২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

শীত আসতেই শার্শা উপজেলায় খেজুর গাছ তোলায় ব্যস্ত গাছিরা

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ৫, ২০২০
শীত আসতেই শার্শা উপজেলায় খেজুর গাছ তোলায় ব্যস্ত গাছিরা

Sharing is caring!

কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধিঃ যশোরের শার্শা উপজেলার শীতের আগমনের সাথে সাথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে বিভিন্ন অঞ্চলের গাছিরা। গ্রামের আঁকা-বাকা পথের পাশে পুকুর পাড়ে সারি সারি খেজুর গাছের পুরাতন ডাল পালা কেটে পরিষ্কার পরিচ্ছন করার কাজে ব্যাস্থ হয়ে পড়েছে।গরমের আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে শীত মৌসুম শুরু হয়।

সরেজমিনে উপজেলার খলসি,ভুলোট,অভায় বাস,রুদ্রপুর সহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বেশী শীতের তীব্রতা দেখা না দিলেও এরই মধ্যে অনেক গাছি খেজুর রস সংগ্রহের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন। শীত গ্রাম অঞ্চলের গাছিদের কাছে বিভিন্ন মাত্রায় রূপ নিয়ে আসে। নানা স্বপ্ন আর প্রত্যাশায় তাদের অনেকটা সময় কেটে যায় শীতে খেজুর গাছের সাথে। সারাদিন এক গাছ থেকে অন্য গাছ এভাবেই তাদের দিন কেটে যায়। গাছির জীবন সংগ্রামে বহু কষ্টের মাঝে অনেক প্রাপ্তিই মিটে যায় গ্রাম বাংলার এই জনপ্রিয় খেজুর রস আহরণের সাথে। গাছিদের কাছে এই সময়টা হয় অনেক আনন্দের। গাছ কাটার জন্য গাছের মাথার এক দিকের ডাল কেটে পরিষ্কার করা হয়। আর কাটা অংশের ঠিক মাঝ বরাবর নিচে দুটি ভাজ কাটা হয়। সে ভাজ থেকে কয়েক ইঞ্চি নিচে একটি সরু পথ বের করা হয়। এই সরু পথের নিচে বাঁশের তৈরি নালা বসানো হয়। এই নালা বেয়ে চুয়ে চুয়ে পাত্রে রস পড়ে। সাধারণত দুপুরে গাছে ভাড় বেঁধে রাখা হয়, সারা রাতে রস পাত্রে পড়তে থাকে। এসময় বিভিন্ন ধরনের পাখিরা গাছে ভিড় করে রস খাওয়ার জন্য। গাছ কাটার পর দুই দিন পযন্ত রস পাওয়া যায়। প্রথম দিনের রস দিয়ে পায়েস,বিভিন্ন পিঠা,পাটালি গুড় তৈরী হয়, আর দ্বিতীয় দিনের রসে ঝোলা গুড় তৈরী হয়। খেজুর গাছ একবার কাটার পর পাঁচ-ছয় দিন পর কাটা হয়। গাছের কাটা অংশ শুকানোর সুবিধার জন্যই সাধারণত পূর্ব ও পশ্চিম দিকে গাছ কাটা হয়। যাতে সূর্যের আলো সরাসরি কাটা অংশে পড়ে। ভোরের হাড় কাপানো ঠান্ডায় গাছ থেকে রসের পাত্র নামিয়ে হিমশীতল খেজুর রস খাওয়ার স্বাদটাই মধুর। ভোর বেলায় রস খেলে শীত মনে হয় আরো বেশি জেঁকে বসে। শীত লাগে লাগুক তবুও রস খাওয়ার চাই। যতই শীত লাগুক না কেনো রস খেতেই হবে। তারপর রোদ পোহানো আনন্দের অনুভূতি অন্যরকম। ভোরে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা রোদ পোহানোর সাথে অপেক্ষায় থাকে কখন গাছ থেকে নামানো হবে খেজুরের সু-মিষ্টি রস।একটি খেজুর গাছ থেকে ২৫/৩০ বছর বয়স পর্যন্ত গাছ থেকে রস পাওয়া যায়।গাছের বয়স যত পুরনো হয় রস দেয়া ততো কমে যায়। পুরনো গাছ রস কম দিলেও থেতে খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়।
গাছিরা জানায়, বেশি রস সংগ্রহ করা হলে গাছের জন্য অনেক ক্ষতিকর। নতুন করে কেউ গাছির কাজ করতে আগ্রহী না হওয়ায় অনেক খেজুর গাছ পরিত্যাক্ত থেকে যাচ্ছে। সে জন্য সব গাছ থেকে রস বের করা সম্ভব হচ্ছে না। খেজুর গাছ বিশেষ কায়দায় কাটতে হয়। গাছিরা বিভিন্ন উপকরণের সমন্বয়ে খেজুর গাছ পরিচ্ছন্ন ভাবে কাটার জন্য ব্যস্ত থাকেন। গাছ কাটতে লোহা তৈরি ধারালো গাছি দা, মোটা দড়ি, দা রাখার জন্য বাঁশ বা প্লাস্টিকের রশি তৈরি করে কোমরে বেধে গাছে উঠা নামা করে। দড়িটা বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়। এই দড়ির দুই মাথায় বিশেষ কায়দায় গিট দেওয়া থাকে। গাছে উঠার পর অতি সহজে গিট দুটি জুড়ে দিতে হয়। অনেকে আবার গাছের মাথায় দাড়ানোর জন্য শক্ত কাঠ বা বাঁশ রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে দেয়। এতে গাছি নিরাপদে গাছ কাটাতে পারে। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি রসের পিঠা খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। আর খেজুর গুড়ের সন্দেশের স্বাদ হয় অপূর্ব। বলতে গেলে একবার খেলে স্বাদ সারাজীবন যেন মুখে লেগে থাকে। গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য সাধারণত মাটির পাত্র ব্যবহার করা হয়। এলাকা ভিত্তিক অনেকে ভাঁড় বলে। গুড় তৈরির জন্য রস জ্বাল দেওয়া হয় মাটির জালায় বা টিনের তাপালে। খুব সকালে রস নামিয়ে এনেই জ্বালানো হয়। জ্বাল দিতে দিতে এক সময় রস ঘন হয়ে গুড়ে পরিণত হয়। এ গুড় মাটির হাঁড়ি বা বিভিন্ন পাত্রে রাখা হয়। এ সময় গ্রামের বাজার গুলোতেও জমজমাট হয়ে ওঠে খেজুর রস এবং গুড়ে হাট।