Sharing is caring!
এম এ সালাম রুবেল,ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ
তিনি একজন ফার্মাসিস্ট। চাকরি জীবন শুরু ২০১১ সালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে যোগদানের মাধ্যমে। এর কয়েক বছর পর তিনি বনে যান বেকার ফার্মাসিস্টদের একটি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সংগঠনটির শীর্ষ পদে থেকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে কৌশলে বেকার ফার্মাসিস্টদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। সেইসব টাকায় আবার নিজের নামে-বেনামে গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ। এই ফার্মাসিস্টের নাম আলমগীর রহমান। বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মালগাঁও হারিয়াকন গ্রামে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) সহ বিভিন্ন দপ্তরে গত ২৭ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে দায়ের করা লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আলমগীর রহমান ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট হিসেবে তার চাকরি জীবন শুরু করেন ২০১১ সালে। ২০২০ সালের মে মাসে সরকারিভাবে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১তম গ্রেডে ফার্মাসিস্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যোগ দেন আলমগীর রহমান।
আরও জানা যায়, সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী রোগীদের হাতে সঠিক ওষুধ বুঝিয়ে দিতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগের বিধান থাকায় ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ৬৩৭টি শূন্য পদে ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনের ‘ফার্মাটেক’ শিক্ষার্থীদের রিটের কারণে আটকে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া। এরপর শুরু হয় বেকার ফার্মাসিস্টদের আন্দোলন। দাবী আদায়ে গড়ে উঠে বাংলাদেশ বেকার ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট এসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান আলমগীর রহমান। বেকার ফার্মাসিস্টদের সরকারিভাবে হাসপাতালগুলোতে নিয়োগের দাবীতে আন্দোলন চালিয়ে যায় সংগঠনটি। ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের সময়ে তাদের নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেই পীরগঞ্জের স্থানীয় দালাল দুলাল সহ বিভিন্ন জেলায় তার নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে বেকার ফার্মাসিস্টদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নেন আলমগীর রহমান। টাকা নিয়ে চাকরিও পাইয়ে দিয়েছেন অনেককে।
বর্তমানে আলমগীর রহমান বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সচিব হিসেবে দায়িত্বে আছেন। অভিযোগে আরও জানা গেছে, নিয়োগ বাণিজ্যের প্রায় ৪ কোটি টাকায় তিনি নিজ এলাকা পীরগঞ্জ, পার্শ্ববর্তী জেলা দিনাজপুর ও ঢাকায় গড়েছেন নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ। পীরগঞ্জ উপজেলার হারিয়াকন গ্রামে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন আম বাগান। যাতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ওই এলাকার আশে-পাশে প্রায় ৩০টি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন। বাড়ির পাশে আরসিসি পিলার দিয়ে তৈরি করছেন গরুর খামার। জানা যায়, পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার কাঞ্চন ব্রীজ এলাকায় কোটি টাকার জমির প্লট কিনেছেন তার মায়ের নামে। আর ঢাকায় প্রায় কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্লাট কিনে ছাত্রাবাস হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়াও ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ পৌর শহরের পশ্চিম চৌরাস্তার পাশে ‘গুড বাই’ নামে একটি বিলাসবহুল শপিং কমপ্লেক্সও দিয়েছেন আলমগীর।
তবে নিয়োগ বাণিজ্যের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সম্পদ গড়ে তোলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ফার্মাসিস্ট আলমগীর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তোলা এইসব তথ্যের কোন ভিত্তি নেই। সব বানোয়াট ও মিথ্যা।’
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম বলেন,‘বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’