২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশের বিচক্ষণতায় আকবর গ্রেফতার হয়, আমরা সোর্সকে আলাদা পুরস্কৃত করতে চেয়েছিলাম

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ১২, ২০২০
পুলিশের বিচক্ষণতায় আকবর গ্রেফতার হয়, আমরা সোর্সকে আলাদা পুরস্কৃত করতে চেয়েছিলাম

Sharing is caring!

পুলিশের বিচক্ষণতায় আকবর গ্রেফতার হয়, আমরা সোর্সকে আলাদা পুরস্কৃত করতে চেয়েছিলাম।

 

ইফতেখার আলম চৌধুরী ::

সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তে থেকে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ আলোচিত রায়হান হত্যার মুলহোতা(বরখাস্ত)এসআই আকবর হোসেন ভুঁঞাকে আটক করা হয়। গত ০৯ নভেম্বর তাঁকে আব্দুর রহিম নামে স্থানীয় এক যুবক আটক করে কানাইঘাট থানার ওসিকে উদ্দেশ্য করে রহিম বলেন, ওসি স্যারকে বলে দাও, আমি তাকে পাইছি, লইয়া রওয়ানা দিরাম। এমন কিছু কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সুতারাং এই যখন প্রসঙ্গ। তখন আজ রাতে লন্ডন ভিত্ত্বিক এক অনলাইন চ্যানেলের লাইভে আকবর

গ্রেফতারের ক্রেডিট নামা নিয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার বলেন, আকবর কে গ্রেফতার করা আমার দায়িত্বের বাইরে ছিলো। কিন্তু সিলেটবাসীর আবেগ অনুভূতির কথা মনে করে সবার দিকে তাকিয়ে জেলা পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রমে আকবর কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন,আমরা নিরাপত্তার জন্য সোর্সের নাম উল্লেখ করতে চেয়েছিলাম না। কিন্তুু তারা যদি নিয়ম ভঙ্গ করেন তখন আর কিছু করার থাকেনা।আমরা সোর্সের নাম প্রকাশ না করে পুরুস্কার দিতে চেয়েছিলাম।

আমরা ক্রেডিট নিব কেন? দেশ পরিচালনা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর অধীনে পুরো দেশ চলছে। সুতারাং আমরা জনগনের সেবক হিসেবে কাজ করছি।

পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ আসামী ধরতে সোর্সের সহযোগিতা চায়। কিন্তু সোর্সের নাম ফ্লাস করে না।
তিনি বলে বলেন, আকবর কে ধরতে কানাইঘাটের এক শিক্ষক,জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সহযোগিতা করেছেন তা নিঃসন্দেহ প্রশংসার দাবি রাখে।

পুলিশ সুপার বলেন, যে সকল সোর্স আকবর কে ধরতে সহযোগিতা করেছেন তাদের কে আমরা আলাদাভাবে পুরস্কৃত করতে চেয়েছিলাম।
পুলিশ সুপার আক্ষেপ করে বলেন, সব পুলিশ সমান নয়। আকবর কে গ্রেফতার করা আমাদের দায়িত্বের বাইরে ছিলো। তারপরও আমরা তাকে আমাদের দায়িত্বের বাইরে থেকে কাজ করেছিলাম। কিন্তু জনগন, আজকে পুলিশ কে ধন্যবাদ না দিয়ে সমালোচনা করছে যা বেদনাদায়ক। তিনি সকলের প্রতি ঘটনমূলক সমালোচনার আহবান জানান।

সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, সেদিন আমরা প্রেস কনফারেন্সে বলেছি পুলিশের বিশ্বস্থ বন্ধুদের সহযোগীতায় আকবরকে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আটক করেছে। অথচ আজকে যারা না জেনে না বুঝে এই বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অযাচিত আলোচনা-সমালোচনা করছেন সেটাা কি আসলে ঠিক হচ্ছে তিনি বলেন, অনেকে না বুঝে না জেনে সমালোচনা করছেন এটা কিন্তু ঠিক না।

তবে জানা যায়, আব্দুর রহিমসহ ভারত সীমান্তবর্তী আরো কয়েকজন ছিল পুলিশের বিশ্বস্থ বন্ধু। তাদের উদ্দেশ্য করেই এসপি ফরিদ উদ্দিন ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন।

