২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

”সিলেটে চোরাচালানের মুকুটহীন রাজা বেন্ডিস করিম”

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ২৩, ২০২০
”সিলেটে চোরাচালানের মুকুটহীন রাজা বেন্ডিস করিম”

Sharing is caring!

এম আব্দুল করিম, সিলেট থেকেঃ ভৌগলিক দিক থেকে যাচাই করলে দেখা যায় বাংলাদেশের তিন দিকেই মহারাষ্ট্র ভারত আর এ কারণেই সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায়শই চলে চোরাচালানের মহোৎসব।আর দেশের সবচেয়ে নিরাপদ চোরাচালানের ট্রানজিট হচ্ছে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা।এই এলাকায় বেন্ডিস করিমের নেতৃত্বে চোরাকারবারীরা দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখানে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চোরাচালান পাচার করা হচ্ছে। এসব চোরাচালানের নেতৃত্বে রয়েছে জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের ঘিলাতৈল গ্রামের মছদ্দর আলীর পুত্র আব্দুল করিম প্রকাশ বেন্ডটিস করিম।বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত সে বিজিবির লাইনম্যান এর কাজ করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।

প্রতিদিন রাতে চোরাকারবারিগণ বেন্ডিস করিমকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ পণ্য অবাধে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করাচ্ছেন। বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র থেকে শুরু করে মাদক, শাড়ি, গরু-মহিষ,সিগারেট,ঔষধ সামগ্রী,মোবাইল ফোন, জুতা, সাপের বিষ, মোটরসাইকেল,টায়ার,কসমেটিক্স ও স্বর্ণের বার।

তাছাড়াও সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কাচামালের চালানও প্রবেশ করছে অনায়াসে। এর নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সিলেট-তামাবিল রোড, গোয়াইনঘাট-সালুটিকর রোড, কানাইঘাট-রাজাগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ রোড, জকিগঞ্জ-সিলেট রোড ও কোম্পানীগঞ্জ-সালুটিকর রোড। সীমান্ত বিজিবির হাত ছুয়ে সিলেট জেলা পুলিশের নাকের ঢগা দিয়ে সদর এলাকা হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিঠিয়ে পড়ছে এসব পণ্য। এতে করে সামাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ এরকম কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। সিলেটের লাইনম্যান এর কাজ করছেন এক প্রভাবশালী নেতার ক্যাডার যার সংবাদ ইতিমধ্যে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।

বিজিবির অবৈধ টাকার লাইনম্যান বেন্ডিস করিম চোরাকারবারীদের কাছ থেকে নিয়মের অতিরিক্ত টাকা আদায় করার চেষ্টা করেন। ফলে চোরাকারবারীরা করিম বাহিনীর সাথে একের পর এক সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।কিন্তু কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না বিজিবির নামে বেন্ডিস করিমের চাঁদাবাজি। তার এমন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট চোরাকারবারীরা। বেন্ডিস করিম তার দল-বল নিয়ে দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন করিমের বিরুদ্ধে কোন ধরণের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেন্ডিস করিমকে গ্রেফতারের বদলে স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের উপর মহলের চাপে মামলা দিতে বেন্ডিস করিমের সাথে সিষ্টেম ও বুঙ্গাড়ীদের চুক্তির মাধ্যমে কিছু সংখ্যাক গরু-মহিষ এবং হাতে গুনা কয়েক বস্তা মটরশুটি আটক করে জনসাধারনের আইওয়াশ করছেন, তাও নাম মাত্র এক দুটি চালান আটক করেন। কিন্তু স্থায়ী ভাবে বন্ধ ও বড় ধরণের কোন অভিযান দিতে দেখা যায়নি।

