২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

যৌতুক ই কাল হল সামিয়ার জীবনে!

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ২২, ২০২০
যৌতুক ই কাল হল সামিয়ার জীবনে!

Sharing is caring!

রূপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

মিষ্টি খেতে চেয়েছিল সামিয়া। মঙ্গলবার সকালে মিষ্টি নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যে মায়ের কাছে ফোন আসে সামিয়ার, কান্নাজড়িত কণ্ঠে শ্বশুড়বাড়ির লোকদের মারধরের অভিযোগ করে। এর কিছু সময় পরই সামিয়ার স্বামী অনিক ফোন করে জানায়, ‘সামিয়া আত্মহত্যা করেছে।’ মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার বাইরে মেয়ের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে সামিয়ার বাবা সামিদুল হক বিলাপ করে বলছিলেন, মেয়েটা আমার মিষ্টি খেতে চেয়েছিল।’ মাত্র চার মাস আগে মা–বাবার অমতে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিল পনেরো বছরের কিশোরী সামিয়া হক। চার মাস পর সেই সামিয়াই স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয়েছে লাশ হয়ে। সামিয়ার মা–বাবার অভিযোগ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে সামিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ কায়েতপাড়া পূর্বগ্রাম এলাকায় ভাড়া থাকেন সামিয়ার বাবা সামিদুল হক। সেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে অনিককে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সামিয়া। মঙ্গলবার রাতে রূপগঞ্জ থানায় কথা হয় সামিয়ার বাবা ও মা নিলুফা বেগমের সঙ্গে। তাঁরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের কাছে সামিয়ার স্বামী অনিক ফোন করে বলে,‘সামিয়া আত্মহত্যা করেছে।’ খবর পেয়ে তাঁরা রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটে গিয়েছিলেন। এ সময় সেখানকার চিকিৎসক সামিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। এত আদরের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে, চিকিৎসকের এমন কথা মেনে নিতে পারেননি সামিয়ার মা–বাবা। তাঁরা মেয়েকে নিয়ে ছুটে যান রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকও সামিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। তারপর মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এক মাস আগে মেয়েকে দেখতে গেলে তাঁর কাছে বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের জন্য দুই লাখ টাকা দাবি করেন সামিয়ার শ্বশুর। সে টাকা দিতে কিছুদিন সময় চান ইজিবাইকচালক সামিদুল।বিলাপ করছিলেন নিলুফা বেগম। পাশে দাঁড়িয়েই মেয়ের স্মৃতিচারণা করছিলেন সামিদুল হক। তিনি জানান, বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন সামিয়া। তাঁরাও মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে মেনে নিয়েছিলেন। তবে শুরু থেকেই সামিয়া ফোন করে তাঁদের কাছে কান্নাকাটি করত। পরবর্তী সময়ে তিনি জানতে পারেন, নানান অজুহাতে মেয়েকে বকাঝকা ও মারধর করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এরই মধ্যে গত এক মাস আগে মেয়েকে দেখতে গেলে তাঁর কাছে বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের জন্য দুই লাখ টাকা দাবি করেন সামিয়ার শ্বশুর। সে টাকা দিতে কিছুদিন সময় চান ইজিবাইকচালক সামিদুল। এরপর থেকে সামিয়ার ওপর নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে যায়। সামিদুল বলেন, তাঁর মেয়েকে মারধরের পর হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই সামিদুল হক বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে সামিয়ার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মারধরের ঘটনা ঘটে থাকলে ময়নাতদন্তে সেগুলো উঠে আসবে। সেই অনুযায়ী অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। এ বিষয়ে কথা বলতে অনিকের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকে তারা বাড়িতে নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।