২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কারও প্রতি রাগ নেই শুধু শাবনূরকে ভুলব না: সামিরা

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০
কারও প্রতি রাগ নেই শুধু শাবনূরকে ভুলব না: সামিরা

Sharing is caring!

মনির সরকার, বিশেষ প্রতিনিধি ::

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এসেছে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার ৫ কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ‘অতি-অন্তরঙ্গতা’। এ বিষয়ে একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। তিনি বলেছেন, ‘শাবনূরকে তার কৃতকর্মের জন্য সরি বলতে হবে। সেটা এখন হোক কিংবা পরে, এই জীবনে কিংবা শেষ বিচারের দিনে।’

 

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সালমান শাহ ও শাবনূর যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন, সে কথা সালমান নিজেই তার কাছে স্বীকার করেছিলেন। বাংলা সিনেমার হার্টথ্রব হিরো সালমান শাহর সঙ্গে সামিরা হকের বিয়ে হয় ১৯৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর।

 

প্রেমের সম্পর্কের শুরু তারও দুই বছর আগে। সামিরা বলেন, সালমান তাকে সঙ্গে নিয়েই শুটিংয়ে যেতেন। প্রায় প্রতিটি সিনেমায় সালমানের ‘ড্রেস ডিজাইনার’ ছিলেন তিনি। ’৯৬ সালে বাদল খন্দকারের একটি সিনেমার শুটিংয়ে সালমান ও শাবনূর কক্সবাজারে যান। সেখানেই সম্পর্কে জড়ান তারা। ওই বছরের আগস্টে শাবনূরকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে যান সালমান। সেখান থেকে ফিরে সালমান নিজেই সামিরাকে বলেন, তিনি একটা অন্যায় করে ফেলেছেন। শাবনূরের সঙ্গে এমন কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে তাকে ব্ল্যাকমেল করা হতে পারে। সামিরা তখনই বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন। সালমান শোনেননি। তখন কিছু পত্রপত্রিকায় সালমান শাবনূরকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন বলে খবর বেরোয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, সংবাদ সম্মেলন করে সালমানকে ঘোষণা দিতে হয় সামিরা তার স্ত্রী।

 

একপর্যায়ে সামিরা চট্টগ্রামে চলে যান। চট্টগ্রামে থেকেও তিনি খবর পাচ্ছিলেন সালমানকে অসদাচরণের জন্য প্রযোজক-পরিচালক সমিতি থেকে তিরস্কার করা হয়েছে। তিনি কাজে মন বসাতে পারছেন না। বেশ কিছু অঘটনও ঘটিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ৩ সেপ্টেম্বর সালমানের কাছে ফিরে আসেন সামিরা। এসে কী দেখলেন? এমন প্রশ্নে সামিরা বলেন, ইমন (সালমান) কতটা আবেগপ্রবণ ছিল, সেটা কেউ বুঝবে না। ভাববে সিনেমাটিক। কিন্তু আমি ফিরে দেখলাম, রাগ করে চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে যেভাবে যা রেখে গেছি, সেভাবেই আছে। ইমন মাটিতে ঘুমোচ্ছে। সঙ্গে আমার একটা টপস। সামিরা সব ভুলে নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিলেন। পরদিন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানেও দুজনে একসঙ্গে যান। ওই বছর সালমান সেরা চিত্রনায়ক ও শাবনূর সেরা নায়িকার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তবে শাবনূর ওই অনুষ্ঠানে আসেননি। এর দুদিন পর আত্মহত্যা করেন সালমান।

 

ঢাকাই সিনেমার বাঁক বদল করে দেওয়া নায়কের স্ত্রী ছিলেন সামিরা। এই নায়কের আত্মহত্যার ঘটনায় ভক্তদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছেন। নানা রকম বিরূপ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে সামিরাকে। এই জীবনটায় খাপ খাওয়ালেন কী করে? সামিরা বলেন, কারও প্রতি তার কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই। শুধু শাবনূর তার সঙ্গে যা করেছেন, সেটা তিনি ভুলতে পারেন না। একটা সময় তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি সাজগোজ করতে শিখিয়েছিলেন শাবনূরকে। তার টি-শার্ট পরে একটি ছবিতে অভিনয়ও করেছেন শাবনূর। সেই মেয়েটি কী করে সালমানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালেন, এ নিয়ে দুঃখ হয় সামিরার।

 

সালমানের মৃত্যুর পর তার দিনগুলো কীভাবে গেছে, সে খবর কেউ রাখেননি। বরাবর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর কথায় সবাই তাকে দোষী করে গেছেন। সামিরার ভাষায়, ইমন চলে যাওয়ার এক সপ্তাহ পেরোনোর আগেই আমাকে প্রতিদিন ডিবিতে হাজিরা দিতে হতো। এমনটা চলেছে প্রায় তিন মাস। আমার আব্বা উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকতেন, যেন চোখাচোখি না হয়। আর আমি পুলিশ অফিসারের হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে থাকতাম।

 

সামিরার মা চীনা বংশোদ্ভূত। তাদের বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন কলকাতায় আছেন। একটা সময় সামিরাকে তার মা কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

 

ডিবির প্রতিবেদনে নারাজি দেওয়ায় মামলা সিআইডিতে যায়। সিআইডির তদন্ত শুরু হলে তিনি কলকাতা থেকে ফিরে আসেন। আবারও বসেন পুলিশের মুখোমুখি। সিআইডি সিদ্ধান্ত দেয়, সালমান খুন হননি, আত্মহত্যা করেছেন। এরপর শুরু হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত। পিবিআই গত তিন বছরে বেশ কয়েকবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। যখনই কারও সাক্ষ্য নিয়েছে, তখনই তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। প্রতি দফায় তাকে বসতে হয়েছে কমপক্ষে পাঁচ দিন।

 

সামিরা হক এখন তিন সন্তানের মা। ৯৯ সালে দুই পরিবারের সম্মতিতে সামিরা বিয়ে করেন সালমান শাহর বন্ধু মোস্তাক ওয়ায়েজকে। সামিরা জানান, তার বিয়ে করার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। দেশের বাইরে চলে যেতে চেয়েছিলেন। ‘ও’ লেভেলের পর তার পড়ালেখা হয়নি সালমানের অনাগ্রহে। তবে এখনো বিড়ম্বনা তার পিছু ছাড়েনি। স্বামীর সঙ্গে কোথাও গেলে অনেকে ফিসফাস করেন।