অভিযোগ ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, উপাচার্যগণ হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনাদেরকে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।
আপনারা নিজেরাই যদি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন বা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী হবে, তা ভেবে দেখবেন।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের ভাষণে তিনি উপাচার্যদের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে তাদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
শিক্ষকদের সান্ধ্যকালীন কোর্স ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার সমালোচনা করে আবদুল হামিদ বলেন, এক শ্রেণির শিক্ষক রয়েছেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। অনেক সময় সান্ধ্যকালীন কোর্স ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে সপ্তাহব্যাপী অতি ব্যস্ত সময় কাটান। এ সমস্ত কাজ-কর্মে তারা খুবই আন্তরিক। যত অনীহা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারিত ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে। তবে এসব শিক্ষক মহোদয়গণ সিলেবাস শেষ করার ব্যাপারেও খুবই সিরিয়াস।
তাই তারা একসঙ্গে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা একটানা ক্লাস নেন। অনেক সময় ছুটির দিনে ছাত্র-ছাত্রীদের ডেকে একসঙ্গে কয়েক ঘণ্টা ক্লাস নেন। শিক্ষার্থীরা কতটুকু বুঝল বা কতটুকু গ্রহণ করতে পারল, সেই ব্যাপারে তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব বা মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।
উপাচার্যদের এক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, সম্মানিত উপাচার্যদেরকে এ বিষয়টি কঠোরভাবে দেখতে হবে। প্রধান নির্বাহী হিসেবে প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তাও মনিটরিং করতে হবে।
রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, মনে রাখবেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট খরচের সিংহভাগই আসে সরকারি কোষাগার থেকে, আর কোষাগারে টাকা আসে আপামর জনগণের পকেট থেকে। তাই যে যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিক্ষকতা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পেশা। আপনারা যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তারা অত্যন্ত মেধাবী ও বিশেষ গুণে গুণান্বিত ও দক্ষ। তাই কোনো ধরনের লোভ-লালসা বা অন্য কোনো মোহের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পেশার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখবেন। তাহলেই শিক্ষার্থীরা আপনাদের আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করবে।
শিক্ষার্থীদের নকলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকে নকলের বিভিন্ন কথাবার্তা শোনা যায়। আমার লজ্জা হয়, যখন শুনি শিক্ষকরা নকল সাপ্লাই করে।
অনেক জায়গায় শোনা যায় ছাত্রদের মা-বাবা পর্যন্ত নকল সাপ্লাই করে। এর চেয়ে কলঙ্কজনক, দুঃখজনক, হতাশাজনক আর কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না। আসলে তাদের কী করে শায়েস্তা করা যায়, এটা আমি ভাষায় বলতে পারছি না, কী তাদের বলবো। মনডা চায়.. আর কইলাম না, বুইঝা নিতে হবে। নকলের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ট্রাফিক আইন নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে শিক্ষার্থী, বুদ্ধিজীবীসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি বলেন, ওভারপাস আছে, সেদিক দিয়ে কেউ যায় না। নিচে দিয়ে রাস্তা পার হয়। লোহার রড বেঁকিয়ে পথ তৈরি করে যায়। ট্রাফিক রুল কেউ মানে না। ডিসিপ্লিন না মানলে জাতি সামনের দিকে এগোতে পারে না। মানুষদেরকে বোঝাও। তাদের মোটিভেট করো।
দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায় আরও বেশি সচেতন হতে হবে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হাত থেকে বাঙালি সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে আমাদের সবাইকে তৎপর ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সংস্কৃতিই আমাদেরকে খুলে দেবে চেতনার দরজা। ঐশ্বর্যমণ্ডিত করবে আমাদের ইতিহাস। তাই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে জোরালোভাবে এখনই এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর প্রথম সমাবর্তন করল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সমাবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সমাবর্তন আয়োজনে কমিটি গঠন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সমাবর্তনের জন্য ২০১৯ সালের ১ মার্চ থেকে নিবন্ধন শুরু হয়।
২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর পর প্রথম সমাবর্তন হওয়ায় এবার বিপুল সংখ্যক সাবেক শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন।
৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের ১৮ হাজার ৩১৭ জন নিবন্ধিত সাবেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ হাজার ৮৭৭ জন স্নাতক, ৪ হাজার ৮২৯ জন স্নাতকোত্তর, ১১ জন এমফিল, ৬ জন পিএইচডি এবং ১ হাজার ৫৭৪ জন সান্ধ্যকালীন কোর্সের সনদ নেবেন।
পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধুপখোলায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন এমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক। আরো বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক -শেখ তিতুমীর আকাশ। প্রকাশ কর্তৃক : এডভানসড প্রিন্টং - ক-১৯/৬, রসুল বাগ, ঢাকা। মহাখালী ঢাকা হতে মুদ্রিত এবং ১৭৮, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা-১২১৭ হতে প্রকাশিত। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ অফিসঃ ৩৮৯ ডি আই.টি রোড (৫ম তলা) পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা ১২১৯ ,মোবাইল: - ০১৮৮৩২২২৩৩৩,০১৭১৮৬৫৫৩৯৯ ইমেইল: abhijug@gmail.com
Copyright © 2025 Weekly Abhijug. All rights reserved.