২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মমতা-মোদি একান্তে কথা কলকাতায় মোদির সফরকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ

admin
প্রকাশিত জানুয়ারি ১১, ২০২০
মমতা-মোদি একান্তে কথা কলকাতায় মোদির সফরকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ

Sharing is caring!

কলকাতা প্রতিনিধি : সংবিধানকে চুলোর আগুনে পাঠিয়ে দেয়া নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে শনিবার (১১ জানুয়ারি) উত্তাল বিক্ষোভে ফেটে পড়ল কলকাতা। মোদি কলকাতায় পৌঁছন বিকেলে। কিন্তু এর আগে থেকেই শহর ফুটতে শুরু করে দেয়।

 

মোদিকে বিমানবন্দরেই কলো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হবে, শহরে ঢুকতেই দেয়া হবে না, এই হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছিল বিরোধী রাজনৈতিক শিবির, দলমত নির্বিশেষে ছাত্র ও যুব সংগঠন এবং বৃহত্তর নাগরিক সমাজ।

 

এ কারণে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক পথ উড়িয়ে নরেন্দ্র মোদি শনিবার কলকাতায় আসেন সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে।

 

অবতরণ করেন রেসকোর্সের ময়দানে। সেখানে তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা। সেখান থেকে তিনি যান রাজভবনে। রাজভবনে আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে আধ ঘণ্টা কথা হয় দুজনের মধ্যে।

 

রাজভবন থেকে বেরিয়ে মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে তিনি রাজ্যের দাবি-দাওয়ার (বুলবুল ঝড়ের ক্ষতিপূরণসহ) ব্যাপারে আবারও জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি নরেন্দ্র মোদিকে বলেছেন, রাজ্য সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং দেশজুড়ে নাগরিকপঞ্জির বিরোধী।

 

তবে বিরোধী নেতারা অবশ্য মমতার এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, সারা দেশ যখন নাগরিকত্ব ইস্যুতে জ্বলছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্থিক দাবি জানাচ্ছেন এই পুরো বিষয়টিই অবিশ্বাস্য এবং আজগুবি। উনি আসলে পুরনো সেটিং একান্তে ঝালিয়ে নিয়েছেন মাত্র।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী যান বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনে।

 

সেখানে আন্তর্জাতিক অতিথিশালায় আজকের রাত কাটিয়ে আগামীকাল তিনি ফের কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। কলকাতা থেকেই তিনি উড়ে যাবেন দিল্লিতে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে আজ (শনিবার) নজিরবিহীন বিক্ষোভ দেখেছে কলকাতা। বেলা ১২টা থেকেই বিমানবন্দরের মূল সড়ক থেকে শুরু করে ধর্মতলা, যাদবপুর, কলেজ স্ট্রিট, রাজভবনের সামনের রাস্তা- সর্বত্র নেমে পড়েছিলেন মানুষ।

 

হাতে তাদের কালো পতাকা, কালো বেলুন এবং ‘মোদি দূর হঠো’ লেখা পোস্টার। সঙ্গে চলেছে মুহূর্মুহূ স্লোগান। রাজনৈতিক দলগুলো তো ছিলই, শহরজোড়া বিক্ষোভ সমাবেশগুলোয় চেখে পড়েছে ছাত্রছাত্রী, যুব এবং সাধারণ নাগরিকদের বিশাল সংখ্যায় উপস্থিতি। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল- এই বিক্ষোভ সমাবেশগুলোয় কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের পতাকা নিয়ে আসেননি।

 

সিপিআই(এম)সহ বাম নেতাকর্মী, কংগ্রেসের নেতৃত্ব, তাদের কর্মী-সমর্থক সকলেই একসঙ্গে মোদি-বিরোধী স্লোগান উচ্চারণ করেছেন।

 

 

ছয়ের দশকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারাকে বামপন্থীরা বলেছিল, এসো না, ঢুকতে পারবে না। তুমুল আন্দোলনের চাপে সেসময় সত্যিই তিনি কলকাতায় পা রাখতে পারেননি।

 

এবারও সেই মনোবাসনা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ছাত্র ও যুবদের সমাবেশ এবং নাগরিক সমাজের একটা বড় অংশ। সড়কপথে বেলুড় যেতে পারবেন না আন্দাজ করেই এসপিজি প্রধানমন্ত্রীর বেলুড় যাত্রার রুট বদলে গঙ্গাবক্ষে করেছিল।

শনিবার বেলা গড়াতেই ধর্মতলা চত্বরে জমাতে শুরু করে সিপিআই(এম)সহ বাম দলগুলো, কংগ্রেস। এমনকী আলাদাভাবে সেই ধর্মতলাতেই জমায়েতের ডাক দেয় জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ। প্রদেশ কংগ্রেস এবং তাদের ছাত্র সংগঠনও শনিবার কলকাতাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভের কর্মসূচি পালন করেছে।

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, সোনিয়া গান্ধি এবং নরেন্দ্র মোদি, দুদিক নিয়েই চলতে চাইছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

 

কিন্তু এখন মানুষ তার জারিজুরি ধরে ফেলেছেন। দিল্লিতে বিরোধীদের ডাকা এনআরসি-বিরোধী বৈঠক বাতিল করে তিনি কলকাতায় নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্তে বৈঠক করছেন। এর পরেও বিশ্বাস করতে হবে, তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন?

 

কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেছেন, একগুচ্ছ চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি মামলায় সিবিআই ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীকে ম্যানেজ করতে গিয়েছিলেন তিনি।

 

মোদির কলকাতা সফরের বিরোধিতায় শনিবার পশ্চিমবঙ্গের ৫০০ জায়গায় পোড়ানো হয়েছে মোদির কুশপুতুল। ধর্মতলা, এইটবি বাসস্ট্যান্ড, হাতিবাগান, কলেজ স্ট্রিটে বেলা ১২টা থেকে বিক্ষোভ চলছে। বেলা ৩টায় ধর্মতলার লেনিন মূর্তির পাদদেশে অবস্থানে বসেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা।