২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসচেতনতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মিষ্টি মাছ

admin
প্রকাশিত আগস্ট ৩, ২০১৯
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসচেতনতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মিষ্টি মাছ

Sharing is caring!

 

ফয়সাল আজম অপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পদ্মা, মহানন্দা, পূর্ণভবা ও পাগলা নদী বিধৌত ও মরিচা বিল, বিল ভাতিয়া সহ বিভিন্ন খাল-বিল অধ্যুষিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও নাচোল ৪ টি উপজেলায় বর্ষা মৌসুমেও দেশি প্রজাতির মাছ মিলছে না। মুক্ত জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিলে আগের বর্ষা মৌসুমে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া গেছে চলতি মৌসুমে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম আকাশচুম্বী।

মৎস্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ, মা মাছ নিধন, অভয়াশ্রমের অভাব ও সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় দিনের পর দিন এই জেলায় দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ প্রায় নির্বিকার।

স্থানীয়রা বলেছেন, বৃষ্টি হলেই মাছ বাজারে আসতে শুরু করে। চলতি মৌসুমে আশানুরুপ বৃষ্টি হয়েছে। অথচ বর্ষা প্রায় শেষ প্রান্তে আসলেও বাজারে দেশীয় মাছ উঠছে না। জলাশয়গুলোতে একসময় শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, বাঘার, টাকি, গুঁচি, চ্যাং, শোউল, গজার, বোয়াল, বালিয়া, বাইম, পুঁটি, চিংড়িসহ নানা প্রজাতি মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে এসব প্রজাতির মাছ পাওয়াই দুষ্কর। বিলুপ্তি প্রায় এই মাছ গুলো একসময় চিরচেনা হলেও এখন তা এলাকাবাসীর কাছে এগুলো খুবই অপরিচিত। জেলার সচেতন মহলের আশংকা, বিলুপ্তির পথের এসব মাছকে সচেতনতার মাধ্যমে ধরে রাখতে না পারলে, হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের নিকট স্বপ্নের মতো মনে হবে এসব মাছ। আর আমরাও হয়তো চির চেনা এসব মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবো।

এছাড়া এলাকার হাট-বাজারগুলোতে দেশীয় মাছের আমদানি একেবারেই কমে গেছে। মাঝে মধ্যে বাজারে কিছু আমদানি হলেও তার দাম চড়া হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরহাট, মহানন্দা নদীকুলবর্তী বারোঘরিয়া বাজার, শিবগঞ্জ উপজেলার রানিহাটী, পদ্মা অধ্যুশিত মনাকষা হাট, বিনোদপুর হাট, গোমস্তাপুর উপজেলার পূর্ণভবা নদী তীরবর্তী রহনপুর হাট, ভোলাহাট ও নাচোলে কয়েকটি হাটবাজার ঘুরে দেখা যায়, রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, বিদেশী মাগুর, পাঙ্গাশ, বিদেশী কৈ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন ধরণের পুকুরে চাষ করা মাছ বিক্রি হলেও দেশিয় মাছের আমদানি নেই।

স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত খাল-বিল, নদীনালা ও জলাশয়ে দেশী প্রজাতির মাছ ডিম পাড়ে। এ সময় একশ্রেণীর অসাধু জেলেরা নির্বিচারে ছোট মাছ শিকার করায় মাছ বংশবিস্তার করতে পারছেনা। ফলে দিন দিন বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে এই দেশী প্রজাতির মিষ্টি মাছ।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন-বাঁধ নির্মাণ না করা, ডোবাগুলোয় মাটি ভরাট না করা, কৃষিকাজে অপরিমিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার না করা, ডিমওয়ালা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা, জলাশয় দূষণ না করা, কারেন্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং মৎস্য-বিভাগ সরেজমিন তদারকির ব্যবস্থা করলে মাছের উৎপাদন পুরোপুরি না হলেও অনেকটা স্বাভাবিক করা সম্ভব।

এই বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড, মোঃ আমিমুল এহ্সান বলেন, বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত চার মাস দেশীয় প্রজাতির ছোটমাছ না ধরে প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে হয়।
এছাড়াও নদী জলাশয়গুলোতে ডিমওয়ালা মাছ অবমুক্তকরণ, ছোট মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ, জেলে পরিবারগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ে মাছ ধরার পরিবর্তে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

সমন্বিত বালাইনাশক প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিদেশি প্রজাতির কিছু মাছ স্বল্প সময়ে বৃদ্ধি হওয়া ও লাভজনক বলে অনেক মৎস্য চাষি এসব মাছ চাষে ঝুঁকে পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন।