অভিযোগ ডেস্ক : করোনাভাইরাস সন্দেহে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি চীন ফেরত শিক্ষার্থী তাসদীদে হোসেনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরইমধ্যেই তা ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। সাবধানতার জন্য বর্তমানে তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
তবে জ্বর হলেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত ভাবার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরন্নবী। তিনি জানান, তাজদিদ করোনায় আক্রান্ত কি না নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, তাসদীদ যেহেতু চীন থেকে এসেছেন তাই তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখেছি। মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তবে সে করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্ত কি না আমরা নিশ্চিত নই। তার রক্ত পরীক্ষা করার জন্য ঢাকায় রোগতত্ত্ব বিভাগে পাঠানো হচ্ছে। মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে অধ্যক্ষ জানান, তাসদীদের অবস্থা সংকটাপন্ন নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালের অন্যান্য রোগী, তাদের স্বজন ও সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. নুরন্নবী বলেন, কারও জ্বর হলেই তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। বর্তমান জ্বর হলো সিজন্যাল অসুখ।
এর আগে, তাজদিদ হোসেন নামের ওই শিক্ষার্থী শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাসদীদ চীনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। তিনি আড়াই বছর ধরে সেখানে পড়াশোনা করছেন। গত ২৯ জানুয়ারি তিনি চীন থেকে নেপাল হয়ে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। গ্রামের বাড়িতে আসার পর তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় তাকে গতকাল শনিবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তিনি চীন থেকে দেশে এসেছেন জানার পর তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
তাসদীদের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, চীন থেকে ফিরে আসার পর চিকিৎসকরা আমার ছেলেকে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ঘুমটা একটু বেশি হচ্ছে। ৫ দিন পর ছেলের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এ জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
এদিকে চীনসহ ২৫টির বেশি দেশ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশকে নিরাপদে রাখতে দেশটির প্রবেশ পথে সকল যাত্রী স্ক্রিনিং শুরু করা হয়েছে। বিমান বন্দর ও সীমান্ত স্থল বন্দর দিয়ে আগত সকল যাত্রীকে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বিমান বন্দরে আগত ৫৩ জনের থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থ্যাৎ গত শনিবার বিকাল থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমান বন্দর ও স্থল বন্দরে প্রায় একশত যাত্রীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা ( স্ক্রিনিং) করা হয়েছে। সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে,শতাধিক বিদেশ ফেরত যাত্রীর মধ্যে একজনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত পাওয়া যায়নি। তবে সর্তকতার জন্য সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের পৃথক ভাবে রাখা হয়েছে। তাদেরকে ১৪ দিন এ ভাবে স্বজনদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ভবাবে রাখা হবে। সাক্ষাত করতে দেয়া হবে না স্বজনদের সঙ্গে। এমনটাই বলেছেন সংশ্লিষ্ট হেলথ ইউনিটের অধ্যাপক ডা. সেলিমুজ্জামান।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীরা স্বাস্থ্য তথ্য কার্ড পূরণ শুরু করেছেন এবং তাদের বিমানবন্দর ত্যাগ করার আগে পুরোপুরি স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক দেশের লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় আমরা সব যাত্রীকে স্ক্রিনিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা জানান, গত বৃহস্পতিবার আইইডিসিআর এ বিষয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছে এবং শুক্রবার থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে আইইডিসিআর করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য ৪টি হটলাইন নম্বর চালু করেছে। এগুলো হলো, ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ এবং ০১৯২৭৭১১৭৮৫। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ চীন থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করে। বর্তমানে আরও কঠোর সর্তকতার মাঝে সকল যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৫৪৬ জনে পৌঁছানোর পাশাপাশি গতকাল শনিবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২২ জন। শনাক্ত হওয়ার পরে ভাইরাসটি ২৫টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীন সরকার গত শনিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চীনে নতুন করে আরও ৩ হাজার ৩৯৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ১৭ হাজার রোগীর একটি বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে যে, এ ভাইরাসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে শতকরা ৮২ ভাগই মাইল্ড কেস। এর বাইরে শতকরা ১৫ ভাগ সিভিয়ার কেস, যাদের রেসপিরেটরি ডিফিকাল্টি আছে। বাকি তিন ভাগ ক্রিটিক্যাল রোগী, যাদের আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) সাপোর্ট প্রয়োজন।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্লেষণ দেখেই এটা বোঝা যাচ্ছে যে, এন-করোনা ভাইরাস নিয়ে আমাদের মধ্যে যে আতঙ্ক আছে, এটা নিয়ে আসলে সে মাত্রায় আতঙ্কের কিছু নেই। বেশিরভাগ কেসগুলোই খুব সাধারণ। আমাদের যে কমন ফ্লু রয়েছে, যেমন জ্বর, কাশি, যারা এসব উপসর্গ নিয়ে ভুগছেন, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার প্রয়োজন নেই।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক -শেখ তিতুমীর আকাশ। প্রকাশ কর্তৃক : এডভানসড প্রিন্টং - ক-১৯/৬, রসুল বাগ, ঢাকা। মহাখালী ঢাকা হতে মুদ্রিত এবং ১৭৮, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা-১২১৭ হতে প্রকাশিত। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ অফিসঃ ৩৮৯ ডি আই.টি রোড (৫ম তলা) পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা ১২১৯ ,মোবাইল: - ০১৮৮৩২২২৩৩৩,০১৭১৮৬৫৫৩৯৯ ইমেইল: abhijug@gmail.com
Copyright © 2025 Weekly Abhijug. All rights reserved.