২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কুকুর আতঙ্কে রূপগঞ্জবাসী !

প্রকাশিত আগস্ট ২৪, ২০২০
কুকুর আতঙ্কে রূপগঞ্জবাসী !

Sharing is caring!

কুকুর আতঙ্কে রূপগঞ্জবাসী !

 

 

 

ফয়সাল আহমেদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

 

বেওয়ারিশ কুকুরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রূপগঞ্জবাসী। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার  কারণে কুকুর নিধন বন্ধ থাকায় ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে ক্রমেই কুকুরের সংখ্যা বেড়ে চলছে। উপজেলায় প্রায় তিন হাজার বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে। জলাতঙ্কে আক্রান্ত কুকুরের কামড়ে ও আঁচড়ে গড়ে প্রতিদিন ৫ জন আক্রান্ত হচ্ছে। গত এক বছরে ৪ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে টিকা নিয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, গ্রামেগঞ্জে এখনো জলাতঙ্কের টিকা না নিয়ে কবিরাজের দাওয়াই নিচ্ছে। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রবে পথচারী থেকে শুরু করে বাজারে-বন্দরে লোকজন রীতিমতো আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করে। গত তিনমাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুকুরের কামড়ে প্রায় শতাধিক ব্যাক্তি আক্রান্ত হয়েছে।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রূপগঞ্জে হঠাৎ করেই বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই উপজেলার কোথাও না কোথাও জলাতঙ্ক কুকুড়ের কামড়ে ও আঁচড়ে আক্রান্ত হওয়ার খবর রয়েছে। গড়ে ৫ জন কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রায় তিন হাজার বেওয়ারিশ  কুকুড় রাস্তা-ঘাট, পথ-ঘাট ও অলিগলি দখলে রেখেছে। গত এক বছরে ২ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে টিকা নিয়েছে। জলাতঙ্কে আক্রান্ত গত ৫ বছরে ৭ জনের মারা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। রূপগঞ্জের কাঞ্চন ও তারাবো নামে দু’টি পৌরসভা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে কায়েতপাড়া, ভোলাবো, ভুলতা, দাউদপুর, রূপগঞ্জ সদর, গোলাকান্দাইল ও মুড়াপাড়া নামে ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ। গোটা উপজেলায় হাট-বাজার রয়েছে দেড়’শ উপড়ে। আর এসব এলাকায় প্রায় ৩০০০ হাজার অধিক বেওয়ারিশ কুকুর অবাধ বিচরণ করছে।

 

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পৌরসভার অধীনে কুকুড় নিধন অব্যাহত ছিলো। ওই বছরই ‘অভয়ারণ্য’ নামে এক এনজিও কুকুর মারাকে প্রাণী হত্যা ও পরিবেশবিরোধী বলে প্রচারণা শুরু করে। এরপর কুকুর নিধনের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে রিট করার পর কুকুর নিধনের উপড় উচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে কুকুর নিধন বন্ধে নির্দেশ দেয়।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, সপ্তাহে অন্তত ২/৩ জন কুকুড়ে কামড়ে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। আবার অনেক জটিল রোগীকে মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তাঘাটে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। কুকুরের যন্ত্রণায় ঘর থেকে বের হওয়া দায়। প্রত্যেক গ্রামে ও হাট-বাজারে কুকুরের অবাধ বিচরণ রয়েছে। গত কয়েক মাসে কুকুরের কামড়ে প্রায় শতাধিক লোক আক্রান্ত হয়েছে। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেলেও সরকারীভাবে কুকুর নিধণের কোন কাযক্রম চোখে পড়েনি। কথা হয় নগরপাড়া এলাকার ছলিম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাই এত কুকুর। রাস্তায় বের হলেই ঘেউ-ঘেউ করে তেড়ে আসে। আর রাত হলেতো কথাই নেই, গত কয়েক মাসে কুকুর মেরেছে এমন ঘটনা ঘটেনি। তারাবো বাজারে কথা হয় পারবেজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ৪/৫ টা করে কুকুর দোকানের সামনে এসে বসে থাকে। অনেক সময় ক্রেতারা ভয়ে আসতে চায় না। কুকুর নিয়ে সবাই আতঙ্ক আর ভোগান্তিতে আছে। অথচ কুকুর নিধণে কোন কাযক্রম নেই।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা ডাঃ ফয়সাল আহমেদ বলেন, সাধারণ কুকুরের কামড়ে সংক্রমণ, টিটেনাস রোগের আশঙ্কা থাকে। শিশুদের নাকে-মুখে কুকুর কামড়ালে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই তারা মারা যায়। র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর ও চিকার মাধ্যমেও জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়। আমাদের দেশে মূলত কুকুরের কামড়ে বা আচঁড়ে ( রক্ত বের না হলেও ) জলাতঙ্ক রোগ বেশি হয়।  কামসাইর  এলাকার চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাজন মিয়া। গত এক সপ্তাহ আগে তার নিজ বাড়িতে তাকে কুকুরে কামড়ায়। রাজন মিয়ার পিতা আব্দুল মালেক বলেন, কুকুরের সংখ্যা এতোই বেড়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে চলা দায়।  বেসরকারী হাসপাতাল আল-রাফি হসপিটালের চেয়ারম্যান, কলামিষ্ট ও গবেষক মীর আব্দুল আলীম বলেন, কুকুর আতঙ্কের প্রাণী। নিধন না হওয়ার কারণে কুকুরের উপদ্রব বেড়েই চলছে। আল-রাফি হাসপাতালে এসব রোগীদের গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। উপজেলা প্রাণী সম্পদ ডাঃ এবি এম জাহাঙ্গীর রতন বলেন, আসলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে কুকুর নিধণ সম্ভব হচ্ছে না। কুকুরের উপদ্রব যে হারে বাড়ছে তাতে সমাজের ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তবে জেলা থেকে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে কুকুর নিধন করার পরিকল্পনা রয়েছে।