২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের আসক্তি

admin
প্রকাশিত আগস্ট ২, ২০১৯
ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের আসক্তি

Sharing is caring!

 

শিরোনামের লেখাটি কালনি ভিউ ২৪.কম, মানব দৃষ্টি ২৪.কম,ছাতকের খবর, সুনামগঞ্জ নিউজ ৭১. কম,নিউজ ৭১ অনলাইন. কম,বার্তা কন্ঠ, তারুণ্যে আলো ২৪.কম, সংবাদ প্রতিদিন. কম,যোগাযোগ ২৪,সুনামগঞ্জ ডট কম,সুনাম দর্পন,হাওর, সাহিত্য সংকলন বিদ্যালোক( হাওর পাড়ের শিক্ষা খবর),Chemistry Alumni Association of MC college অনলাইন পত্রিকা ও পেইজে প্রকাশ করায় এডমিন ও প্রকাশকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
প্রিয় পাঠক পড়ার সুবিধার্থে লেখাটি তুলে ধরা হল।

ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের আসক্তি

————-মনির হোসেন
সহকারি শিক্ষক (বিজ্ঞান)
ভীমখালি উচ্চ বিদ্যালয়
জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ।
—————————————————————

ইদানিং মাথায় শুধু নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে। নানা ভাবনায় মন অস্থির হয়ে যায়। কিন্তু ভাবনা গুলোকে একত্রিত করে লিখতে পারি না। লিখলেই কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ভেবেছিলাম আর লিখব না।লিখে ত আর সমস্যার সমাধান করা যাবে না।আর যদি যেতো তাহলে একটার পর একটা সমস্যায় আমরা জর্জরিত হতাম না। এখন কেন লিখছি? সমস্যাটা বুকের ভিতর গিয়ে লেগেছে তাই হয়তো লিখছি। তরুণ তরুণীদের মধ্যে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের ব্যবহার এখন কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে তা হয়তো আন্দাজ করাটা আমাদের কাছে অসম্ভবপর না। একটু খেয়াল করলে আপনি লক্ষ করতে পারবেন কেমন করে তাদের আকাশটা দখল করে নিচ্ছে তিন/চার /ছয় ইঞ্চির জ্বলজ্বলে পর্দা। কয়েকদিন আগে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রের সংঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করেছিলাম দিনে কয় ঘন্টা তারা ফেইসবুক ব্যবহার করে।
কেউ বলেছে এক ঘন্টা, কেউ দুই ঘন্টা।
একজন ত বলল আমরা স্যার লগ আউট করি না।আমাদের ফোনে সারাক্ষণ ফেইসবুক ও মেসেঞ্জার লগইন করা থাকে। শিক্ষকতা পেশায় থাকার কারণে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে হয়।গত কয়েকদিন আগে দশম শ্রেণি পড়ুয়া কয়েকজন ছাত্রকে একটা বিষয় লিখে নিতে বললে তারা কেমন যেন আমতা আমতা করছিল।তাদের মধ্যে থেকে একজন ত বলে ফেললো স্যার মোবাইলে পিক তুলে নিয়ে যাই। আমি শেয়ারিটি দিয়ে সবাইকে দিয়ে দিব।শুধু শুধু লিখে সময় নষ্ট করার দরকার কি? স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের বই খাতা নিয়ে পড়ার পিছনে সময় কাটাবার দরকার ছিল। তারা তা না করে সময়টুকু দিচ্ছে বন্ধুর কোন ছবিতে লাইক দিয়ে, শেয়ার দিয়ে, মেসেঞ্জারে রিপ্লাই দিয়ে। ফলে পড়ায় মনোযোগ দেওয়াটা এসব ছেলেমেয়েদের জন্য এখন কঠিন হয়ে পরছে।
সবেমাত্র শেষ হলো বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা।স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা মেতে উঠেছিল বিশ্বকাপে আমেজে। আগে কেবল খেলা চলা কালীন সময়েই খেলার বিষয়টা থাকত।এখন তা অনেকটা বিস্তৃতি লাভ করেছে।নিজের সার্পোট করা টিম ছাড়াও অন্য টিম নিয়ে পড়ালেখা করতে হচ্ছে,খেলার বিভিন্ন অংশ ইউটিউবে গিয়ে বার বার দেখতে হচ্ছে। এভাবে তাদের সময়ের একটা বড় অংশ নিজের অজান্তেই নষ্ট হচ্ছে।
