Sharing is caring!
ছবি: প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং
অভিযোগ ডেস্ক : বাংলাদেশ-ইতালির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরেকটি অধ্যায় শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কোন্তে।
বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ‘কিগি প্যালাসে’ দেশটির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কোন্তে এবং সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সেখানে দুই প্রধানমন্ত্রী এক সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজেও অংশ নেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী প্রায় ঘণ্টা ব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে খাওয়ার টেবিলেও দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। বৈঠকে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
ফলপ্রসু বৈঠক হিসেবে মন্তব্য করে ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরেকটি অধ্যায় শুরু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বাস করি আজকের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেবে।
দুই প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতা আরও বাড়ানো দরকার।ইতালির প্রধানমন্ত্রী নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি পরামর্শ দেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী এ পরামর্শগুলোকে বিশেষ গুরুত্বসহ বিবেচনা করার কথা বলেন।
২০২২ সালে বাংলাদেশ ও ইতালি কূটনৈতিক সম্পর্কের গোল্ডেন জুবলি উদযাপন করবে উল্লেখ করেন জুসেপ্পে কোন্তে।
১৯৭২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশকে ইতালির স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী ইউরোপের প্রথম দেশগুলোর মধ্যে ইতালি একটি। স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষে (১৭ মার্চ, ২০২০ – ২৬ মার্চ, ২০২১) ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা।
জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সেক্টরে আগ্রহ প্রকাশ করেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করেন জুসেপ্পে।
দুই দেশের মধ্যকার ব্যবসা ও বাণিজ্য বাড়াতে ইতালিয়ান সরকারকে ব্যবসায়িক ভিসা দেওয়ার অনুরোধ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ নীতিতে সবচেয়ে উদার। বিনিয়োগের জন্য সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আইসিজে’র দেওয়া রায় বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ইতালিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কোন্তে।
ইতালি ইউএনএইচসিআর এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য এক মিলিয়ন ইউরো আর্থিক সহযোগিতা দেবে বলে জানান জুসেপ্পে কোন্তে।
গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপ এবং এরপর থেকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সন্ত্রাসকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হলি আর্টিজানের ঘটনায় ভিকটিম পরিবারকে সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কোন্তে।
ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রশংসা করেন জুসেপ্পে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতালিয়ান প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ‘কিগি প্যালেসে’ পৌঁছালে সেখানে তাকে প্যালেস গার্ডরা গার্ড অব অনার প্রদর্শন করেন। সে সময় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালীন আবাসস্থল পার্কো দেই প্রিন্সিপি গ্র্যান্ড হোটেলে ব্যবসায়ী নেতারা সাক্ষাৎ করেন তার সঙ্গে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা) ইতালিতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীরা।