২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ছয়দিনে ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ শেষ, আজ রায়-

admin
প্রকাশিত অক্টোবর ১৯, ২০২০
ছয়দিনে ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ শেষ, আজ রায়-

Sharing is caring!

মোঃজাহান জেব কুদরতী, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট ১৯/১০/২০২০ বিশেষ অনুসন্ধানে,
দেশের বিচার ব্যবস্থায় নজীরবিহীন এক ইতিহাস স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বিচারপ্রার্থীরা দ্রুত বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন আশার আলো দেখতে শুরু করবেন এবং শুরু হবে নতুন অধ্যায়। দ্রুততম সময়ে ষ্পর্শকাতর ধর্ষণ মামলার বিচার এতোকাল আশাই করা যায়নি। ফৌজদারী মামলা সাধারণ ভাবে বছরের পর বছর আদালতে লাল ফিতায় বন্দি হয়ে টেবিলে টেবিলে গড়াগড়ি খায়।সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বাংলাদেশের এই দীর্ঘসূত্রীতার বিচার ব্যবস্থা।নবযুগের সূচনা করতে যাচ্ছে বাগেরহাটের মতো ছোট্র শহরের এক আদালত। একটি ধর্ষণ মামলা মাত্র ৬ কার্যদিবসে সাক্ষী, সাফাই সাক্ষী যুক্তি-তর্ক সব প্রক্রিয়া শেষে রায় ঘোষণা হবে আজ সোমবার।

অনুসন্ধান অনুযায়ী-বাগেরহাট জেলার মোংলা আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় পিতৃহীণ ৭ বছরের এক শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়।তারপর তদন্ত, চার্জ গঠন, স্বাক্ষী গ্রহণ ও যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন ৬ কার্যদিবসে সম্পন্ন করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২.

সূত্র জানায়-রোববার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা ৩ ঘন্টা বাগেরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ জনাব মোঃনূরে আলম চাঞ্চল্যকর এই মামলার স্বাক্ষী,সাফাই স্বাক্ষী, বাদী বিবাদী পক্ষে যুক্তিতর্ক শোনার পর সোমবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন বিচারক মহোদয়। স্পর্শকাতর একটি ফৌজদারী মামলা এতো কম সময়ে বিচার কাজ শেষ করার দৃস্টান্ত বাংলাদেশে এই প্রথম।

বাগেরহাট জেলায় বিচার বিভাগ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলার বিচার কাজ স্বল্প সময়ে শেষ করা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নারী উন্নয়ন ফোরাম।০এই রায়ের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যের যে দীর্ঘসূত্রীতা ছিল বা সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে বিচার না পাওয়ার যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল তা অনেকাংশে দূর হবে বলে মত তাদের।

স্পর্শকাতর এই মামলার আসামী আব্দুল মান্নান সরদার মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার প্রয়াত আহম্মদ সরদারের ছেলে। মামলার নথী থেকে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয় প্রকল্প এলাকায় পিতৃহারা ৭ বছর বয়সী এক শিশু তার মামার কাছে মানুষ হচ্ছিল।৩ অক্টোবর’২০ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পঞ্চাশোর্ধ প্রতিবেশী মান্নান সরদার শিশুটিকে বিস্কুটের প্রলোভন দিয়ে নিজের ঘরে ডেকে নেয়।এরপর শিশুটিকে ধর্ষণ করে মান্নান।

ঘটনা জানাজানি হলে ওইদিন রাতেই মেয়েটির মামা মোংলা থানায় মান্নানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোংলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিত মুখার্জ্জী তদন্তে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ১৬ জনকে স্বাক্ষী করে ৮ দিনের মাথায় ১১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

 

বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বেঞ্চ সহকারি (পেশকার) গোপাল চন্দ্র পাল জানান, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় জুডিশিয়াল আদালত মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে পাঠায়। আদালতের বিচারক ১১ অক্টোবর মামলাটি আমলে নিয়ে পরদিনই চার্জ গঠন করেন। ১৩ অক্টোবর বাদী পক্ষের মোট ১৬ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ১৪ অক্টোবর মামলার সংশ্লিষ্ট স্বাক্ষী চিকিৎসক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নারী পুলিশ সদস্য এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ১৫ অক্টোবর আসামীর আতœপক্ষ সমর্থনে সাফাই স্বাক্ষীরও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। রোববার বাদী বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি ০শেষে সোমবার রায়ের দিন ধার্য করা হয়।

 

এই ধরনের স্পর্শকাতর ফৌজদারি মামলায় দেশের কোন নিন্ম আদালতে এতো স্বল্প সময়ে বিচারকাজ শেষ করা যায়নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারি কৌসুলি (এপিপি) রনজিৎ কুমার মন্ডল জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুষ্পষ্ট বলা আছে কোন ধর্ষণের ঘটনার অভিযুক্ত সঙ্গে সঙ্গে আইন প্রয়োগকারি সংস্থার হাতে ধরা পড়লে ১৫কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করার নজির সৃষ্টি হলো। শিশু ধর্ষণের মামলাটি তারই প্রমাণ। মামলাটি পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। ঘটনার পর পরই আসামীদের গ্রেপ্তার, ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা, স্বাক্ষী হাজির এবং অভিযোগপত্র দাখিলে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপণ করেনি পুলিশ।আইন মেনে ধর্ষিতা শিশুটির ২২ধারা ও ১৬১ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।এসব কারনে ট্রাইব্যুনালের বিচারকের পক্ষে মাত্র ৪দিনে কাজে দীর্ঘসূত্রিতা হয়নি।মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে পৌছেছে।

রোববার টানা তিন ঘন্টা বাদী বিবাদি পক্ষে যুক্তিতর্কের উপর শুনানি হয়েছে। সোমবার এই আলোচিত মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন বিচারক। বাগেরহাটের আদালতের এই সক্ষিপ্ত সময়ে রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়ে থাকবে। বিগত দিনে এতো কম সময়ে দেশের কোন আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কোনো রায় ঘোষণা হয়নি বলেও জানান এই আইন কর্মকর্তা।

সম্প্রতি দেশব্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতন একটু বেড়েছে। যা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে দেশের সর্বত্র। স্বল্প সময়ে রায় ঘোষণার মধ্যে দিয়ে মানুষের মধ্যে যে বিচারহীনতা,মামলার দীর্ঘসুত্রিতা নিয়ে সমালোচনা হয় অনেকটাই দূর হবে বলে মনে করেন। নারী উন্নয়ন ফোরামের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক সমন্বয়কারি ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উন্নয়নকর্মী রিজিয়া পারভীন প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সম্প্রতি বাগেরহাটের মোংলা দরিদ্র পরিবারের একটি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করেছে। মামলাটির যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। মামলাটি রায়ের জন্য এখন অপেক্ষমান রয়েছে। যেকোনদিন রায় ঘোষণা হবে। আইন প্রয়োগকারি সংস্থা আন্তরিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে যে বিচার কাজ শেষ হতে পারে এটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দ্রুততার সাথে এমন মামলার বিচার শেষ করে রায় ঘোষণায় অপেক্ষমান শুধু বাগেরহাট না সারাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত হবো। এই রায়ের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যের যে দীর্ঘসূত্রিতা ছিল বা সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার না পাওয়ার যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল তা অনেকাংশে দূর হবে। দেশের সকল আইন প্রয়োগকারি সংস্থা নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো গুরুত্বেরসাথে কিনে আনে প্রায়ই।