Sharing is caring!
অভিযোগ ডেস্ক ::
সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও দালালের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দালাল চক্ররা তাদের অপকর্ম প্রকাশ্যে চালিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভূমিকায়। ফলে মাস্টার রোল কর্মচারী ও দালালদের নিয়ন্ত্রনেই চলে সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম। গেল বৃহস্পতিবারে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রারী অফিসে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আর ওই ঘটনায় সাব-রেজিস্ট্রার পারভীনের অনুসারীরা দলিল লেখক সমিতির সদস্য খালেদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করায় গতকাল রবিবার দুপুরে জেলা সাব-রেজিস্ট্রারী দলিল লেখক সমিতি জরুরী বৈঠক করে।
অপরদিকে সাব-রেজিস্ট্রারের অনুসারীরা ভাড়াটে লোকদের দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে মোটরসাইকেলের মহড়া দেয়। খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে জেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে জেলা প্রধান সাব-রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার পারভীন আক্তারকে পাওয়া যায়নি। জেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মাহমুদ আহমদের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। এর আগে দলিল লেখক সমিতির সদস্য খালেদ আহমদ জানান, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না। সাব-রেজিস্ট্রার পারভীন আক্তার মাস্টার রোল কর্মচারীর দলিল সম্পাদনের টাকা উত্তোলন করেন। এ বিষয়ে সাব-রেজিষ্ট্রার পারভীন আক্তারের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে দুই দিনের ছুটিতে আছি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের (১৪ মে) খোকন আহমদ নামে এক দলিল লেখক জাল দলিল করার সময় আটক হন। পরে পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে। গেল বছরে সিলেটের সাব-রেজিস্ট্রারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও দুর্নীতি দমন আইনে মামলা হয়। জায়গার রকম পরিবর্তন করে জাল পরচা ও নামজারী তৈরি, ৬ লক্ষ টাকার সরকারী কর ফাঁকি। ৬০ হাজার টাকা ঘোষের বিনিময়ে দলিল রেজিস্ট্রিসহ নানা অভিযোগে সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করেন এক আইনজীবী। সিলেটের শাহপরাণ (রহ.) থানার মুক্তিরচর মুরাদপুর গ্রামের রবীন্দ্র চন্দ্র’র ছেলে আইনজীবী রতন মনি চন্দ্র সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে এ মামলাটি দায়ের করেন। যা স্পেশাল মামলা নং ৪৪/১৮ ইং। মামলায় বলা হয়, মামলার বাদি পেশায় একজন আইনজীবী। তাছাড়া আসামীরা একদলবদ্ধ জালিয়াত, প্রতারক ও দুর্নীতিগ্রস্থ লোক।
সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রার ২ অক্টোবর বাদীর কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। সেই চিঠিতে তিনি লেখেন, বিগত ১৩ সেপ্টেম্বর ১৮ ইং তারিখের ৭৬৪৭ নম্বর একটি দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন। যাতে ভূমির শ্রেণী, বাড়ি, বরন্ডি ও সাইলের পরিবর্তে শ্রেণী আমন লিপিবদ্ধ করা হয়। যা সরকারের ক্ষতি হয়েছে ও তা আইন পরিপন্থি। তিনি এই চিঠি পেয়ে সাব-রেজিস্ট্রার সিলেট অফিসে গিয়ে দেখন, তার দস্থখত জাল করে মোসাবিদাকারী হিসাবে তার নাম ব্যবহার করে সরকারের ৬ লক্ষ ৭ হাজার টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে একটি চক্র। তিনি বিষয়টি সাথে সাথে দলিল লেখক সমিতির নেতাদের জানান। তখন দলিল লেখক সমিতির নেতারা জানান, ঐ অফিসের ২/৩ জন ও সাব-রেজিস্ট্রার সহ পেশকার এবং কয়েকজন মিলে সবার যোগসাজসে ঘোষের বিনিময়ে আরো অনেক দলিল এভাবে হয়।
তাছাড়া তারা এ বিষয়টি সমাধান করে দিবেন। বাদী দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেন ও খবর নিয়ে জানতে পারেন, সাব-রেজিস্ট্রার ও পেশকার ৬০ হাজার টাকা দলিল লেখক সমীরণের কাছ থেকে নিয়ে কালাম ও মোমিনের সাহায্যে এ দলিল রেজিস্ট্রি করেন। পরবর্তীতে মামলার বাদি শংকর চন্দ্র নাথের সাথে যোগাযোগ করেন। সে বাদীর চেম্বারে এসে জানায়, সে দলিল করে না। তার কার্ড নেই এবং তার ভাই দলিল করেন। তাছাড়া সিলেট সাব রেজিস্ট্রার অফিসে আশিভাগ দলিলই সাব-রেজিস্ট্রার, পেশকার, অফিসের কর্মচারী মিলে ঘোষের বিনিময়ে রকম পাল্টাইয়া কোটি কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দলিল বিভিন্ন মোহরী ও দলিল লেখকগণ করে থাকেন।
এ ব্যাপারে জেলা সাব-রেজিস্ট্রার প্রধান সাব-রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ভূইয়ার সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার আমি অফিসে ছিলাম না। তবে এরকম একটি বিষয় জানতে পেরেছি। আমি বিষয়টি ডিসি মহোদয়কে অবগত করেছি। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দলিল সম্পাদনার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম কোন বিষয় আমার জানা নেই। আর্থিক লেনদেনের কারো কোন অভিযোগ থাকলে লিখিত ভাবে জানাতে পারেন। মোটরসাইকেলের মহড়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন গতকাল রবিবার সকাল থেকেই আমি একটি মিটিংয়ে ছিলাম। এ বিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নেই।