২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ছাতক রেলওয়েতে লাগামহীন দুর্নীতি ও লুটপাট কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবসর নিচ্ছেন কর্মকর্তারা

admin
প্রকাশিত মে ১, ২০২০
ছাতক রেলওয়েতে লাগামহীন দুর্নীতি ও লুটপাট কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবসর নিচ্ছেন কর্মকর্তারা

Sharing is caring!

ওয়াসিদ আকরাম :: বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোন ছাতক রেলওয়েতে চলছে লাগামহীন দুর্নীতি ও লুটপাট। সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এখানের কর্মকর্তারা একের পর এক অবসরে চলে যাচ্ছেন।

 

দুর্নীতির বোঝা মাথায় নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল অবসর নিলেন ছাতক রেলওয়ের এ.ই.এন (নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী) মুজিবুর রহমান। এর আগে ফোরম্যান মোখলেছুর রহমানও কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবসর নিয়েছেন।

 

মুজিবুর রহমান ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ছাতক রেলওয়ের এ.ই.এন. পদে দায়িত্ব নেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি ছাতকের অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন।

 

কিন্তু তার দায়িত্বকালীন সময়ে অফিস না করেই বছরের পর বছর সরকারী বেতন-ভাতা, উৎসব -ভ্রমণভাতা সবই নিয়েছেন তিনি। রেলওয়ে সিলেট অঞ্চলের অধিকাংশ কর্মকর্তারাই এ বিষয়ে অবহিত আছেন।

 

ছাতকে মুজিবুর রহমানের অফিসে অনুপস্থিতি নিয়ে এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ছিলো চরম অসন্তোষ।

 

গত ১০মার্চ এ.ই.এন মুজিবুর রহমানকে ছাতকের নিজ দায়িত্বে অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদায়ন করা হয়। পরে তিনি ১৯মার্চ যোগদান করলেও কাগজে পত্রে ১২ মার্চ যোগদান দেখিয়েছেন।

 

এরপর থেকে তিনি আর অফিসে আসেন নি। এলপিআরে যাওয়ার কাগজে তিনি যোগদান দেখিয়েছেন ১৫ এপ্রিল। বিভিন্ন সময়ে রেলওয়ের এক অফিস সহকারী ও এক ওয়েল্ডারকে দিয়ে তিনি ছাতকের দায়িত্ব পালন করিয়েছেন।

 

এর পুরস্কার হিসেবে অবসর নেয়ার ৪ দিন পূর্বে ওয়েল্ডার কামাল উদ্দিন এস.এ.ই (ইলেক) কে ওয়েল্ডার গ্রেড-১ পদে পদায়ন করেন। যা সম্পূর্ন বেআইনি। সরকারের নিয়োগবিধি-৮৫ তে এরুপ পদায়ন স্থগিত করা হয়েছে।

 

পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে একটি নির্বাচন কমিটি ও নির্বাচনী পরিক্ষা গ্রহণ আবশ্যক। তা না করে তিনি একক ক্ষমতাবলে গত ২৬ এপ্রিল কামাল উদ্দিনকে পদায়নের আদেশ প্রদান করেন।

 

রেলওয়ের নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর এ ক্ষমতা নেই বলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন।

 

এদিকে ওয়েল্ডার কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে চুরি, জালিয়াতি, শ্রমিক নিয়োগ না করে ১৭ জন শ্রমিকের নামে বিল উত্তোলন করে টাকা আত্মসাৎ সহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

 

সিএসপি’র ওয়েল্ডার কামাল উদ্দিনকে দূর্নীতি ও অফিসের গোপন তথ্য ফাসের অভিযোগে ২০১১ সালে সিএসপি থেকে বিআর কার্যালয়ে বদলি করেন তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান জাবির।

 

২০১৪ সালের আগষ্ট মাসে কামাল উদ্দিনকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত ওয়ার্কস সুপার ভাইজার হিসেবে নিয়োগ দেন সে সময়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল জলিল। এর পর থেকেই সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।

 

২০১৫ সালের বর্ষা মৌসুমে রোপওয়ের ২ নং ভোলাগঞ্জ সেকশনের চলিতার ঢালা এলাকার ৩৫ নং ট্রেসেলে একটি পাথর বোঝাই নৌকা ধাক্কা লেগে নৌকা ডুবে গেলে ট্রেসেলেরও ক্ষতি হয়।

 

রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকরা নৌকাটি আটক করে কামাল উদ্দিনকে জানালে তিনি ঘটনার ৫ দিন পর ৩৫ নং ট্রেসেল এলাকায় যান।

 

এসময় তিনি নৌকা মালিকের কাছ থেকে ৯০,০০০ টাকা উৎকোচ নিয়ে পাথরসহ নৌকাটি ছেড়ে দেন এবং অস্থায়ী শ্রমিকদের (টিএলআর) বলেন নৌকাটি ছেড়ে দিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ রয়েছে।

 

একই সালে সুরমা নদীর পাড়ে রক্ষিত রেলওয়ের হাজার হাজার ঘনফুট পাথর বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন ওয়েল্ডার কামাল উদ্দিন ও অতিরিক্ত দায়িত্বের এ.ই.এন মুজিবুর রহমান।

 

নির্বাহী প্রকৌশলী ছাতক বাজার দপ্তরের চালার সিআই সীট টিন অপ্রয়োজনে বদল করে কম মূল্যের টিন দপ্তরের চালায় লাগিয়ে প্রায় ৩০০ পিস মূল্যবান টিন ট্রাক যোগে তার নিজ বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

 

২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রেল কলোনির রাস্তা পাকাকরণসহ কয়েকটি কাজ বিনা টেন্ডারে নিয়ে কোনো কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেন এ.ই.এন মুজিবুর রহমান, আইওডব্লিউ ফারুক হোসেন ও ওয়েল্ডার কামাল উদ্দিন।

 

গ্যাস, পানি,বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে টাকা আত্মসাৎ ও সরকারী খালি থাকা বাসা ভাড়া দিয়ে টাকা আত্মসাৎ এবং আব্দুল জলিল, ফায়েজুল ইসলাম, ময়বুল ইসলাম, মখলিছ আলী সহ ১৭ জন টিএলঅার কাগজে পত্রে যোগদান দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

 

অপরদিকে কর্মে অনুপস্থিত তাজুল ইসলাম নামক এক খালাসীকে এসএসই (কার্য) সিএসপি ছাতক বাজার দপ্তরে ১৬ এপ্রিল থেকে দপ্তরের কাজকর্মে সহায়তা করবেন, তাহার অনূকূলে কাচ্চা হাজিরা সীট সংরক্ষণ করা হবে।

 

দপ্তরে রক্ষিত হাজিরা খাতায় তাহার অনুকূলে ডিউটি (D) প্রদর্শন করে হাজিরা সীট প্রেরনেরও তিনি একটি আদেশ দেন অবসর নেয়ার আগেরদিন।

 

২০১৫ সাল থেকে এ.ই.এন মুজিবুর রহমানকে বিভিন্ন অপকর্মে সহযোগিতার কারনে অবসরের ৪ দিন আগে কামাল উদ্দিনকে একক ক্ষমতাবলে পদায়ন করেন মুজিবুর রহমান।

 

এ ব্যাপারে রেলওয়ের উর্ধতন উপ সহকারী প্রকৌশলী ভারপ্রাপ্ত বি আর (কার্য) আব্দুল নূরের কাছে জানতে চাইলে তিনি আদেশ দু’টি ও একাধিক বিষয় স্বীকার করে বলেন তার যোগদানের আগে এসব অনেক ঘটনা ঘটেছে।