২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জাফলংয়ে পাথর কোয়ারি সচলের দাবীতে সমাবেশ

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ২৮, ২০২০
জাফলংয়ে পাথর কোয়ারি সচলের দাবীতে সমাবেশ

Sharing is caring!

 

“কাজ চাই, ভাত চাই, পাথর কোয়ারি সচল চাই”
জাফলংয়ে পাথর কোয়ারি সচলের দাবীতে সমাবেশ

 

মোঃ ইব্রাহীম আলী,গোয়াইনঘাট প্রতিনিধিঃ- 

কাজ চাই, ভাত চাই, পাথর কোয়ারি সচল চাই/পাথর কোয়ারি বন্ধ কেন, প্রশাসন জবাব চাই/ আমাদের দাবী একটাই পাথর কোয়ারি খুলে দাও, দিতে হবে।

এমন দাবীকে সামনে রেখে বৃহত্তর সিলেটের সকল পাথর কোয়ারি পরিবেশ সম্মত ও সনাতন পদ্ধতিতে সচল করার দাবীতে জাফলংয়ে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আয়োজনে জাফলংয়ের মামার বাজার এলাকার পিউলির মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবীতে মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিভিন্ন দাবী দাওয়া সংবলিত ফেস্টুন, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে লোকজন জড়ো হতে থাকে।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে সমাবেশস্থল। সমাবেশে বক্তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এ দেশটা হবে কৃষক ও শ্রমিকের। কিন্তু দূর্ভাগ্যবঃশত স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও আমাদের ভাত কাপড়ের জন্য আন্দোলন করতে হয়। যে পাথর কোয়ারি বঙ্গবন্ধু আবিস্কার করেছেন, সেই কোয়ারি কখনো বন্ধ করতে দেয়া যাবে না।

উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, লোভা, উৎমা ও শ্রীপুর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন, সংগ্রহ ও সরবরাহ করে অত্রাঞ্চলসহ দেশের প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ আজ পরিজন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কর্মহীন এ প্রান্তিক জনপদে আজ দূর্ভিক্ষের পদধ্বনি। পাথর সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজ সর্বশ্বান্ত।

হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজ দেউলিয়া। পাথর কোয়ারী বন্ধ করে দেওয়ায় মানুষের জীবন জীবিকার উপর যে মারাত্মক দুর্বিসহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা অবর্ণনীয়।

একটি বৃহৎ অঞ্চলের ১০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাচীন এ জীবিকা বন্ধ হওয়ায় এর অর্থনৈতিক ক্ষতি হাজার হাজার কোটি টাকা। পাথর পরিবহনে সম্পৃক্ত হাজার হাজার ট্রাক ও ট্রাক্টর মালিক, শ্রমিক রোজগার বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

পাথরকে উপজীব্য করে গড়ে ওঠা স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজার ও বিপনী কেন্দ্রগুলোতে পন্য কেনা বেচা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজারো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যেক্তা কঠিন ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। যুগ যুগ ধরে পাথর আহরণের মাধ্যমে কয়েক লাখ শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের পথ পাথর কোয়ারিগুলো সনাতন পদ্ধতিতে সচল কওে দেয়ার জোড় দাবি জানান তাঁরা।

অন্যথায় ন্যায্য এ দাবি আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে সিলেটে অবরোধ-ধর্মঘটের মত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সমাবেশ থেকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।

বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে ও সাব্বির আহমদ ফয়েজ এবং গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিলেট বিভাগীয় ট্রাক মালিক গ্রæপের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল।

প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার।

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট জীবিকা নির্বাহকারী ব্যবসায়ী শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. নুরুল আমিন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান মালিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক, মৌলভীবাজার ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি এবং মৌলভীবাজার বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. রশিদ উদ্দিন আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আহমদ, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান লেবু, সাবেক চেয়ারম্যান হামিদুল হক ভূইয়া বাবুল, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. সামছুল আলম, উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি মাসুক আহমদ, সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটো রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ জাকারিয়া, সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা ট্রাক-ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি আবদাল মিয়া, সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি মো. রুনু মিয়া, সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ও সিলেট জেলা ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আমির উদ্দিন, সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. নুর উদ্দিন, সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ মইনুল ইসলাম, সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটো রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল চৌধুরী, ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই আজাদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবুল হোসেন, সিলেট জেলা ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি মো. আব্দুস সালাম প্রমুখ।

এসময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধক্ষ নজরুল শিকদার, জাফলং আওয়ামী লীগের আহবায়ক মিনহাজুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান সিরাজ, মোজাম্মেল হোসেন মেনন, ইব্রহিম খান, আতাউর রহমান আতাই, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক কামাল হোসেন, যুবলীগ নেতা শেরগুল গোসাই, রুবেল আহমেদ, ছাত্রলীগ নেতা ইউসুফ আহমদ, সাব্বির রহমান সাজন প্রমুখ।

এ দিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে জাফলং, মামার বাজার, রাধানগর বাজার, বল্লাঘাট ও লন্ডনীবাজারসহ স্থানীয় এলাকার সকল হাট বাজারের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা একাত্মতা প্রকাশ করেন। সমাবেশ চলাকালীন সময়ে জাফলংয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।