২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

উল্লুকের জন্য লাউয়াছড়ায় তৈরি হচ্ছে ‘গাছ সেতু

অভিযোগ
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
উল্লুকের জন্য লাউয়াছড়ায় তৈরি হচ্ছে ‘গাছ সেতু

উল্লুকের জন্য লাউয়াছড়ায় তৈরি হচ্ছে ‘গাছ সেতু’

রিপোর্ট পিআইডি মৌলভীবাজা: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ‘মহাবিপন্ন প্রাণী’ উল্লুক (Hoolock gibbon)। এরা পুরোপুরিভাবে বৃক্ষচারী স্তন্যপায়ী প্রাণী। জীবনভর গাছে গাছেই ঘুরে বেড়ায়। সেখানেই খাদ্য সংগ্রহ করে। সেখানেই বিশ্রাম বা ঘুমের পর্বটিও সম্পন্ন করে। ভুলেও মাটিতে পা রাখে না।

সিলেট বনবিভাগের অত্যন্ত সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক বনাঞ্চল লাউয়াছড়া। এখানেই বসবাস করে উল্লুকের কয়েকটি পরিবার। তিন থেকে পাঁচ অথবা তারও বেশি সদস্য নিয়েই উল্লুকদের একেকটি পরিবার। পুরোপুরিভাবে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে থাকা পরিবারভুক্ত প্রাণী এরা। একটি উল্লুক এ গাছের উঁচু মাথা থেকে চিৎকার করে ডাকলে অন্যটিও অন্যগাছের উঁচু মাথায় বসে ডাকতে শুরু করে। এমন চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করা ডাকগুলোই লাউয়াছড়া প্রাকৃতিক শব্দ। লাউয়াছড়ার প্রাণ।

এসব প্রাণ যাতে লাউয়াছড়ায় নিরাপদে থাকে, ঝুঁকিহীনভাবে গাছে গাছে ঘুরে খাদ্য সংগ্রহ করে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে তার জন্যেই ‘গাছ-সেতু’ নামক বিশেষ ব্যবস্থা তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সেতুগুলোর দূরত্ব ২২ থেকে ২৫ মিটার। নাইলনের মোটা রশি সড়ক ও রেলপথের দুই পাশের গাছের ডালপালার মধ্যে বেঁধে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) উল্লুককে মহাবিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানায়, এ গাছসেতু বা বনসেতুকে ইংরেজিতে ‘ক্যানোপি ব্রিজ’ বলা হয়। বন্যপ্রাণীর চলাচলের সুবিধার্থে ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন ক্যানোপি ব্রিজ রয়েছে। তারই আদলে সম্প্রতি লাউয়াছড়া মহাবিপন্ন উল্লুকের অবাধ চলাচলের সুবিধার্থে বানানো হয়েছে পাঁচটি বনসেতু। উদ্যানকে দ্বিখণ্ডিত করে চলে যাওয়া সড়ক ও রেলপথের দুই পাশের গাছের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এ সেতু। সড়কের দুই পাশের উঁচু দুটি গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে বানানো হয়েছে সেতুগুলো।

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বাংলানিউজকে বলেন, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল যৌথভাবে সেতু স্থাপনের কাজটি করেছে। এ সেতু দিয়ে উল্লুকসহ অন্য সব বন্যপ্রাণী সড়ক ও রেলপথের দুই পাশের বিস্তৃত উদ্যানে চলাচল করবে।

তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেললাইন এবং শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক। এতে ভাগ হয়ে আছে উদ্যানটি। সড়ক ও রেলপথের বিভিন্ন স্থান অনেক প্রশস্ত। এতে অনেক প্রাণী এক পাশের গাছ থেকে আরেক পাশের গাছে লাফ দিয়ে যেতে পারে না। কিছু প্রাণী নিচে নেমে সড়ক ও রেলপথ পাড়ি দেয়। এভাবে সড়ক ও রেলপথ পাড়ি দিতে গিয়ে মরে যাচ্ছে অনেক প্রাণী। উদ্যানের দুই পাশে উল্লুকসহ বন্য প্রাণী পারাপারের সুবিধার্থে পাঁচটি সেতু তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. হাবিবুন নাহারের নেতৃত্বে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মোট পাঁচটি পয়েন্টে পৃথিবীব্যাপী মহাবিপন্ন প্রাণী উল্লুকের বিচরণের জন্য গাছ থেকে গাছে মোটা দড়ি এবং মই বেঁধে দেয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের টিম সেখানে কাজ করেছেন। রেললাইনের দুই স্থানে এবং রাস্তার উপরে তিন স্থানে।

এ কর্মকর্তা আরও জানান, যেখানে উল্লুকগুলো রেললাইন পাড় হতে পারে না, তাদের পথ অনেক দূরের সেখানেই আমরা মোটা দড়ি এবং এক ধরণের মই বেঁধে দিচ্ছি। উপরে থাকবে দড়ি, আর নিচ দিয়ে থাকবে মই। উল্লুক তো ঝুলে ঝুলে যায়, সে দড়িও পছন্দ করতে পারে আবার মই পছন্দ করতে পারে – সেটা তার পছন্দ হয় সেটাই যেন সে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারে তার জন্য আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।

সুরক্ষাটা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করার জন্য দড়ি এবং মই দুটোই দেয়া হচ্ছে। তবে সেই স্থানের অবস্থা বিবেচনায় কোনো জায়গা শুধু দড়ি বেঁধে দেয়া হবে আর কোনো জায়গাও দুটোই দড়ি এবং মই দুটোই দেয়া হবে। যাতে করে উল্লুকগুলো খুব সহজেই রাস্তার এপাড় থেকে ওপাড়ে সহজে যাতাযাত করতে পারে। উল্লুকের চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য সেতুগুলোর কাছে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দিনে কয়টি উল্লুক কতবার এপার-ওপার আসা-যাওয়া করে, তা জানা যাবে বলে জানায় ডিএফও রেজাউল।

Please Share This Post in Your Social Media
March 2024
T W T F S S M
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031