স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের দেখলে আমার কেন জানি মনে হয় আমাদের এই বেড়ে উঠা প্রজন্ম যন্ত্র ব্যবহারের চেয়ে যন্ত্রের দাস হয়ে পড়ছে বেশী মাত্রায়।এরা মনে করে ডিজিটাল খাবে, ডিজিটাল পড়বে, ডিজিটাল খেলেই জীবন কাটাবে। শুধু কি তাই? ডিজিটালের প্রেমে পড়েছে বাবা মায়েরা ও।ফলাফল কি দাড়াছে?
ইদানিং আমি ডিজিটাল মা বাবা ও ছেলে মেয়েদের দিকে লক্ষ করি।আমার এক নিকট আত্নীয়কে দেখলাম তার বাচ্চা কান্নাকাটি করছে আর তার মা বাচ্চাটিকে স্মার্ট ফোন ধরিয়ে বসিয়ে রাখছে। আরও একটা ব্যপার দেখে অবাক হলাম মোবাইলে ভিডিও গান শুনিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছেন ডিজিটাল মা বাবারা। এ রীতিটি যে ভুল সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা আছে বলে মনে হলো না।
অশ্চর্যের বিষয় হলো স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা স্মার্টফোন থাকা বা না থাকা বিষয়টিকে মর্যাদার বিষয় মনে করে।
শুধু কি ছাত্রছাত্রী? কয়েকদিন আগে ব্যানবেইসের অর্থায়নে হার্ডওয়্যার এ্যান্ড ট্রাবলশুটিং এর উপর শিক্ষকদের পনেরো দিনের ট্রেনিং করি।এখানে গিয়ে আমি ত অবাক। কেউ আর খাতা কলম নেয় না।ট্রেইনার বোর্ডে লিখে দিচ্ছেন আর বোর্ডের ছবি অনেকে তুলে নিচ্ছেন মোবাইলফোনে।
একদিন ট্রেইনার এসাইনমেন্টের কথা বললে আমরা সবাই এক বাক্যে না করি যে আমরা এটা করব না।কারণ তখন বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা চলছিল। তারপর ও কেউ কেউ করেছে।বাকীরা কপি করে চালিয়ে দিয়েছে। কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া আমার পক্ষে কঠিন। কেননা আমি নিজেও ঘন্টার পর ঘন্টা ফেইসবুক ও ইন্টারনেটে কাটাই।
প্রযুক্তি জগতের দুই বিখ্যাত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি মাইক্রোসফটের সহ প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তাঁর সন্তানদের চৌদ্দ বছরের আগে স্মার্টফোন দেন নি।এমনকি এপলের সহ প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস তাঁর সন্তানদের দেন নি আইপড।কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেকে বলেছেন তারা এই ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বেশি জানেন বলে তাঁরা তাদের সন্তানদের মানুষিক বিকাশ না হওয়া পযর্ন্ত এ ক্ষতিকারক যন্ত্রটি তাদের হাতে তুলে দেন নি।
ক্ষতিকারক কেন বলছি? কারণ আমেরিকার গবেষকরা বলেছেন অষ্টম শ্রেণির যে সব শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোরাফেরা করে তাদের মধ্যে হতাশার হার অন্যদের চেয়ে ২৭% বেশী। দিনে তিন ঘন্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়ে গেছে অনেকখানি। আমেরিকার মতো দেশে এখনও ছেলেমেয়েদের গড় বয়স দশ বছর না হলে তাদেরকে ফোন দেিয়া হয় না।
ফেইসবুক ও সামাজিক যোগাযোগের ব্যবহার দিন দিন ভয়ঙ্কর দানবে পরিনত হচ্ছে। অনেক মাধ্যম থেকে ফেইসবুক বন্ধের জন্য জোর দাবি উঠছে।একথা কোনক্রমে অস্বীকার করা যাবে না যে,ফেইসবুক ও ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অংশ হয়ে পড়েছে।কিন্তু এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কোনভাবেই কাম্য নয়।