Sharing is caring!
ঠাকুরগাঁওয়ে দাদন ব্যবসায়ী খাদেমুলের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব গ্রামের সাধারণ মানুষ
এম এ সালাম রুবেল-ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় খাদেমুল ইসলাম নামে এক দাদন ব্যবসায়ীর ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামের সাধারণ মানুষ। চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে মিথ্যা মামলার হয়রানী থেকে বাঁচতে কেউ লিখে দিচ্ছেন নিজের শেষ সম্বল জমি, কেউবা গবাদি পশু ও বাড়ীর অন্যান্য জিনিসপত্র বিক্রি করে দেনা পরিশোধের পর নিঃস্ব হচ্ছেন।
দাদন ব্যবসায়ীর এমন অত্যাচার ও হয়রানীর থেকে বাঁচতে গত ২৩ নভেম্বর গ্রামবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় পুলিশ সহ বিভিন্ন দপ্তরে গণ-স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন।
অভিযোগের সুত্র ধরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় সুদের ব্যবসা করে আসছেন উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের শিধোর কলন্দা গ্রামের মৃত বজির উদ্দীনের ছেলে খাদেমুল ইসলাম। সুদের উপর টাকা দেওয়ার সময় ব্যাংক হিসাবের স্বাক্ষরিত চেকে পাতা ও স্বাক্ষরিত ফাঁকা ষ্ট্যাম্প কৌশলে নিজের নিকট জমা রাখেন।
পরে সুদসহ টাকা আদায় করতে ওই চেক ও ষ্ট্যাম্পে ইচ্ছেমত টাকার অঙ্ক বসিয়ে আদালতে মামলা করেন। গ্রামের নিরীহ মানুষ সেই মামলা থেকে বাঁচতে নিজের জমি রেজিষ্ট্রিসহ নানা ভাবে পরিশোধ করলে তিনি মামলা তুলে নেন।
গত দু বছরে তিনি ১০ জনের উপর সাধারণ মানুষকে মামলায় হয়রানী করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বর্তমানে আদালতে চলমান মামলার আসামী শিধোর কলন্দা কাজিপাড়া গ্রামের খবির উদ্দীন।
তিনি পূর্বপশ্চিমকে বলেন, অভাবের সংসার আমার। খাদেমুলের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে কিছু সুদের উপর টাকা নিয়েছিলাম। বন্ধক হিসেবে নিজের ব্যাংক হিসাবের চেক দিয়েছিলাম।
সেই টাকা পরিশোধ করার পরও সে আমার কাছে ৯ হাজার টাকা পাবে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে আদালতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার মামলা দিয়েছে। মামলায় লিখেছে তার কাছে জমি বিক্রি বাবদ এত টাকা নিয়েছিলাম আমি। অথচ আমার বসতভিটার জমি ছাড়া আর কোন জমি নেই। আমি এই সুদখোরের বিচার চাই।
খবিরের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, গেল মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে মাটির ঘর ভেঙ্গে গেছে। টাকার অভাবে গত ৮ মাসে সেটির মেরামত না করতে পেরে বারান্দাতেই রাত কাটাচ্ছেন বৃদ্ধা স্ত্রীসহ। একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ধার দেনা করে। দিন মজুরী করেই তিনি এখন দিন-যাপন করছেন।
ওই গ্রামের রফিকুল ইসলাম পূর্বপশ্চিমকে জানান, দেড় বছর আগে খাদেমুলের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার নিয়েছিলাম স্বাক্ষর করা ফাঁকা ষ্ট্যাম্প জমা দিয়ে। মেয়ের বিয়ে ঠিক হওয়ার আগ মুহুর্তে আমার উপর মামলা দেয়। মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যাবে, এমন ভয়ে দ্রুত তাকে ৫ শতক জমি রেজিষ্ট্রি দিয়ে সেই মামলা থেকে নিস্তার পেয়েছিলাম। আমার মত অনেকেই তার হয়রানীর শিকার।
একই গ্রামের লক্ষিন্দর পূর্বপশ্চিমকে জানান, আমিও টাকা নিয়ে বিপদে পড়েছিলাম। পরে খাদেমুলকে সুদে-আসলে টাকা ফেরত দিয়ে নিজের জান বাচিয়েছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দাদন ব্যবসায়ী খাদেমুল ইসলাম পূর্বপশ্চিমকে জানান, আমি ষ্ট্যাম্প ও চেক জমা নিয়ে মানুষের জমি বন্ধক গ্রহণ করি। পরে টাকা ফেরত না দিলে সেই ষ্ট্যাম্প ও চেক দিয়ে আদালতে মামলা করি। খবির উদ্দীনের উপর কেন মামলা করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫০ শতক জমি বিক্রির জন্য তিনি তার নিকট সাড়ে ৭ লাখ টাকা নিয়েছে খবির উদ্দীন। তবে টাকা প্রদানের কোন প্রমাণপত্র এমনকি জমির বায়নামা দেখাতে পারেনি খাদেমুল।
এলাকাবাসীর কাছে খোজ নিয়ে জানা যায়, খবির উদ্দীনের ভিটেমাটি ভাড়া আর কোন সম্পদ নেই। দিন মজুরি করে তিনি জীবন-যাপন করেন। এত টাকা ধার নেয়া বা জমি বিক্রির জন্য নেওয়া অসম্ভব। এটি সাজানো ঘটনা। দাদন ব্যবসায়ী খাদেমুলের ষড়যন্ত্রের শিকার।
সংশ্লিষ্ট ভানোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব সরকার পূর্বপশ্চিমকে জানান, খবির একজন ভূমিহীন মানুষ। তার উপর অনেক টাকার মামলা দিয়েছে শুনলাম। আদালত যদি মামলা তদন্ত করতে ইউনিয়ন পরিষদের মতামত নেয়। আমরা অবশ্যই মামলা খারিজের জন্য সুপারিশ করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন পূর্বপশ্চিমকে বলেন, গ্রামবাসীর স্বাক্ষরিত অভিযোগের কপি স্থানীয় থানায় তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অত্র দপ্তর থেকে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগের দায়িত্বে থাকা বালিয়াডাঙ্গী থানার এসআই আব্দুর রহিমন পূর্বপশ্চিমকে জানান, অভিযোগের তদন্তের কাজ চলমান। শেষ হলেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।