নতমানের উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার এই মহৎ উদ্যোগের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে সাধুবাদ জানান।
এ সময় বুয়েটের বিটুমিন গ্রেড নির্ধারণ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া, এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আলী আখতার হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর হোসেন হাওলাদার, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহম্মদ রেজাউল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এলজিইডির প্রকৌশলীরা প্লান্টের প্রকৌশলীদের সঙ্গে বিটুমিন উৎপাদন প্রক্রিয়া, ধরন, উৎপাদন ক্ষমতা, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ খান বলেন, টেকসই সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের বিটুমিনের পরিবর্তে উচ্চমানের বিটুমিনের প্রয়োজনীয়তা এবং সড়ক উন্নয়নে বসুন্ধরা বিটুমিন বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে বসুন্ধরা বিটুমিন সারা দেশে আরও ছড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছি। বিপণন সহজলভ্য করতে জেলা পর্যায়ে পৌঁছানোর আহবান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমরা চাই দেশীয় কোম্পানি বিটুমিন উৎপাদন করুক। তবে গুণগত মান বজায় রেখে রাস্তায় বা সড়কে ব্যবহারের জন্য বসুন্ধরা যে বিটুমিন উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রসংশনীয়। এতে সময় ও খরচ কমে যাবে। ফলে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।
প্রতিনিধিদলের এক কর্মকর্তা বলেন, আজকে আমরা যে উদ্দেশ্যে এসেছি তা হলো, প্রত্যাশিত মানের বিটুমিন উৎপাদিত হয় কিনা সেটা দেখার জন্য। আমরা দেশে যদি বিটুমিন তৈরি করতে পারি তাহলে ভেজাল বিটুমিন তৈরির যে প্রবণতা তা বন্ধ হয়ে যাবে। আমি আশা করছি ভেজালবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে বসুন্ধরা যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা প্রশংসনীয়, এজন্য বসুন্ধরাকে ধন্যবাদ জানাই।
এলজিইডির মান নিয়ন্ত্রণ ইউনিট তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, আমি বসুন্ধরাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প তারা হাতে নিয়েছে। বসুন্ধরা তার কোয়ালিটি দিয়েই বাজার দখল করবে। এলজিইডি কখনও কোয়ালিটির সঙ্গে আপস করে না।
তিনি বলেন, বিটুমিন নিয়ে আমাদের ভালো অভিজ্ঞতা ছিলো না। ইরানি, ইউএইর বিটুমিন বা নরমাল বিপিসির রিপ্যাকিং করার প্রবণতাটা বন্ধ হয়ে যাবে, যদি বসুন্ধরার বিটুমিন সঠিকভাবে বাজারজাত করা যায়। আর এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বিষয় হবে। আর বাংলাদেশ সরকারের বিটুমিন চাহিদার ৫ লাখ টনের মধ্যে ২ লাখ টন বিটুমিন এককভাবে ব্যবহার করে এলজিইডি। সুতরাং এলজিইডি বিরাট একটা স্টেক হোল্ডার হবে বা ইউজার হবে বিটুমিন ব্যবহার করার জন্য। তাই আমরা বলব, গুণগত মানের দিক থেকে যেন বসুন্ধরা কোনো আপস না করে।
বসুন্ধরা গ্রুপের সেক্টর বি-এর প্রধান বিপণন কর্মকর্তা খন্দকার কিংশুক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারিভাবে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে বসুন্ধরা বিটুমিন উৎপাদন শুরু করেছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশসহ অন্যান্য দেশেও আমরা বিটুমিন রপ্তানি করতে পারবো। বাংলাদেশ যে পরিমাণ বিটুমিন উৎপাদন হয় এতে দেশের চাহিদা পূরণ হয় না। কারণ চাহিদা অনেক বেশি। বসুন্ধরা প্লান্ট দেশে বিটুমিনের চাহিদা মেটাতে পুরোপুরি সক্ষম।
উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯ লাখ মেট্রিকটন। বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ লাখ মেট্রিকটনের বেশি বিটুমিনের চাহিদা রয়েছে। আর এই মুহূর্তে আমাদের বার্ষিক উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিকটন বিটুমিন। শিগগিরই আমরা আরও ৪ লাখ মেট্রিকটন বিটুমিন উৎপাদন করতে পারবো।
উল্লেখ্য, বসুন্ধরা বিটুমিন বেসরকারিখাতে স্থাপিত বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র বিটুমিন প্ল্যান্ট যা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। ২০২০ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি সরকারি, বেসরকারি ও মন্ত্রীপরিষদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্লান্টের উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশে বিটুমিনের যে চাহিদা রয়েছে তার ৯০ শতাংশ এতোদিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। যার অবসান ঘটাতে যাচ্ছে বসুন্ধরা বিটুমিন।