জানা যায়, রায়হান হত্যার মুলহোতা আকবর ভুঁঞা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শিলচরের একটি বাসায় বসবাস করতে থাকেন। যখন তিনি জানতে পারেন তাকে আটক করতে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। তখন তিনি শিলচর থেকে গুহাটি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। এসময় শিলচরে থাকা কানাইঘাট থানা পুলিশের সোর্স তাকে ১ লক্ষ টাকা চুক্তিতে শিলচর থেকে গুহাটি নিতে রাজি হন। কিন্তু গুহাটি না নিয়ে ওই সোর্স রোববার কানাইঘাট সুরইঘাট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু সুরইঘাট সীমান্তে বিএসএফ এর কড়া নিরাপত্তা থাকায় রোববার তাকে বাংলাদেশে আনতে পারেননি। পরদিন সোমবার ডনা সীমান্ত দিয়ে আকবরকে আব্দুর রহিমের কাছে হ্যান্ডওভার করেন ওই সোর্স।

আরো জানা যায়, আকবরকে গ্রেপ্তার করতে এসপি ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করেন দুই থানার ওসি। তখন কানাইঘাট সীমান্তে সোর্স হিসেবে শাহাব উদ্দিনকে নিয়োগ দেন ওসি শামসোদ্দোহা। শাহাব উদ্দিন স্থানীয় সালেহ আহমদকে এ ব্যাপারে সহযোগীতা করার জন্য বলেন। ডনা এলাকার খাসিয়াদের সাথে রহিমের ভালো সম্পর্ক থাকায় সালেহ আহমদ চুক্তিতে আব্দুর রহিমকে নিয়োগ দেন। কানাইঘাট থানার ওসির পরামর্শক্রমে শাহাব উদ্দিন ও সালেহ আহমদের নির্দেশে আকবরকে খাসিয়া সীমান্তে এনে আব্দুর রহিমের কাছে হ্যান্ডওভার করেন শিলচরে থাকা ওই সোর্সের হাতে। এরপর আব্দুর রহিম জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন আকবরকে।

ফেসবুকে প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি পাহাড়ি ছড়ায় পাথরের উপর আকবর হোসেনকে বসিয়ে রেখে হাত-পা বাঁধছেন কয়েকজন যুবক। এ সময় চারপাশ ঘিরে রাখেন স্থানীয় কিছু মানুষ। তার পায়ে রশি বাঁধা ছিল। সেই বাঁধন খুলে আকবরের বাহু বাঁধছিলেন যুবকরা।

এ সময় ওই যুবকদের একজনের কাছে একটি ফোন আসে ফোনটি সাদা গেঞ্জি পড়া যুবকের কাছে এনে দেন অপর যুবক সাদাগেঞ্জী পড়া ওই যুবক (বাংলাদেশী রহিম উদ্দিন) ওপর প্রান্ত কথা বলা লোককে সালেহ বলে সম্বোধন করেন এবং বলেন “ওসি স্যারকে বলে দাও, আমি তাকে পাইছি লইয়া রওয়ানা দিরাম। সে আমার সাথে আছে। আমার নেট নাই।” এ কথা বলেই লাইন কেটে দেন রহিম উদ্দিন। মুলত রহিম উদ্দিন পুলিশের প্রধান সোর্স সালেহ আহমদকে ফোনে এসব কথা বলেছিলেন।

কানাইঘাট থানার ওসি সামসুদ্দোহা ও ২নং লক্ষীপ্রসাদ ইউপি চেয়ারম্যান জেমস লিও ফার্গুশন নানকার একান্ত প্রচেষ্টায় গ্রেপ্তার করা হয় আকবরকে। তবে দুই দেশের সীমান্ত আইন ও নানাবিধ জটিলতার কারণে সিলেট জেলা পুলিশ ও কানাইঘাট থানা পুলিশ কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
পরিশেষে বলা যায়- জনতার নয়, পুলিশের বিচক্ষণতায় আকবরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আইনি জটিলতার জন্য পুলিশ সোর্স সরাসরি অন্য সীমান্ত থেকে আকবরকে নিয়ে আসতে পারেন না বলে, রহিমের সাথে চুক্তি সম্পাদন হয়।