কিন্ত চোরাচালানের বিরুদ্ধে অভিযানে মাঠে রয়েছে সিলেট র‌্যাব-৯ এর সদস্যরা। এদিকে চোরাকারবারীদের নেতৃত্ব দিয়ে আসা লাইনম্যান বেন্ডিস করিম বিজিবির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এই টাকার লেনদেন নিয়েও দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছে বেন্ডিস করিম ও চোরাকারবারীদের। তবে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না সীমান্তের চোরাচালান।জানা যায় যে, অবৈধ পথে আসা ভারতীয় গরু-মহিষের বৈধতা দিচ্ছে স্থানীয় জৈন্তাপুর বাজার। এছাড়া অন্যান্য পণ্য সিলেট নগরীতে নিরবে প্রবেশ করছে। এখানেও রয়েছে চোরাকারবারীদের প্রভাবশালী লাইনম্যান।যিনি আওয়ামীলীগ নেতাদের ছত্র-ছায়ায় রয়েছেন।

ইতোমধ্যে চোরাচালানের লাইনের চাঁদা নিয়ে জৈন্তাপুর বাজারে ২টি গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। চোরাচালানকে কেন্দ্রকরে যে কোন মুহুর্তে উপজেলার ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, টিপরাখলা এবং কমলাবাড়ী এলাকায় খুনের মত ঘটনা ঘটতেপারে এমনটা আশংঙ্কা সচেতন মহলের।তাই আগে থেকেই বেন্ডিস করিম চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন এলাকাবাসী।

এদিকে প্রতিদিন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত এলাকায় মহড়া দিতে থাকে বেন্ডিস করিমের ভাগিনা রুবেল ও আলিম উদ্দিন বাহিনীর সদস্যরা,যার ফলে স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে জীবন-যাপন করছেন।

উল্লেখ্য যে, জৈন্তাপুর বিজিবি ক্যাম্পের আওতাধীন ১২৮৬নং আন্তর্জাতিক পিলার হতে ১২৯৬নং পিলার এলাকা। অন্যান্য এলাকার তুলনায় এই এলাকার সুযোগ সুবিধা ভালো। ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে বর্ডারের জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিনা বাঁধায় ঢুকতে পারে চোরাকারবারীদের গাড়ী। নির্ধারিত টাকা লাইনম্যান বেন্ডিস করিমের নিকট পরিশোধ করার পর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সীমান্তের ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, টিপরাখলা, গৌরীশংক, কমলাবাড়ী, গোয়াবাড়ী, বাইরাখেল এলাকার মাধ্যমে মাল পৌঁছে যায়।

সুযোগ সুবিধা ভাল থাকায় উপজেলার এই রোড গুলো দিয়ে অন্তত ৮ হতে ১০কোটি টাকার ভারতীয় মটর সাইকেল, মোবাইল হ্যান্ড সেট, শাড়ী, মহিষ,গরু, কসমেট্রিক্স, হরলিক্স, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, বিভিন্ন ব্যান্ডের অফিসার চয়েস মদ, আমদানী নিষিদ্ধ ভারতীয় শেখ নাছির উদ্দিন বিড়ি, বিভিন্ন ব্যান্ডের সিগারেট, সুপারী, বাংলাদেশ হতে ভারতে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার বস্তা মটরশুটি, মটর ঢাল ও নারী। সাথে স্থানীয় ইউপি সদস্য মনসুরসহ বুঙ্গাড়ীদের গরু-মহিষের চালান আসছে। এই গরু-মহিষের বৈধতা দিচ্ছে স্থানীয় জৈন্তাপুর বাজারের ইজারাদাররা।

সীমান্তে বসাবাসরত সাধারন নাগরিকরা জানান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োজিত লাইনম্যান বেন্ডিস করিমের প্রায় ৩০জন সোর্সদের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০ হতে ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ১০ হতে ১৫ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য ও গবাদি পশু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সীমান্তের বাসিন্ধারা আরও জানান কিছু কিছু সময় অনেক চোরাকারবারী করিমকে নির্ধারিত টাকা পরিশোধ না করলে ওই চোরাকারবারীর নিয়ে আসা পণ্য ও গবাদি পশু আটক করা হয়। সীমান্তে আইনশৃংখলা বাহিনীর একমাত্র অবৈধ আয়ের হাতিয়ার হলেন সীমান্তের রাজা বেন্ডিস করিম। এর আগে ছিলেন শামছু মিয়া নামের আরেক লাইনম্যান। তাকে লাইন আউট করে করিম এখন জৈন্তাপুর সীমান্ত রাজ্যের মুকুটহীন রাজা।