Sharing is caring!
মনির সরকার, বিশেষ প্রতিনিধি ::
পাপের রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। সাধারণ ঘরের মেয়ে হলেও পাঁচ বছরে কয়েক কোটি টাকা ও বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অল্প সময়েই হয়ে উঠেছেন অপরাধ জগতের মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী। চলাফেরা করতেন গার্ড নিয়ে।
র্যাব বলছে, পাপিয়ার অবৈধ সব কর্মকাণ্ডের অন্যতম অংশীদার তার স্বামী সুমন। একসময় নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদে ছিলেন তিনি। পরে নরসিংদীর প্রয়াত পৌর মেয়র লোকমানের বডিগার্ড হন। ২০১২ সালের অক্টোবরে সুমন নরসিংদীর বাসাইলে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। পরে ঢাকায় পাড়ি জমান। ২০১৪ সালে যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা কমিটি ঘোষণা হলে তাতে পাপিয়াকে দেয়া হয় সাধারণ সম্পাদকের পদ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পদ পাওয়ার পর পাপিয়া যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ওই নেত্রীর মাধ্যমেই বিস্তৃত হতে থাকে তার বলয়। মদ-জুয়া নিয়ে ফূর্তিতে সারাক্ষণ মেতে থাকতে পছন্দ করতেন পাপিয়া। বাইজি সর্দারনী বেশ ধারণ করেন। তার সেই ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নারী ব্যবসার পাশাপাশি ব্ল্যাকমেইল করে পাপিয়া এবং তার স্বামী সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও ধারণ করে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তারা। দুই উপায়ে তারা শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অস্ত্র ও মাদক মজুদের পাশাপাশি কিউঅ্যান্ডসি নামে ক্যাডার বাহিনীও গঠন করেছেন।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, পুলিশের এসআই ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন পদে মানুষকে চাকরি দেয়ার কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন পাপিয়া।
জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স দেয়া, গ্যাসলাইন সংযোগের নামেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ রেখেছেন এই দম্পতি। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার কথা জানা গেছে।
র্যাবের এক কর্মকর্তা দাবি করেন, রেলওয়ে ও পুলিশে চাকরির প্রলোভনে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা নিয়েছেন। যার প্রমাণাদিসহ ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেছেন। এছাড়া নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন তারা।
পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব কর্মকর্তারা জানান, পাপিয়ার আয়ের অন্যতম উৎস নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। ঢাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে কম বয়সী মেয়েদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন তিনি। যাদের অধিকাংশকে নরসিংদী এলাকা থেকে চাকরির প্রলোভনে ঢাকায় আনা হয়েছিল।