অভিযোগ ডেস্ক : মোংলা বন্দর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রকল্প শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের রুজভেল্ট জেটির বিদ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন, টাগবোট সংগ্রহ এবং মোংলা বন্দর থেকে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প পর্যন্ত পশুর চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প।
এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ২৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থে বাস্তবায়ন শেষ হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি আয়ও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৯ মে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প তিনটির স্টিয়ারিং কমিটির সভা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে এ সভার প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা প্রধান মো. জহিরুল ইসলাম রোববার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প তিনটি বন্দরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এগুলো যাতে যথাসময়ে শেষ হয় সেজন্য নিয়মিত তদারকি করা হয়েছিল। স্টিয়ারিং কমিটির সভায় সেসব বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সেখানে প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করে প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন (পিসিআর) মন্ত্রণালয়ে দ্রুত পাঠানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।
সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, ‘মোংলা বন্দরের জন্য টাগবোট সংগ্রহ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৪৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে। সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে পুশিং, পুলিং, ট্রোইং, মুরিং এবং আনমুরিং দ্রুত সময়ে করতে একটি টাগবোট সংগ্রহ করাই ছিল প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য।
এই বোটটি ১২ মার্চ মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে। এরপর ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে জাহাজ হ্যান্ডেলিং করে বছরে প্রায় ১৭ কোটি টাকার বেশি আয় করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সভায় বলা হয়, প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি (আর্থিক ও বাস্তব) নিয়মিত তদারকি করতে হবে।
এছাড়া প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার পর দ্রুত সময়ে প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন (পিসিআর) মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের রুজভেল্ট জেটির বিদ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
২০১৭ সালের জুলাই থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এটির মেয়াদ রয়েছে। রুজভেল্ট জেটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করে দক্ষতার সঙ্গে বার্জ ও কার্গো হ্যান্ডলিং করাই প্রকল্পটির প্রধান লক্ষ্য।
প্রকল্পের আওতায় রুজভেল্ট জেটির বিদ্যমান স্টেকইয়ার্ড পুনঃনির্মাণ, নতুন আরসিসি ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড নির্মাণ, আরসিসি বাইপাস রোড পুনঃনির্মাণ, আরসিসি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণ এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে বলে সভায় জানানো হয়। অপরদিকে ‘মোংলা বন্দর থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত পশুর চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ প্রকল্পটি ১৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
২০১৬ সালের জুলাই থেকে চলতি জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লাবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য মোংলা বন্দর থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত প্রয়োজনীয় নাব্যতা সৃষ্টিই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। এটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পশুর চ্যানেলের মোংলা বন্দরের ৯নং জেটি থেকে ১৩ কিলোমিটার উজান পর্যন্ত নাব্য বজায় রাখা হবে। এজন্য ৩৮ দশমিক ৮১ লাখ ঘনমিটার খনন কাজ করা হচ্ছে। সভায় জানতে চাওয়া হয়, জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে কিনা।
এর জবাবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, অনুমোদিত প্রকল্প প্রস্তাবে দুই ধরনের ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কাটার সাকশান ড্রেজার দিয়ে ২৬ দশমিক ৯৪ লাখ ঘনমিটার এবং ট্রেলিং সাকশান হুপার ড্রেজিং দিয়ে ১১ দশমিক ৮৭ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করতে হবে। মে পর্যন্ত ১৮ লাখ ঘনমিটার কাটার সাকশান ড্রেজার দিয়ে এবং ট্রেলিং সাকশান হুপার ড্রেজিং দিয়ে ৭ দশমিক ৩০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে।